ঘন কালো মেঘের মধ্যে থেকে এক ফালি সোনালি চাঁদ বেরিয়ে পড়লে যেমন দেখায়, সনি নর্ডির চুলটা গ্যালারির উপর থেকে দেখলে সে রকমই লাগে।
বাংলাদেশের ক্লাব ছেড়ে মোহনবাগানে আসার পর এই চুলের স্টাইল করেছিলেন হাইতি স্ট্রাইকার। কেন?
‘‘নিজেকে আলাদা করে চেনানোর জন্য। ভারতে অনেক বিদেশি খেলে। তাদের ভিড়ে যাতে হারিয়ে না যাই সে জন্যই চুলের এই স্টাইলটা নিয়েছিলাম।’’ প্রবাসী সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাসের ঘেরাও সরিয়ে বেরোনোর পর বলছিলেন সবুজ-মেরুনের নতুন বিদেশি হার্টথ্রব।
২০০২ বিশ্বকাপে রিভাল্ডো-কার্লোসদের সঙ্গে খেলার সময় ব্রাজিলের রোনাল্ডো তাঁর ছেলের আব্দারে নিজের কামানো মাথার সামনে সামান্য কয়েকটা চুল রেখে দিতেন। কি না ছেলে মাঠে বাবাকে চিনতে পারত না! কথাটা সনিকে বলতে হাসেন তিনি। বলেন, ‘‘কাগজে পড়েছিলাম। তবে আমাকে এ দেশের ফুটবলে সবাই এখন চিনে গিয়েছে। কিন্তু আসল চেনানোর কাজটা হবে যদি বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে আই লিগটা নিয়ে যেতে পারি। রবিবারের ম্যাচটা তাই আমার কাছে অনেক কিছু।’’
বলতে বলতে সনির এ বার চমকপ্রদ মন্তব্য, ‘‘শপথ নিয়েছি ট্রফিটা পেলে দেশে গিয়ে চুলের স্টাইলটা আবার বদলে ফেলব। নতুন হেয়ার স্টাইল নিয়ে ফিরব বাগানে।’’
পিয়ের বোয়ার আবার শপথ— এ দেশে নিজের নামে ইতিহাস লিখে রাখা। ‘‘চাম্পিয়ন্স লিগ শুদ্ধু বিশ্ব ফুটবলের অনেক বড় বড় টুর্নামেন্ট খেলেছি। অনেক বড় ক্লাবে খেলেছি। কিন্তু ভারতে এসে যদি প্রথম বছরেই এ দেশের সেরা টুর্নামেন্ট জিততে পারি তা হলে দারুণ ব্যাপার হবে,’’ বলছিলেন বাগানের ক্যামেরুন গেমমেকার। যিনি সনি-কাতসুমি দলে থাকলেও বাগান কোচের মতে তাঁর টিমের ব্যান্ড মাস্টার।
নিজের পাহাড়প্রমাণ অভিজ্ঞতা বোয়া বাগান কাজে লাগাচ্ছেন দারুণ ভাবে। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘বেলো চোদ্দো বছর এ দেশে খেলছে, এক বারও লিগ পায়নি। শিল্টন এই ক্লাবে ন’বছর খেলছে, তবু লিগ জেতেনি। ওদের বলেছি, গুগলে নিজের নাম তুলতে হলে কাল ম্যাচটা জিততেই হবে।’’
সনি-বোয়ার মতোই বাগান হোটেলে চলছে নানা শপথ। ফুটবলার-কর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের মনোভাবের কথা বলছেন, কেউ লুকিয়ে রাখছেন। এক ফুটবলার বললেন, ‘‘কলকাতায় যে বুট পরে বেঙ্গালুরুকে হারিয়েছিলাম সেটা একটু ছিঁড়ে গিয়েছে। তবু ওটা পরেই কাল খেলব।’’ এক ফুটবলার আবার ফাঁস করলেন, ‘‘হোটেলে নিজের ঘরের টেবলে মা কালী আর লোকনাথবাবার ছবি পাশাপাশি রেখেছি, আমার খুব পয়মন্ত বলে।’’
কর্তারা আরও বেশি তুকতাক করছেন। বাগানের অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত এ দিন সকালে বেঙ্গালুরু আসেন ক্লাবের স্পনসর সমস্যা মেটাতে। আলোচনায় কিছু ভাল আশ্বাস পাওয়ার পর টিম হোটেলে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে ফিরে গিয়েছেন কলকাতায়। শোনা যাচ্ছে ‘বিশেষ কারণ’-এর জন্য। হাজার খানেক বাগান সমর্থক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন প্রিয় টিমকে সমর্থন করতে। বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রসাদ-ফুল নিয়ে এসেছেন ক্লাবের অনেক কর্তা-কর্মী।
দিল্লির ফুটবল হাউস থেকে এসে গিয়েছে আই লিগের ট্রফিও। সেটা রবিবার ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে কে তুলে দেবেন তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত নয়। জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন থাকছেন। থাকছেন কর্নাটক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারাও। এ বারই প্রথম লিগের সেরা গোলদাতা-সহ সব ট্রফি তুলে দেওয়া হবে মঞ্চ থেকেই। সেরা কোচের পুরস্কারও। আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর বললেন, ‘‘বিভিন্ন ক্লাবের অধিনায়ক ও কোচেরা ভোট দিয়েছেন। সেটার ভিত্তিতে সেরাদের নাম জানানো হবে।’’
কিন্তু বাগান সমর্থকদের আর তর সইছে না। ফেসবুক উপচে পড়ছে প্রত্যাশায়। এক বাগান সমর্থক লিখেছেন, ‘আমাদের আকাশের রং হবে সবুজ। দেখতে পাচ্ছি। এটাও দেখতে পাচ্ছি, সোমবার সকালে সব কাগজ লিখছে—ইতিহাস গড়ল বাগান।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy