হতাশা। শেষ ম্যাচে মাথা হেঁট বিদেমিদের। ছবি: রণিত হালদার
দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি গোল করেই ছুটলেন নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে। মহমেডানের দশ নম্বর তার পর হাঁটু গেড়ে মোহনবাগানের দিকে গুলি চালানোর ভঙ্গীতে দিলেন পোজ।
কল্যাণী ছাড়ার পথে মহমেডানের সেই আইভরিয়ান ফুটবলার জিকাহি ডোডোজ হাইভোল্টেজ হাসি মুখে বলে গেলেন, ‘‘মাঠে ওদের শুট করে দিয়েছি। তাই ও রকম পোজ। এ বার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে গিয়ে মাংস-ভাত রেঁধে ভাই আর বন্ধুদের সঙ্গে সেলিব্রেট করব।’’
উল্টোদিকের মোহনবাগান শিবিরে তখন হতাশা। টিম ম্যানেজার শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় আফশোস, ‘‘কী দারুণ শুরু করেছিলাম! কী যে হয়ে গেল!’’
এই মরসুমে সবুজ-মেরুন শিবির যাদের কাছে ধাক্কা খেয়ে লিগটা হাত থেকে ফেলে দিয়েছে সেই টালিগঞ্জ কোচ রঞ্জন চৌধুরী আবার বাড়ি থেকে ম্যাচের ফল শুনে অবাক! ‘‘মোহনবাগান কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল। ওদের বিদেশিগুলো ভালই ছিল।’’
কল্যাণীতে প্র্যাকটিস হবে না বলে কলকাতা লিগের মহা ডার্বি খেলেনি মোহনবাগান। কিন্তু মিনি ডার্বির আগে কল্যাণীতে গিয়ে প্রয়োজনীয় প্র্যাকটিস সেরে রেখেছিল শঙ্করলালের দল। কিন্তু মাঠে নেমে যে ছন্নছাড়া ফুটবল এ দিন খেললেন আজহার-ডাফিরা, তাতে লিগ রানার্স হওয়ার সম্ভাবনা তো শেষ করেই দিলেন। উল্টে আট বছর পর কলকাতা লিগে রানার্সের দরজা খুলে গেল মহমেডানের সামনে। এ দিন জিতে মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল শেষ লিগ শেষ করল ২০ পয়েন্ট নিয়ে। মোহনবাগান তার এক পয়েন্ট পিছনে থেকে ১৯। অঙ্কের বিচারে রানার্স হওয়ার লড়াইতে রয়েছে যদিও টালিগঞ্জ। সাত ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১১। বাকি তিন ম্যাচেই জিতলে এবং গোলপার্থক্য ৬ রাখতে পারলে এ রানার্স হতে পারে ম্যুর অ্যাভেনিউয়ের ক্লাবটিও। যদিও মহমেডান কর্তারা সে সম্ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়েই সোমবার সকালেই ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন কল্যাণীতেই।
ম্যাচ শেষে বাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘আইএসএলের ফুটবলাররা চলে গিয়েছে। তার উপর ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ায় আর মোটিভেশন নেই ছেলেদের।’’ কিন্তু তাই বলে রক্ষণে এত ফাঁকফোঁকর! মাঝমাঠে কোনও স্ন্যাচিং বা ট্যাকলিং নেই! আজহার পা থেকে বল বেরিয়ে গেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন!
কর্তাদের সৌজন্যে ডার্বি-ডামাডোলে আগেই লিগের ফোকাস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বাগানে। তার উপর শঙ্করলাল এ বারই প্রথম কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে কোনও দলের কোচিংয়ের দায়িত্বে। মৃদুলের কাছে তিনি হেরে গেলেন অভিজ্ঞতাতে। গত ম্যাচে দুই নতুন স্টপারকে নামিয়ে হারার পর কনফিডেন্স জোগাতে এ দিন কেন তিনি ব্যাক ফোরের আগে এক জন ডিফেন্সিভ ব্লকার রাখলেন না বা অ্যাটাকিং মিডিও আমনদীপকে তুলে রক্ষণাত্মক তপনকে নামালেন তা বোঝা গেল না। শেষ দিকে ডাফিকে না তুলে আজহারের জায়গায় অজয়কে নামিয়ে ৪-৩-৩ গিয়ে মহমেডান রক্ষণে চাপ বাড়াতে পারতেন।
ময়দানে পোড় খাওয়া মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় এর সুবিধা নিলেন পুরোদমে। বাঁ পায়ের ডোডোজকে ডান দিক থেকে অপারেট করিয়ে বাগানকে চেপে ধরেছিলেন। আর সেখান থেকেই গোল। গত বারের মতো এ বারও মোহনবাগানের রানার্স হওয়ার সম্ভাবনা চুরমার। শঙ্করলাল যদিও বাড়ি যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘‘চেষ্টায় ত্রুটি রাখিনি কী আর করা যাবে।’’
মহমেডান কোচ তখন বাগান সমর্থকদের শুভেচ্ছা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন। মরসুমের শুরুতে মহমেডান সমর্থকরা অবনমন নিয়ে কটূক্তি করতেন তাঁকে। সেই মৃদুল লিগটা শেষ করলেন সম্মানের সঙ্গে। পারফরম্যান্স দেখিয়ে। কলকাতা লিগে সেরা কোচের জন্য অমল দত্ত ট্রফিটার অন্যতম দাবীদারও তিনি। যদিও সেখানেও তাঁকে তাড়া করছেন টালিগঞ্জ কোচ।
কে বলে বিদেশিদের দাপটে বাঙালি কোচ ডোডো পাখি হয়ে গিয়েছে!
মোহনবাগান: অর্ণব, তন্ময়, বিক্রমজিৎ, অসীম, চিন্তাচন্দ্রশেখর, আমনদীপ (তপন), পঙ্কজ (রবিনসন), শরণ, আজহার, ডাফি (অজয়), বিদেমি।
মহমেডান: জেমস, নীতেশ, ত্যুরে, সৌরভ, প্রণীত, পারমিন্দর, শওকত (মুমতাজ), দীপঙ্কর, দীপেন্দু, মনবীর, আলেকজান্দ্রে (ডোডোজ)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy