Advertisement
E-Paper

কা-ক্রো জুটি এখনও কিন্তু ঝকঝকে নয়

টিমের খেলা দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত নন। আবার কড়া সমালোচনাতেও তীব্র অনীহা। পালতোলা নৌকার শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার এক সময়ের সঙ্গী ব্যারেটোর মনোভাব সঞ্চারিত যেন মাঠ ভর্তি সমর্থকদের মধ্যেও।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৫:২৪
লড়াই: সাদার্নের বিরুদ্ধে বল দখলের যুদ্ধে মোহনবাগানের ক্রোমা। প্রথম ম্যাচেই লাইবেরিয়ার এই স্ট্রাইকার গোল করলেন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

লড়াই: সাদার্নের বিরুদ্ধে বল দখলের যুদ্ধে মোহনবাগানের ক্রোমা। প্রথম ম্যাচেই লাইবেরিয়ার এই স্ট্রাইকার গোল করলেন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বিরতি পর্যন্ত ম্যাচ গোলশূন্য, টেনশন হচ্ছিল? হোসে ব্যারেটো হেসে ফেললেন। ‘‘টেনশন তো হবেই। প্রথম ম্যাচ। গোল হচ্ছে না দেখে মনে হচ্ছিল মাঠে নেমে পড়ি। এই মাঠে তো ফ্লাডলাইটে কখনও খেলেনি।’’

পাঁচ বছর হয়ে গেল সবুজ-মেরুন জার্সি ছেড়েছেন সবুজ তোতা। কিন্তু এখনও কী আকুতি ব্যারোটের জন্য! আছড়ে পড়ছে জনতা, তাঁকে একবার ছোঁয়ার জন্য। বিরতিতে এবং খেলার শেষে তাঁকে রীতিমতো ধস্তাধস্তি করে তাঁবুতে ঢোকাতে হল কর্তাদের।

তীব্র চাপ থেকে বেরিয়ে এসে মোহনবাগান জিতল বটে, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে? বাগানকে জোড়া আই লিগ-সহ অসংখ্য ট্রফি জেতানো প্রাক্তন তারকার জবাব, ‘‘কলকাতা লিগে ডার্বিটাই আসল। ওটা জিতলেই চ্যাম্পিয়ন।’’ কেমন দেখলেন টিমটা? বিশেষ করে বিদেশিদের? ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে পেপ টক দেওয়া ক্লাবের সর্বকালের সেরা ধারাবাহিক বিদেশির মন্তব্য, ‘‘নম্বর ফাইভ (ক্রোমা) ভেরি গুড। টিমটার পিভট। জুনিয়র ছেলেদের মধ্যে কয়েকজনকে ভাল লাগল।’’ আর কামো স্টিফেন বাই-ই? ‘‘সো, সো। চলে যাবে।’’

টিমের খেলা দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত নন। আবার কড়া সমালোচনাতেও তীব্র অনীহা। পালতোলা নৌকার শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার এক সময়ের সঙ্গী ব্যারেটোর মনোভাব সঞ্চারিত যেন মাঠ ভর্তি সমর্থকদের মধ্যেও।

দূরে শহরের সবথেকে উঁচু আট্টালিকার তিনটি তলায় তেরঙ্গা রং-এর আলো জ্বলছিল। নিকষ অন্ধকারের মধ্যে ময়দান থেকে বহু দূরে মোহময় লাগছিল সেই দৃশ্য। একদিন পরেই স্বাধীনতা দিবস। নানা ট্যাবলো তৈরি চলছে গোষ্ঠ পাল মূর্তির পাশের রাস্তায়। সোমবার রাতে বাগানের গ্যালারিতেও তাঁর ছোঁয়া। ক্লাবের পতাকার পাশে দেশের পতাকা উড়ছিল সমানভাবে। স্বাধীনতা আন্দোলনে মোহনবাগানের অবদানের কথা মাথায় রেখে একটি ফ্যানস ক্লাবের সদস্যরা এক যোগে সেগুলো ওড়াচ্ছিলেন। গ্যালারিতে অসংখ্য ফ্যানস ক্লাবের উপস্থিতি। উচ্ছ্বাসের নানা উপকরণ সঙ্গে এনেছেন তাঁরা। কারও হাতে তুবড়ি, কারও বেলুন, কারও মুঠোয় আবার সবুজ আবির। সেই দলে হাজির প্রচুর মেয়ে সমর্থক। জার্সি গায়ে, মুখে রং মেখে।

উৎসবের সব রসদ মজুত। কিন্তু সেটা যে শুরুই করা যাচ্ছে না। বিরতি পর্যন্ত গ্যালারির হাজার বাইশ হাজার দর্শকের হৃদপিন্ডে তো অস্থির! প্রিয় দলের প্রত্যাশিত গোলই নেই যে।

প্রতিপক্ষ সাদার্ন সমিতি। দশ দিন আগেও যাঁরা টিম নামাবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তিন দিন অনুশীলন করে মাঠে নেমেছিল রবীন্দ্র সরোবরের ক্লাবটি। কারা খেললেন এ দিনের সাদার্নে? তিন-চার বছর যিনি মাঠে নামেননি সেই দীপঙ্কর রায় অধিনায়ক! তিনি পেনাল্টি তো মিস করলেনই। এক সময়ের দাপুটে মিডিওকে দেখা গেল বিরতির পরই কোমরে হাত। রাকেশ মাসি, মণীশ মৈথানিরাও তো সেরা সময় পেলে এসেছেন বহু দিন। তাদের সঙ্গে একজন নিম্নমানের বিদেশি। সেই টিমটাই মাঝমাঠে পায়ের জঙ্গল তৈরি করে আটকে রাখলেন কা-ক্রো জুটিকে। ওই সময় উঁচুতে বল তুলে-তুলে খেলে আরও ‘পরাধীন’ হয়ে পড়ল শঙ্করলাল চক্রবর্তীর টিম।

বাগান প্রথম ‘স্বাধীন’ হল উইং সচল হতেই। মাটিতে বল রেখে পাস-পাস-পাস শুরু করতেই ভেঙে পড়ল সাদার্নের ‘লৌহ কপাট’। আনসুমানা ক্রোমা গোলটা পেয়ে কামোর সামনে এসে দু’হাত তুলে কোমর দুলিয়ে নতুন এক সেলিব্রেশন স্টাইলের জন্ম দিলেন ময়দানে। তারপর আরও দুটি গোল এল। আজহারউদ্দিন এবং শিল্টন ডি সিলভার পা থেকে। তাতেও কিন্তু মন ভরল না।

খামতিটা ঠিক কোথায়? এক) মাঝমাঠে পাসারের অভাব। দুই) দুই সাইড ব্যাক ওভারল্যাপে গেলে নামতে পারছেন না। তিন) রক্ষণ আঁটোসাঁটো নয় এখনও। চার) টিমটার মধ্যে বাঁধুনিটা এখনও তৈরি হয়নি। কোচ শঙ্করলাল বলছিলেন, ‘‘টিমের নয় জন জীবনে প্রথমবার মোহনবাগান জার্সি পরে এত দর্শকের সামনে নামল। একটু সময় তো লাগবে।’’ নতুনের আবাহনে চোখে পড়ল শুধু ক্রিস্টোফার লিংডোকে। অফুরন্ত প্রাণশক্তি। পাহাড়ি দৌড়টা সমতলেও অটুট। ছন্দম সুরচন্দ্র, রেইনাররা যেটা পারছেন না। ওঁরাও যত তাড়াতাড়ি টিমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন ততই বাগানের মঙ্গল।

সাত বছর কলকাতা লিগ আসেনি একশো আঠাশ বছরের ক্লাবে। এ বার কর্তারা তাই কোমর বেঁধে নেমেছেন পড়শি ক্লাবের বিজয় রথ থামাতে। সেটা করতে হলে কা-ক্রো জুটিকে কিন্তু আরও ঝকঝকে হতে হবে।

মোহনবাগান: শিল্টন, অরিজিৎ বাগুই, কিংশুক দেবনাথ, ইজে কিংসলে, রিকি লালমাওয়ামা, চেষ্টারপল লিংডো, রেইনার ফার্নান্ডেজ (শিল্টন ডি সিলভা), ছন্দম সিংহ, আজহারউদ্দিন (নিখিল কদম্ব), কামো স্টিফেন বাই (নরহরি মাহাতো), আনসুমনা ক্রোমা।

Calcutta Football League Southern Samity Mohun Bagan Football CFL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy