Advertisement
২১ মে ২০২৪

প্রবীরের যন্ত্রণাই বাগানের হাসনুহানা

ময়দানে কি দ্বিতীয় মানস ভট্টাচার্য এল? যে নিজে যেমন প্রচুর গোল করত, তেমনই ভুরিভুরি গোল করাত। প্রশ্ন শুনেই মোহনবাগানের প্রাক্তন রাইট উইঙ্গার বলে উঠলেন, ‘‘প্রবীর দাসের কথা বলছেন তো? আমার জায়গাতেই তো ও খেলে।

বাগানের গোলের উচ্ছ্বাস। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বাগানের গোলের উচ্ছ্বাস। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

তানিয়া রায়
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৪৪
Share: Save:

মোহনবাগান-৪ : জর্জ টেলিগ্রাফ-০
(প্রবীর-২, ডাফি, শরণ)

ময়দানে কি দ্বিতীয় মানস ভট্টাচার্য এল? যে নিজে যেমন প্রচুর গোল করত, তেমনই ভুরিভুরি গোল করাত।

প্রশ্ন শুনেই মোহনবাগানের প্রাক্তন রাইট উইঙ্গার বলে উঠলেন, ‘‘প্রবীর দাসের কথা বলছেন তো? আমার জায়গাতেই তো ও খেলে। লিগে পরপর দু’টো ম্যাচে ওকে দেখলাম। সত্যিই দারুণ খেলছে। বহু দিন বাদে বড় দলে একজন পজিটিভ উইঙ্গারের খেলা দেখছি।’’

আগের ম্যাচে স্কটিশ স্ট্রাইকার ড্যারেল ডাফির হ্যাটট্রিক সোদপুরের বছর বাইশের বাঙালি ফুটবলারের সৌজন্যে। আর বুধবার জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে প্রবীরের দাপটেই কলকাতা লিগে সবুজ-মেরুনের বড় ব্যবধানে জয়ের ধারা অব্যাহত। নিজে জোড়া গোল করলেন, শরণের গোলটা করালেনও। এমনকী নিজের হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দলের স্বার্থে নিজে পেনাল্টি না মেরে, মারতে দিলেন ডাফিকে। তবু উইঙ্গার প্রবীরের দু’ম্যাচে তিন গোল। মাঠের গনগনে মেজাজটা ম্যাচ শেষে কিন্তু অভিমান হয়ে ঝরে পড়ল তাঁর কথাতে। ‘‘আইএসএলে গোয়া বা দিল্লি আমাকে সই করিয়েও খেলার সুযোগ দেয়নি। প্রায় দেড় বছর কোনও ম্যাচ খেলিনি। খুব কষ্ট হত।’’ সেই যন্ত্রণাই এখন বাগানে হাসনুহানা হয়ে ফুটছে।

পৈলান, ডেম্পো হয়ে গত বছর মোহনবাগানে সই করেছিলেন প্রবীর। এই মরসুমের গোড়াতেই সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চেনাতে ভুল করছেন না। এ দিন তো আবার কাদা মাঠে জর্জের একে প্রবীরে রক্ষে নেই, সঙ্গে দোসর তপন! দুই উইঙ্গার প্রবীর দাস-তপন মাইতির যুগলবন্দিতে প্রথমার্ধেই দু’গোলে এগিয়ে যায় বাগান। হাফটাইমের পর যেন বৃষ্টির দাপটের সঙ্গে তাল রেখেই ডাফিদের আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ছিল। পিছল মাঠে যেখানে বল স্কিড করছে, শরীরের ভারসাম্য রাখা কঠিন, সেখানেও বাগান ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল দেখার মতো। প্রথম দু’ম্যাচে ন’গোল করে ফেলল বাগান। এক বিদেশি আর কিছু তরুণ দেশি ফুটবলার নিয়ে। বাগানে প্রথম মরসুম হলেও ডাফি-ই অভিজ্ঞতার বিচারে সিনিয়র। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সিনিয়র বলতে রাজু গায়কোয়াড়। সবুজ-মেরুন জার্সিতে এ দিন যাঁরা খেললেন, তাঁদের ভেতর ডাফি এবং তপন ছাড়া কেউ এখনও পঁচিশ পেরোননি। এই তারুণ্যই বোধহয় কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। বাগানের কলকাতা লিগ কোচ উচ্ছ্বসিত ভাবে বললেন, ‘‘লিগের শুরুতেই ওরা দু’ম্যাচে ন’গোল করে ফেলবে আমি নিজেও ভাবিনি!’’ রাতের দিকে ফোনে মানসের গলাতেও উচ্ছ্বাস, ‘‘প্রবীর যদি আরও একটু বেশি দু’পায়েই গোলে শট নেয়, ড্রিবলে দু’পা-ই ব্যবহার করে তা হলে দেশের সেরা উইঙ্গার হয়ে উঠবে।

গোটা ম্যাচে এক বারই বাগানে তাল কেটেছিল। যখন দ্বিতীয়ার্ধে জর্জের বক্সে গুরপ্রীতের হ্যান্ডবলের পর পেনাল্টিটা মারতে গেলেন ডাফি। এবং গোলকিপার আটকানোর পরে রিবাউন্ডে গোল করলেন। কারণ, সেই সময় জোড়া গোল করে হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রবীর। গ্যালারিতে ফিসফাস উঠল, ডাফি কি তা হলে স্বার্থপর ফুটবলার? এ তো টিমের উঠতি সতীর্থের প্রতি অবিচার! কিন্তু ম্যাচের পর সবার ভুল ভেঙে দিলেন প্রবীর-ই। ‘‘আমি নিজেই পেনাল্টি মারতে চাইনি। আসলে ওই সময় আমাদের দলের আরও একটা গোল খুব দরকার ছিল। আমি যদি পেনাল্টি মিস করতাম, তা হলে টিমের উপরই চাপ বাড়ত।’’

আমি-র আগে আমাদের। দলের প্রতি ফুটবলারের আনুগত্য। টিমের একতা। খুব পুরনো কিন্তু অপরিহার্য তিনটে জিনিস বাগানের সাফল্যের চাবিকাঠি! কে বলল, প্রবীরের ‘হ্যাটট্রিক’ হয়নি!

মোহনবাগান: অর্ণব, সার্থক, সঞ্জয়, রাজু, তন্ময়, তপন, পঙ্কজ (শরণ), রেনার (বিক্রমজিৎ), প্রবীর, আজহারউদ্দিন, ডাফি (অজয়)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mohunbagan CFL16
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE