Advertisement
E-Paper

গোষ্ঠ পালের প্রয়াণ দিবসে তাঁর মরণোত্তর মোহনবাগান রত্ন ফিরিয়ে দিল বিরক্ত পরিবার

নিজস্ব সংবাদাদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:২৭
কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে পরিবার ফিরিয়ে দিল মোহনবাগান রত্ন। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে পরিবার ফিরিয়ে দিল মোহনবাগান রত্ন। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

বাবার প্রয়াণ দিবসে মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কের শেষ সুতোটাও কি ছিঁড়ে ফেললেন অভিমানী ছেলে? আজ ৮ এপ্রিল। কিংবদন্তি ফুটবলার গোষ্ঠ পালের প্রয়াণ দিবস।

প্রতি বারের মতো এ দিনও সকাল সকাল ময়দানের গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন পুত্র নীরাংশু পাল। সেখান থেকেই হাঁটা লাগান মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে। ক্লাবের মূল ফটক দ্রুত পায়ে পেরিয়ে তাঁবুতে ঢুকতেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁদের সঙ্গে দেখা হতেই বিরক্ত নীরাংশুবাবু বলেন, “ক্লাব থেকে বাবাকে মোহনবাগান রত্ন দেওয়া হয়েছিল। সেটা ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম।” কিংবদন্তি ফুটবলারের পুত্রের আবেগের এমন বিস্ফোরণে হতভম্ব হয়ে যান দুই মোহন কর্তা। কী করবেন, কী বলবেন বুঝে উঠতে পারেননি তাঁরা। প্রথমটায় ইতস্তত করছিলেন দুই কর্তা। নীরাংশুবাবু তাঁদের সটান বলে দেন, ‘‘বাবার পাওয়া পদ্মশ্রী পুরস্কারেরই কোনও সম্মান নেই ক্লাবের কাছে। ক্লাবের দেওয়া মোহনবাগান রত্নেরও সম্মান নেই আমাদের কাছে। আপনারা নিলে নিন। না হলে ক্লাবের মূল ফটকে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যাব।”

ঘটনাক্রমে আজ, সোমবার গোষ্ঠ পালের ৪৪তম প্রয়াণ দিবস। সে দিনই এমন চরমপন্থা অবলম্বন করলেন কেন? কম্পিত গলায় গোষ্ঠ পাল পুত্র বলেন, ‘‘ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই। মোহনবাগান ক্লাবকে বাবা ভালবাসতেন। আমাদেরও প্রাণের থেকে প্রিয় এই ক্লাব। ক্লাবের উপরে আমাদের কোনও রাগ নেই। ক্লাব যাঁরা চালাচ্ছেন, যাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁদের পরিচালন পদ্ধতি আমায় যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি বড্ড মনোকষ্টে ভুগছি।’’

এই সেই মোহনবাগান রত্ন।

২৭ বছর আগে গোষ্ঠ পালের পাওয়া পদ্মশ্রী-সহ সমস্ত পদক, দুষ্প্রাপ্য সব ছবি, দুর্মূল্য ব্যাজ মোহনবাগানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন নীরাংশুবাবু। কিন্তু, সেই সব ট্রফির কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছিল না। গত মাসের গোড়ার দিকে সেই সব ট্রফি, ব্যাজ, মেডেলের ধ্বংসাবশেষ তুলে দেওয়া হয় গোষ্ঠ পালের পুত্রের হাতে। ক্লাবের তরফ থেকে সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, পদ্মশ্রী মেডেল খুঁজে পেলে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর পরে গঙ্গা দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে অনেক জল। পদ্মশ্রী মেডেল ফেরত পায়নি গোষ্ঠ পালের পরিবার।

আরও পড়ুন: মোহনবাগান তাঁবুতে অবহেলায় ধ্বংস গোষ্ঠ পালের ট্রফি-মেডেল, কাঁদতে কাঁদতে থানায় গেলেন ছেলে

রাগে, দুঃখে, অভিমানে নীরাংশুবাবু ক্লাবতাঁবুতে গিয়ে দিয়ে আসেন ‘মোহনবাগান রত্ন’। প্রাক্তন ক্লাবের থেকে পাওয়া সম্মান এ ভাবে কেউ কি ফিরিয়ে দিয়ে এসেছেন? স্মরণকালের মধ্যে এমন উদাহরণ খুব একটা নেই। বাগানের ফুটবল সচিব সকালের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে দুপুরে বললেন, ‘‘গোষ্ঠ পালের পুরস্কার, পদ্মশ্রী মেডেল ১৯৯২ সালে ক্লাবকে দেওয়া হয়েছিল। তখন তো আমি ছিলাম না। তাই বলতে পারব না। তবে ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, গোষ্ঠ পালের মতো কিংবদন্তিকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া উচিত। ওঁর পাওয়া পুরস্কারগুলো ফেরত দিয়ে দেওয়া উচিত।’’ পয়লা বৈশাখ ময়দানে বারপুজো। গোষ্ঠ পালের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাগানে। সে দিন কি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে হারিয়ে যাওয়া পদ্মশ্রী-সহ অন্যান্য পুরস্কারগুলো? কেউ জানেন না।

ইতিহাসের এক শিহরণ গোষ্ঠ পাল। তাঁকে নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে কত কিংবদন্তি, তার ইয়ত্তা নেই। বিভিন্ন সময়ে গোষ্ঠ পালের পাওয়া পুরস্কার নিয়ে ক্লাবের নিষ্পৃহতা মনে ঝড় তুলেছে নীরাংশুবাবুর। সেই চাপা বেদনার ভাষা খুব সহজেই পড়তে পারছেন ১৯১১ সালের শিল্ড জয়ের অন্যতম নায়ক শিবদাস ভাদুরির পপ্রৌত্রী দেবিকা রায়। সব শুনে তিনি বলছেন, ‘‘গোষ্ঠ পালের মতো ব্যক্তিত্বের সম্মান নিয়ে খেলা করার অধিকার কারও নেই। তিনি প্রাতঃস্মরণীয়। গোষ্ঠ পালের পরিবারের দীর্ঘ দিন ধরেই চাপা একটা ব্যথা ছিল। সেটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ দিন। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, যাঁরা ক্লাবে রয়েছেন এই সব ব্যাপার তাঁদের খুব একটা ভাবায় না।’’

শুধু কি কর্তাদের মনে রেখাপাত করে না! ফুটবলাররাও তো নিশ্চুপ। অগ্রজর সম্মান আদায়ের জন্য অনুজ খেলোয়াড়রা কি প্রতিবাদের রাস্তায় নামতে পারেন না? গোষ্ঠ পালের মতো কিংবদন্তির অসম্মানের কথা শুনেও মুখে কুলুপ কেন এ রাজ্যের ক্রীড়াবিদদের? নীরাংশুবাবুও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। পাচ্ছেন না জবাব।

Gostho Paul Mohun Bagan Mohun Bagan Ratna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy