Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পুনর্মিলনের কথা ভেবেই উত্তেজিত, লন্ডন থেকে ফোনে বললেন শাস্ত্রী

ক্রিকেটার হিসেবে অনেক দুর্দান্ত কামব্যাকের ঘটনা আছে এ দেশের ক্রিকেটে। কিন্তু কোচ হিসেবে এক বার ছাঁটাই হয়ে এক বছরের মধ্যেই ফিরে আসা— এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

জুটি: আবার অধিনায়ক বিরাট কোহালির পাশে প্রত্যাবর্তন কোচ রবি শাস্ত্রীর। শ্রীলঙ্কা সফর থেকে দু’জনের যে ছবি দেখা যাবে। ছবি: টুইটার

জুটি: আবার অধিনায়ক বিরাট কোহালির পাশে প্রত্যাবর্তন কোচ রবি শাস্ত্রীর। শ্রীলঙ্কা সফর থেকে দু’জনের যে ছবি দেখা যাবে। ছবি: টুইটার

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৫:০০
Share: Save:

ভারতে তাঁকে নিয়ে যে দুপুর থেকেই ব্রেকিং নিউজ চালু হয়ে গিয়েছিল, জানার উপায় ছিল না রবি শাস্ত্রীর। তিনি যে এখনও লন্ডনেই! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কমেন্ট্রির কাজ শেষ হয়ে গেলেও ঠিক করেন, পরিবার নিয়ে কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে ফিরবেন। কে জানত, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের কাহিনি হয়ে ফিরবেন!

ক্রিকেটার হিসেবে অনেক দুর্দান্ত কামব্যাকের ঘটনা আছে এ দেশের ক্রিকেটে। কিন্তু কোচ হিসেবে এক বার ছাঁটাই হয়ে এক বছরের মধ্যেই ফিরে আসা— এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

ভারতীয় সময় অধিক রাতে যখন তাঁকে লন্ডনে ফোনে ধরা গেল, পরিচিত সেই শাস্ত্রীয় সুর। টগবগে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। ‘‘আমি খুশি যে ছেলেদের মাঝে ফিরতে পারছি। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ফিরছি, সেটা ভেবেই আমি উত্তেজিত। ছেলেদের সঙ্গে পুনর্মিলন হচ্ছে, এর চেয়ে সুখের আর কী হতে পারে!’’ যখন বলছেন শাস্ত্রী, মনে হচ্ছিল তাঁর সেই ক্রিকেটজীবনের হার-না-মানা মনোভাবের প্রতীক হয়েই যেন কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে নামছেন।

আরও পড়ুন: শাস্ত্রীই কোচ, রাহুলদের নিয়ে নাটক

দীর্ঘমেয়াদি ভাবে কোচ নির্বাচন সেরে ফেলল অ্যাডভাইসরি কমিটি এবং ভারতীয় বোর্ড। শাস্ত্রী হেড কোচ হচ্ছেন ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। লম্বা দৌড়ে তাঁর পরিকল্পনা কী, তা জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘‘নিজেদের সেরাটা দেওয়া। ক্রিকেট দলগত খেলা। দল হিসেবে খেলতে হবে, চলতে হবে।’’ মুখে না বললেও ড্রেসিংরুমের ফুরফুরে পরিবেশ ফেরানোটাই যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। অনিল কুম্বলের আমলে যেখানে অনিশ্চয়তা আর বিশ্বাসভঙ্গের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল।

যখনই তিনি ভারতীয় দলের দায়িত্বে এসেছেন, কঠিন পরিস্থিতি তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য হাজির থেকেছে। ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গেল রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত। কোচ গ্রেগ চ্যাপেল ছাঁটাই হলেন। বাংলাদেশে তরুণ টিম নিয়ে এক দিনের সিরিজ খেলতে গেলেন শাস্ত্রী। পরে টেস্ট সিরিজে যোগ দিলেন সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-রা। দু’টো সিরিজই জিতে ভক্তদের রোষ থামাল তাঁর দল।

এর পর অগস্ট, ২০১৪। ধোনির ভারত যখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে বিপর্যস্ত, ডানকান ফ্লেচারকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, শাস্ত্রীকে ডিরেক্টর করে আনা হল। এসেই তাঁর অধীনে ইংল্যান্ডে ওয়ান ডে সিরিজ জিতলেন ধোনিরা। তার পর অস্ট্রেলিয়া গিয়ে শাস্ত্রীর আগ্রাসী, ইতিবাচক মন্ত্রে কোহালিদের সেই উত্তেজক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলা। সেই সফরেই চারটি টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করে উত্থান নতুন এক কোহালির। সেই শুরু শাস্ত্রী-কোহালি যাত্রা। ভারতীয় ক্রিকেটের চাণক্য এবং চন্দ্রগুপ্ত হয়ে উঠছেন যাঁরা।

সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে কোচ হিসেবে এটা শাস্ত্রীর তৃতীয় ইনিংস। এবং, বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের অন্যতম সেরা মস্তিষ্ক হিসেবে পরিচিত হলেও এই প্রথম ভারতীয় দলের কোচ হবেন পাকাপোক্ত চুক্তির ভিত্তিতে। এর আগে দু’বারই বোর্ড কর্তাদের অনুরোধে তিনি দায়িত্ব সামলে দিতে রাজি হয়েছেন। প্রথম বার বাংলাদেশের সফর ছিল সংক্ষিপ্ত। কিন্তু পরের বার উনিশ মাস দায়িত্বে ছিলেন। তার প্রথম তেরো-চোদ্দো মাস চুক্তি এবং বেতন ছাড়াই ডিরেক্টরের পদ সামলেছেন।

ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার পরে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জে খেলে কোহালি এখন ছুটি কাটাচ্ছেন মার্কিন মুলুকে। শাস্ত্রী লন্ডনে। কবে দেখা হবে তাঁদের? সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই দেশে ফিরবেন শাস্ত্রী। কাছাকাছি সময়ে ফিরছেন কোহালিও। তার পরে বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। সহকারী কোচেরা কী ভাবে কাজ করবেন, সে সব নিয়ে আলোচনা হবে। শ্রীলঙ্কা সফর দিয়ে ফের যাত্রা শুরু হচ্ছে শাস্ত্রী-কোহালি জুটির। সেই শ্রীলঙ্কা যেখানে গত বারই তেইশ বছর বাদে সিরিজ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল এই যুগলবন্দি।

যদিও এ সব নিয়ে দেশে ফেরার পরেই বিস্তারিত আলোচনা করবেন শাস্ত্রী। আপাতত তাঁর মাথায় ক্রিকেট ছাড়াও রয়েছে টেনিস। উইম্বলডনে রজার ফেডেরারের ম্যাচ দেখতে যাওয়ার ভাবনা আছে। বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ভাবা ছিল যে, ফেডেরার ভাল খেলতে থাকলে কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনালে খেলা দেখতে যাবেন।

এক বছর আগে কলকাতার বৈঠকে তাঁকে সরিয়ে অনিল কুম্বলেকে কোচ করা হয়েছিল। এ বার নিজের শহর মুম্বইয়ে হওয়া কোচ নির্বাচনী সভা তাঁর প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হয়ে থাকল। প্রিয় এক বন্ধু মজা করে শাস্ত্রীকে অভিনন্দন বার্তায় লিখেছেন— ‘জানতাম সূর্য পূবে ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়। এ বার দেখলাম, রবি পূবে অস্ত গিয়ে পশ্চিমে ফের উদয় ঘটল’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE