বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের বদলে ১৬ সদস্যের দল চেয়েছিলেন রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় দলের হেড কোচ দুবাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম, বিশ্বকাপের দল ১৬ জনের হোক। এ ব্যাপারে আমরা আইসিসি-র সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। আমদের বক্তব্য ছিল, এত লম্বা একটা টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ, তাই ১৬ জনের দল নিয়ে যেতে দেওযা হোক। সেটাই যুক্তিসঙ্গত হত। কিন্তু নির্দেশ আসে ১৫ জনের দলই করতে হবে।’’
ভারতের বিশ্বকাপ দল নির্বাচন নিয়ে কাজিয়া তুঙ্গে। সব চেয়ে বেশি করে বিতর্ক চলছে ঋষভ পন্থকে বাদ দিয়ে দীনেশ কার্তিককে নেওয়ায়। আশ্চর্যজনক ভাবে শাস্ত্রী দল নির্বাচনে ছিলেন না। এমনিতে অন্যান্য সময়ে দল নির্বাচনে না থাকলেও বিশ্বকাপের বৈঠকে তাঁকে থাকতে বলা হল না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। শাস্ত্রী যদিও দুবাইয়ে বলেছেন, তাঁরা দল নির্বাচনের কাজে যুক্ত হন না। আর তাতে তাঁর অভিযোগ আছে বলেও মনে হয়নি। বলেছেন, ‘‘আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে নাক গলাই না। যদি কোনও মতামত থাকে, সেটা অধিনায়ককে জানিয়ে দেওয়া হয়।’’
শাস্ত্রী বললেও এই প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক কাল ধরেই প্রশ্ন উঠছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সময়ে কোচ থাকা জন রাইট তাঁর বইতে সমালোচনা করে লিখেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোচ বা অধিনায়কের ভোট না থাকায় নির্বাচকেরা তাঁদের মতো করে সভাকে প্রভাবিত করতে পারতেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্বাচকেরা আঞ্চলিকতাবাদে আচ্ছন্ন হয়ে নিজেদের ‘কোটার’ ক্রিকেটারও ঢোকাতে চাইতেন বলে রাইট লিখেছিলেন।
ঘটনা হচ্ছে, রাইটের সময়ে তা-ও কোচ নির্বাচনী বৈঠকে হাজির থাকতেন। একই প্রথা চলেছে তাঁর পরবর্তী কোচ গ্রেগ চ্যাপেল, গ্যারি কার্স্টেন বা ডানকান ফ্লেচারের আমলেও। এখন ভোটাভুটিতে কোচ বা অধিনায়ককে শামিল করার পরিবর্তন তো আসেইনি, উল্টে কোচের উপস্থিতিও নির্বাচনী সভায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কোনও গড়বড় কিছু ঘটলে সামনাসামনি বসে কোচ যে ভাবে সওয়াল করতে পারবেন, তা তিনি বৈঠকে না থেকে করবেন কী ভাবে? এ ক্ষেত্রেই যেমন কার্তিক বনাম পন্থ তর্ক যখন চলছিল, তখন কোচ শাস্ত্রীর কী বক্তব্য, সেটা কী আদৌ শোনা হয়েছিল?
শাস্ত্রীর গলায় অবশ্য এ নিয়ে অভিযোগের সুর নেই। তিনি বরং সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাদ পড়া ক্রিকেটারদের। বলছেন, ‘‘ভেঙে পড়ার কিছু নেই। তার চেয়ে তৈরি থাকা ভাল। যে কোনও সময় কারও চোট লাগতেই পারে আর তখন তাদের ডাক পড়তে পারে। ক্রিকেট খুব মজার খেলা।’’ কার্তিক বনাম পন্থ বিতর্কে তিনি ঢুকতে চাননি। তবে যোগ করছেন, ‘‘মাত্র পনেরো জনকেই তো নেওয়া যাবে। তাই কেউ না কেউ বাদ পড়বেই। যেটা খুবই দুঃখজনক।’’
দ্বিতীয় উইকেটকিপারের পদ ছাড়াও ব্যাটিংয়ে চার নম্বর জায়গাটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। নির্বাচক প্রধান এম এস কে প্রসাদ বলেছেন, সম্ভাব্য চার নম্বর হিসেবে বিজয় শঙ্করকে নেওয়া হয়েছে। শাস্ত্রী যদিও বলছেন, চার নম্বরে কে ব্যাট করবেন, তা তাঁরা খোলা মনে ভেবে দেখবেন। নির্দিষ্ট কাউকে বেছে রাখা হচ্ছে না। ‘‘আমাদের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান নিশ্চিত। বাকি জায়গায় আমরা নমনীয়তা দেখাতে রাজি। পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষ দেখে আমরা ঠিক করব, চার নম্বরে কে ব্যাট করবে।’’
ভারত অতিরিক্ত মাত্রায় বিরাট কোহালির উপর নির্ভরশীল, এই তত্ত্বকেও উড়িয়ে দিয়েছেন শাস্ত্রী। দুবাইয়ের একটি সংস্থার কর্পোরেট অ্যাম্বাসাডর হলেন তিনি। তারই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘গত পাঁচ বছরের পারফরম্যান্স দেখুন। এই ভারতীয় দলটা সব সময় এত ভাল খেলেছে যে, সারাক্ষণ প্রথম দুই বা তিন দলের মধ্যে থেকেছে। এক জনের উপর নির্ভর করে পাঁচ বছর ধরে এই ধারাবাহিকতা দেখানো সম্ভব নয়। এক দল ভাল ক্রিকেটার দরকার আর সেটাই আমাদের দলে হচ্ছে।’’
ইংল্যান্ডে আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে বলতে গিয়ে শাস্ত্রীর মনে হচ্ছে, এ বারের সব চেয়ে বড় ফেভারিট ইংল্যান্ড। ‘‘গত দু’বছর ধরে এই ফর্ম্যাটে সব চেয়ে ধারাবাহিক দল ওরাই,’’ বলছেন শাস্ত্রী, ‘‘ওদের বহুমুখী ক্রিকেটার রয়েছে। ব্যাটিং, বোলিংয়ে গভীরতা আছে। ওরা ঘরের মাঠেও খেলছে। তাই আমার মতে, ওরা ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে।’’ কোহালিদের কোচ অবশ্য দ্রুত যোগ করতে ছাড়ছেন না যে, ‘‘কিন্তু অনেক ভাল দলই আছে টুর্নামেন্টে। যারা ভাল দিনে যে কোনও প্রতিপক্ষকে হারাতে পারে। বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টে সব ম্যাচে সেরা ফর্মে থাকতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy