Advertisement
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এশিয়াডে সোনা জিতে তাস খেলার ‘কুলীন’ হলেন দুই বাঙালি ‘বৃদ্ধ’

তাস যে আর নিছক সময় কাটানোর খেলা নয়, সেটা প্রমাণ করে দিলেন দুই বঙ্গসন্তান। সন্তোষপুরের প্রণব বর্ধন এবং হাওড়ার শিবপুরের শিবনাথ সরকার।

প্রণব বর্ধন ও শিবনাথ সরকার। ছবি: পিটিআই।

প্রণব বর্ধন ও শিবনাথ সরকার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৫১
Share: Save:

‘তাস, দাবা, পাশা/ তিন সর্বনাশা’— প্রবাদটা বদলে যেতে পারে এ বার।

তাস যে আর নিছক সময় কাটানোর খেলা নয়, সেটা প্রমাণ করে দিলেন দুই বঙ্গসন্তান। সন্তোষপুরের প্রণব বর্ধন এবং হাওড়ার শিবপুরের শিবনাথ সরকার। জাকার্তা এশিয়াড থেকে আর এক বাঙালি স্বপ্না বর্মণের মতোই দেশের জন্য সোনার পদক আনলেন দুই বন্ধু— পুরুষদের ব্রিজের পেয়ার্স ইভেন্টে ৩৮৪ পয়েন্ট পেয়ে। চিনের ল্যাক্সিং ইয়ান এবং গ্যান চেনকে হারালেন তাঁরা। এই প্রথম বার তাসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এশিয়াডে। প্রথম বছরেই সাফল্যের মুখ দেখে উদ্বেল দু’জনেই। তাস নিয়ে ওঠা নানা বিতর্ক সরিয়ে প্রণব-শিবনাথ বলেছেন, ‘‘ব্রিজ জুয়া খেলা নয়। এটা দাবার চেয়েও কঠিন।’’

কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এই সাফল্যকে? তাস খেলার ‘কুলীন’ হওয়া? প্রমাণ করে দেওয়া যে, হকি, ফুটবল, টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতারের মতো তাসও পারে মর্যাদার পদক এনে দিতে? নাকি প্রৌঢ়ত্বে দাঁড়ানো দু’টো মানুষের এশিয়াডে সোনা পাওয়ার বিরল কৃতিত্ব? প্রণব এবং শিবনাথ— দু’জনেরই বয়স পঞ্চাশ থেকে ষাটের কোঠায়। শনিবার তাঁদের জয়ের দিনে তাই শুরু হয়ে গেল আরও একটা চর্চা, খেলা হিসেবে ছোটরা কি বেছে নিতে পারে তাসকে? কত বয়স থেকেই বা শুরু করা উচিত খেলাটা?

প্রণব-শিবনাথ ব্রিজ খেলছেন পনেরো বছর ধরে। পেশাদার তাস খেলোয়াড় হিসাবে দেশে-বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলে বেড়ান দু’জনেই। ষাট বছরের প্রণব এক সময়ে নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পেশাদার ব্রিজ খেলায় মন দিতে ব্যবসা ছাড়েন। বাবা ননীগোপাল বর্ধনের তাস খেলার নেশা ছিল। মূলত ব্রিজই খেলতেন তিনি। সে জন্য বাড়িতেও কোনও সমস্যা হয়নি। জার্কাতায় সোনা জেতার পরে বাড়িতে মেয়ে প্রতিরূপাকে ফোন করেছিলেন উচ্ছ্বসিত প্রণব। সোনা জেতার পরে তিনি জার্কাতায় বলেছেন, ‘‘ব্রিজ খেলায় যুক্তি দরকার হয়। দাবার মতোই এটা বুদ্ধির খেলা। তবে দাবার চেয়ে ব্রিজ কঠিন। কারণ দাবা এক জন খেলেন। আর ব্রিজ দু’জন। খেলার সময়ে সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলা যায় না। অন্যের চাল বুঝতে হয়। সঙ্গী কী ভাবছে, সেটা আন্দাজ করতে হয়। ভাগ্যের কোনও ব্যাপার নেই।’’ আর তাঁর প্রায় দেড় দশকের সতীর্থ, ছাপ্পান্নর শিবনাথের কথায়, ‘‘বয়স্করাই শুধু তাস খেলে, এই ধারণা ভুল। সিঙ্গাপুরের হয়ে কুড়ি বছরের ছেলেও প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।’’

তাস যে শুধু কার্ড নিয়েই খেলতে হয়, তা নয়। এখন অনলাইনেও তাস খেলা অনুশীলন করা যায়। প্রতিরূপা বলছিলেন, ‘‘ব্রিজবেস অনলাইন নামে একটি বিশেষ ওয়েবসাইটে ব্রিজ খেলা যায়। বাবা আর শিবনাথকাকু সেখানে খেলেন। পুরস্কারের অর্থও পান ওখান থেকে।’’

তবে এ দিন যে সেরা পুরস্কারটাই তাঁরা পেয়েছেন, দ্বিমত নেই তা নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE