মোহনবাগান-০
সাই-০
প্রবল বৃষ্টি হোক কিংবা চড়া রোদ্দুর, মাসখানেক আগে ময়দানের দু’টো ঘেরা মাঠের গ্যালারিতে বসে থাকতে দেখা যেত এক নাইজিরিয়ানকে। যারই প্র্যাকটিস হোক, গ্যালারিতে ঠায় বসে থাকতেন তিনি। মোহনবাগান। মহমেডান।
আজ আসছেন ডুডু
প্রবল বৃষ্টি হোক কিংবা চড়া রোদ্দুর, মাসখানেক আগে ময়দানের দু’টো ঘেরা মাঠের গ্যালারিতে বসে থাকতে দেখা যেত এক নাইজিরিয়ানকে। যারই প্র্যাকটিস হো
বৃহস্পতিবারের স়ঞ্জয় সেন। বারাসত স্টেডিয়ামে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মোহনবাগান-০
সাই-০
প্রবল বৃষ্টি হোক কিংবা চড়া রোদ্দুর, মাসখানেক আগে ময়দানের দু’টো ঘেরা মাঠের গ্যালারিতে বসে থাকতে দেখা যেত এক নাইজিরিয়ানকে। যারই প্র্যাকটিস হোক, গ্যালারিতে ঠায় বসে থাকতেন তিনি। মোহনবাগান। মহমেডান।
যদি কোনও ভাবে ওই দুই বড় দলের কারও কোচকে পাওয়া যায়। দেখা করা যায় কিছুক্ষণের জন্য।
ফোনের পর ফোন করতেন দু’টো ক্লাবের কর্তাদের। তাঁদের বাড়ি চলে যেতেন সময়-অসময়ে। আগুপিছু না ভেবেই। মোহনবাগান। মহমেডান।
যদি কোনও ভাবে নিজের ‘ক্লায়েন্ট’কে দু’টো ক্লাবের কোনও একটায় সুযোগ করে দেওয়া যায়।
ডুডু ওমাগবেমির জন্য এ দরজা-ও দরজা ঘুরেঘুরে একটা সময় নিজের জুতোর সোল প্রায় খুলে ফেলেছিলেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের ময়দানি এজেন্ট মুসা। মাসখানেক আগে মোহনবাগানে ডুডু-এজেন্টের (বকলমে ডুডুরই) ঢোকা বহু সাধ্যসাধনা, নানা জায়গায় প্রায় হাতে-পায়ে ধরে।
সময় যেমন নিষ্ঠুর হয়ে উঠে সম্মান কেড়ে নেয়, তেমনই অযাচিত ভাবে ফিরিয়েও দেয়। নইলে কেন এক ইস্টবেঙ্গল ‘বাতিল’ স্ট্রাইকারের জন্য এই মুহূর্তে এত আকুতি মোহনবাগানে? কেন ডুডু-প্রার্থনায় গোটা বাগানের বসে পড়া?
বাগানে এখনও ডুডু নেই। গোলও নেই।
সবুজ-মেরুনের কাউকে কাউকে বৃহস্পতিবারের বারাসতে দেখা গেল, হেলসিঙ্কি-দমদম বিমানবন্দরের ফ্লাইট শিডিউলের কাউন্টডাউনে বসে পড়েছেন। কাউকে কাউকের মধ্যে পড়ছেন বাগান কোচ সঞ্জয় সেনও। ডুডুর মাত্র দশ ঘণ্টা পঁচিশ মিনিটের ফ্লাইট-দূরত্বও এই মুহূর্তে রীতিমতো অসহ্য লাগছে সঞ্জয়ের। অবাক পরিবর্তন বটে! মোহনবাগান একটা সময় ডুডুকে নিতেই চায়নি। আজ, শুক্রবার সেই ডুডুরই শহরে আগমন নিয়ে তাদের যেন ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে।
সঞ্জয়ের মানসিক অবস্থা সহজবোধ্য। প্রথম ম্যাচে মহমেডানের সঙ্গে ড্র, সেটা না হয় তবু হজমযোগ্য। কিন্তু পরের ম্যাচে সাই-ও? পরপর দু’টো ম্যাচে কোনও গোল নেই বাগানের! সাই দলে কোনও বিদেশি নেই। প্রথম এগারোর দশজনই অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার। প্রথম আধঘণ্টার মধ্যেই টিমের প্রথম গোলকিপার শান্তনু ঘোষাল চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। পরিবর্ত কিপার অনূর্ধ্ব-২৩ রঞ্জিত নেমে এগারোয় এগারো করলেন। এহেন অনূর্ধ্ব-২৩ ব্রিগেডও টপকাতে পারল না এগারো কোটির বাগান। সেই অসহ্য ফুটবল আর অসহায় ড্র।
‘মিনি ডার্বি’তে একগাদা গোলের সুযোগ নষ্ট হয়েছিল। এ দিন তিনটে গোল হল বটে, কিন্তু তিনটেই অফসাইড। কাতসুমির ‘গোল’ বাতিল অবশ্য রেফারির ভুলে। যেটা নিয়ে শেষের দিকে প্রবল উত্তাল হয়ে ওঠে গ্যালারি। মাঠে বোতল পড়া, সমর্থকদের গালাগালি, পুলিশ প্রহরায় রেফারির মাঠ ছাড়া— কিছুই বাদ যায়নি। তবে বাগান যে এ দিন পেনাল্টিও নষ্ট করল! তাও যদি আবার প্রথম ম্যাচের নায়ক লালকমল ভৌমিকই সেই খলনায়ক হন, তা হলে কোচের আর কী-ই বা করার থাকে?
তবে বাগান আটকে গেল গোল বাতিল আর পেনাল্টি নষ্টের জন্য, সেটা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। ভারতসেরা দলকে থামাল এক ঝাঁক অনামী ফুটবলারের গতি, একাগ্রতা নাছোড় মনোভাব। যেমন ম্যাচের সেরা চুঁচুড়ার কৌশিক সরকার। চারুচন্দ্র কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তুকতাকে বিশ্বাসী। ম্যাচের আগের দিন রাতে ডান দিক ফিরে ঘুমোন। খেলার দিন বেলঘরিয়ার সেই এক হোটেলে একই লাঞ্চ। খিদে থাকলেও কিছুতেই দু’বার ভাত নেবেন না। কোচ অন্য জায়গায় দাঁড়াতে বললেও হোটেলের সামনে থেকেই টিমের সঙ্গে যোগ দেবেন। সেই একই ড্রেস।
এতগুলোর মধ্যে কোনটা করে এ দিন মাঠে নেমেছিলেন কে জানে! তবে সাই ডিফেন্সে তাঁকে টপকাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে দেখা গেল কাতসুমিদের। সাই কোচ সঞ্জীব পাল বলছিলেন, ‘‘বল থেকে এক পলকের জন্যও চোখ সরে না কৌশিকের। অসম্ভব সাহসী। সামনে যত বড় নাম-ই হোক না কেন, ভয় পায় না।’’ শুভঙ্কর, দেবজ্যোতি, সাগর, আসিউদ্দিন— সাইয়ের এই তরুণদের মধ্যে বড় দলে খেলার যে সব মশলাই আছে, সেটা এ দিন বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা।
বাগানও একটা সারসত্য বুঝল। ডুডু ক্লিক করে গেলে ভাল, নইলে যে ফুটবল সমর্থককের ‘উপহার’ দিচ্ছেন আই লিগ চ্যাম্পিয়ন, তাতে কলকাতা লিগে পালতোলা নৌকোর তরতরিয়ে এগোনো নয়, উল্টো সম্ভাবনাটাই বরং বেশি। প্রথম দু’ম্যাচে চার পয়েন্ট নষ্ট।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর এক ‘বাতিল’ স্ট্রাইকারই এখন হয়তো বাঁচাতে পারেন নৌকাডুবি!