Advertisement
০২ মে ২০২৪

অশ্বিনের দুরন্ত ঘূর্ণিতে দুনিয়া ঘোরে বন বন

এই দুনিয়া মানে শ্রীলঙ্কার দুনিয়া ঘুরছে। কী অবস্থা! মুথাইয়া মুরলীধরনের দেশে স্পিনারদের যেন মহামারী চলছে। অজন্তা মেন্ডিসের মতো একটা রহস্যময় স্পিনারেরও দেখা নেই। অথচ বারবার শ্রীলঙ্কায় এসে শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের হাতে নাকানিচোবানি খেয়ে হেরেছে বিভিন্ন প্রজন্মের ভারতীয় দল।

যুগলবন্দি: শুক্রবার জোড়া হাফসেঞ্চুরি করে ভারতকে এগিয়ে দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা ও রবীন্দ্র জাডেজা। ছবি: রয়টার্স।

যুগলবন্দি: শুক্রবার জোড়া হাফসেঞ্চুরি করে ভারতকে এগিয়ে দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা ও রবীন্দ্র জাডেজা। ছবি: রয়টার্স।

সুমিত ঘোষ
কলম্বো শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

কলম্বোর মাঠে বসে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই জনপ্রিয় গানের লাইনগুলোই মনে পড়ে যাচ্ছে। ‘দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক। এই দুনিয়া ঘোরে বন বন বন।’

এই দুনিয়া মানে শ্রীলঙ্কার দুনিয়া ঘুরছে। কী অবস্থা! মুথাইয়া মুরলীধরনের দেশে স্পিনারদের যেন মহামারী চলছে। অজন্তা মেন্ডিসের মতো একটা রহস্যময় স্পিনারেরও দেখা নেই। অথচ বারবার শ্রীলঙ্কায় এসে শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের হাতে নাকানিচোবানি খেয়ে হেরেছে বিভিন্ন প্রজন্মের ভারতীয় দল।

শোনা গেল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ চাঞ্চল্য ফেলে আবির্ভাব ঘটানো মেন্ডিস এখন সেনাবাহিনীর দলের হয়ে খেলে বেড়ান। সেনাবাহিনীতেই তিনি চাকরি করেন। চোট-আঘাতে জর্জরিত তিনি আর রহস্যের জাল বুনতে পারেন না। শ্রীলঙ্কার স্পিনার বলতে পড়ে আছেন একমাত্র বাঁ হাতি রঙ্গনা হেরাথ। শোলের গব্বর সিংহের মতোই কেউ যেন তাঁকে বলে দিয়েছে, ‘যব তক তেরে প্যায়ের চলেঙ্গে, তব তক উসকি সাঁস চলেগি’। হেরাথ বল করেই চললেন। চোট লাগা আঙুল নিয়েও করলেন ৪২ ওভার। ১৫৩ রান দিয়ে মিলল চার উইকেট।

ভারত ৯ উইকেটে ৬২২ রানের বিশাল স্কোর তুলে ডিক্লেয়ার করে দিল। এই নিয়ে গত ৯ মাসে ষষ্ঠ বার ৬০০-প্লাস স্কোর তুলল বিরাট কোহালির দল। আরও একটা ব্যাপার বলার মতো। তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন-আপে টেলএন্ডারদের অবদান।

আরও পড়ুন: রানের পাহাড়ের সামনে অশ্বিন দাপটে শুরুতেই চাপে শ্রীলঙ্কা

নীচের দিকে তিন জন হাফ সেঞ্চুরি করে গেলেন। অশ্বিন (৫৪), ঋদ্ধিমান সাহা (৬৭) এবং রবীন্দ্র জাডেজা (৭০ নট আউট)। দিনের বিশেষ ছবি হয়ে থাকল হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে জাডেজার তরোয়াল প্রদর্শনী। পূজারা গত দিনের স্কোরের সঙ্গে মাত্র ৫ রান যোগ করতে পারলেন। রাহানে ১৩২ করে আউট হলেন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে। ভারতের রান তখন ৪১৩-৫। তার পর শেষ পাঁচ উইকেটে যোগ হল ২০৯ রান। এমনকী, মহম্মদ শামি এসেও ছক্কা হাঁকড়াতে লাগলেন।

কোহালি ২০ ওভার ব্যাট করতে দিলেন শ্রীলঙ্কাকে। তার মধ্যেই তারা ৫০-২। দু’টো উইকেটই তুলেছেন অশ্বিন। শ্রীলঙ্কা তিন স্পিনার খেলিয়েও যে প্রভাব দেখাতে পারেনি, অশ্বিন একা তা করে দেখাচ্ছেন। চণ্ডীমল ব্যাট করতে এসে স্লগ-সুইপ করে ছক্কা মারলেন। তাতে দেখা গেল অশ্বিনের মুখচোখ আরও চকচকে হয়ে উঠেছে। ভাবখানা এমন যেন, চাঁদু হাত খুলছো... বেশ বেশ খোলো।

শ্রীলঙ্কায় খেলতে আসা মানে দু’জন ক্রিকেটারকে নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকবে কোহালির ভারত। হেরাথ এবং দীনেশ চণ্ডীমল। এই দু’জনেই ২০১৫ সালের সেই অভিশপ্ত গল টেস্টে হারিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর থেকে ভারতীয় দলের মধ্যে একটা প্রতিজ্ঞা তৈরি হয়ে যায় যে, এই দু’জনকে সফল হতে দেব না। এ বারের গল টেস্ট থেকেউ কাউন্টার অ্যাটাক করে হেরাথের ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছেন শিখর ধবন। এ বার টার্গেট চণ্ডীমল। গত সিরিজে একাধিক ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর খটাখটিও বেধেছিল। এ দিন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ব্যাট করতে আসামাত্র হঠাৎ কথাবার্তা বেড়ে গেল। ক্লোজ-ইন ফিল্ডারদের শরীরী ভাষা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেল, চাণ্ডীমলকে ‘মৌখিক অভ্যর্থনা’ জানানো হচ্ছে।

দুরন্ত ঘূর্ণির পাক যে কেমন লেগেছে ভারতের বোলিংয়ের শুরুতেই বোঝা গেল। কোহালি দ্বিতীয় ওভারেই নিয়ে এলেন অশ্বিনকে। ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে উপুল থরঙ্গাকে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচে তুললেন কে এল রাহুল। সেটা বাদ দিলে ২০ ওভারের বোলিং পর্বের পুরোটাই অশ্বিন-কেন্দ্রিক। খারাপ হতে থাকা পিচে তাঁর কোনও বল বাইরের দিকে যাচ্ছে, কোনওটা অফস্টাম্পের উপর পড়ে গোঁত্তা খেয়ে ভিতরের দিকে আসছে। চণ্ডীমলদের অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখাতে হবে হারের সুড়ঙ্গ থেকে বেরোতে হলে।

অশ্বিন আরও সব কামাল করে গেলেন। দ্রুততম হিসেবে দু’হাজার রান আর দু’শো উইকেটে পৌঁছলেন তিনি। এর আগে দ্রুততম ছিলেন রিচার্ড হ্যাডলি। তাঁর চেয়ে চারটি টেস্ট কম লাগল অশ্বিনের। ভারতীয়দের মধ্যে আর মাত্র তিন জনের আছে এই কৃতিত্ব। কপিল দেব, অনিল কুম্বলে এবং হরভজন সিংহ।

দিনের খেলা শেষে আবার অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ভারতীয় দলের ‘গব্বর’ নেমে পড়েছে ব্যাট হাতে। মাঠের মধ্যেই প্যাড-গ্লাভস পরে রীতিমতো সিরিয়াস ব্যাটিং অনুশীলন করলেন আধ ঘণ্টার উপর।

কী দাঁড়াল? না, শ্রীলঙ্কাকে তাড়াতাড়ি সাবাড় করে দিলে এ বারও ফলো-অনের গপ্পো নেই। ধবনরা আবার ব্যাট করবেন। ছন্দে ছন্দে কত রং বদলায়, রং বদলায়! এই দুনিয়া ঘোরে বন বন বন বন।

স্কোরকার্ড

ভারত (প্রথম ইনিংস) ৬২২-৯

শ্রীলঙ্কা (প্রথম ইনিংস) ৫০-২ (৪০)

ভারত (আগের দিন ৩৪৪-৩-এর পর)

পূজারা এলবিডব্লিউ করুণারত্নে ১৩৩

অজিঙ্ক স্টা ডিকওয়েলা বো মালিন্ডা ১৩২

আর অশ্বিন বো হেরাথ ৫৪

ঋদ্ধিমান স্টা ডিকওয়েলা বো হেরাথ ৬৭

হার্দিক ক ম্যাথিউজ বো মালিন্ডা ২০

রবীন্দ্র জাডেজা ন.আ. ৭০

মহম্মদ শামি ক থরঙ্গা বো হেরাথ ১৯

উমেশ যাদব ন.আ. ৮

অতিরিক্ত ১৪

মোট ৬২২-৯

পতন: ৫৬-১ (শিখর, ১০.১), ১০৯-২ (রাহুল, ৩০.৪), ১৩৩-৩ (কোহালি, ৩৮.৫), ৩৫০-৪
(পূজারা, ৯১.৬), ৪১৩-৫ (রাহানে, ১১০.৫), ৪৫১-৬
(অশ্বিন, ১২১.৫), ৪৯৬-৭ (পাণ্ড্য, ১৩২.৪), ৫৬৮-৮ (ঋদ্ধিমান, ১৫২.১), ৫৯৮-৯ (শামি, ১৫৪.৫)।

বোলিং: নুয়ান প্রদীপ ১৭.৪-২-৬৩-০, রঙ্গনা হেরাথ ৪২-৭-১৫৪-৪, দিমুথ করুণারত্নে ৮-০-৩১-১,

দিলরুয়ান পেরেরা ৪০-৩-১৪৭-১, মালিন্ডা পুষ্পকুমার ৩৮.২-২-১৫৬-২,

ধনঞ্জয় ডি’সিলভা ১২-০-৫৯-০।

শ্রীলঙ্কা (প্রথম ইনিংস)

করুণারত্নে ক রাহানে বো অশ্বিন ২৫

উপুল থরঙ্গা ক রাহুল বো অশ্বিন ০

কুশল মেন্ডিস ব্যাটিং ১৬

দীনেশ চণ্ডীমল ব্যাটিং ৮

অতিরিক্ত ১

মোট ৫০-২

পতন: ০-১ (থরঙ্গা, ১.৬), ৩৩-২ (করণারত্নে, ১৩.৪)।

বোলিং: মহম্মদ শামি ৩-১-৭-০, আর অশ্বিন ১০-২-৩৮-২, রবীন্দ্র জাডেজা ৭-৪-৪-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE