ফুটবলে একটা খুব বিখ্যাত প্রবাদ আছে— আজ তুমি তারায় তো কাল ধুলোয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে রিয়াল মাদ্রিদের অন্দরমহলের অবস্থাটাও ছিল ঠিক সে রকম। বিভক্ত ড্রেসিংরুম। রগচটা রোনাল্ডো। দিশাহীন কোচ। একদা সোনার সাম্রাজ্য ধুলোয় মিশে যাওয়ার মতোই।
কোচের হটসিটে শুধু ছোট্ট একটা বদল।
রাফায়েল বেনিতেজকে সরিয়ে জিনেদিন জিদান।
তাতেই হতাশায় শুরু বছর শেষ হল ট্রফিতে। ভঙ্গুর একটা ড্রেসিংরুম তুলে আনল এগারো নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। চল্লিশ ম্যাচ অপরাজিত থেকে গড়ল নতুন রেকর্ড। ঠিক গ্যালাকটিকসদের মতোই।
জিদানের সাফল্যের রহস্য কী বলতে গিয়ে অনেকের যুক্তি, রিয়ালের ঘরের ছেলে হওয়ায় জিদান অনেক বেশি চাপমুক্ত।
কিন্তু সেই যুক্তি পুরোপুরি মানতে নারাজ ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। যিনি বলছেন, ‘‘হ্যাঁ রিয়ালের হয়ে অনেক বছর খেলেছে জিদান। ভাল ভাবে জানে ক্লাব সম্পর্কে। কিন্তু রিয়ালের মতো ক্লাবে কেউ রেজাল্ট না দিতে পারলে টিকটে পারে না। কোচ যে-ই থাক না কেন, রেজাল্টের উপর সব নির্ভর করে।’’
১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জিদানের দুটো হেড স্তাদ দ্য ফ্রঁস-এ গ্যালারিতে বসেই দেখেছিলেন আই লিগ জয়ী কোচ। যাঁর মতে নিজে কিংবদন্তি ফুটবলার ছিলেন বলেই প্রতিটা ফুটবলারের মানসিকতা বুঝতে পারেন জিদান। ‘‘জিদানের সবচেয়ে বড় গুণ ওর ম্যান ম্যানেজমেন্ট। দুর্দান্ত প্লেয়ার ছিল জিদান। প্লেয়ার হিসেবে সব রকমের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তাই দলের ফুটবলারদের মানসিকতাটা বুঝতে পারে। জানে কোন ফুটবলারের দুর্বলতা বা শক্তি কী? এটা অনেকটা সাহায্য করে,’’ বলছেন মনোরঞ্জন।
শুধুমাত্র ম্যান ম্যানেজমেন্ট নয়। জিদান প্রমাণ করেছেন স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ধারাল তাঁর মগজ। মোহনবাগানে খেলা ও কোচিং করানো সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ক্লাবে খেলা কোনও প্রাক্তন তারকা কোচিং করাতে এলে আলাদা আবেগ থাকে সমর্থকদের মধ্যে। জিদান লেজেন্ড। ফুটবলাররা ওকে শ্রদ্ধা করে। জিদান খুব বুদ্ধিমান কোচ। ভাল ছকও কষতে পারে।’’
সত্যিই তো। ইন্টারনেট ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে মার্সেলো বিয়েলসার ঘরানার ফুটবল পছন্দ করেন জিদান। ফ্লুইড। তাই ওঁর স্ট্র্যাটেজি মানে উইং প্লে হচ্ছে। মাঝমাঠে অনেক লোক থাকছে। ডিফেন্স বাঁচাতে পিভটও। সুব্রত বলছেন, ‘‘টনি ক্রুজই মাঝমাঠের কেন্দ্রীয় চরিত্র। যে ডিপ থেকে খেলছে। এক দিকে তিন-চার জনকে নিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাঙ্ক পাল্টাচ্ছে। ম়ডরিচ আবার খেলছে বক্স টু বক্স। মাঝমাঠকে কার্যকরী করছে যাতে রোনাল্ডো, বেলরা সুযোগ পায়। আবার ট্র্যাক ব্যাক করে ডিফেন্সকে সাহায্য করছে।’’
জিদানের অধীনে তাই তো আক্রমণও হচ্ছে। আবার ডিফেন্সও।
সেরা ফুটবলারের উপর যে কোনও কোচই নির্ভর করেন। কোচের আসল গুণ ধরা পড়ে সেরা ফুটবলার ছাড়া কী করবেন। তাই তো জিদানের আর এক বড় গুণ সব সময় প্ল্যান বি তৈরি রাখা। ‘‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এই মরসুমে রোনাল্ডো অত গোল পাচ্ছে না। অনেক ম্যাচ খেলতেও পারেনি শুরুতে। বেলও চোট পেয়ে বাইরে। রিয়াল ঠিক সামলে নিচ্ছে। ইস্কো, কোভাসিচের মতো তারকাদের দলে রাখছে জিদান। আক্রমণের আউটলেট বাড়াচ্ছে। প্লেয়ার অনুযায়ী ফর্মেশন সাজাচ্ছে। কখনও ৪-৩-৩। কখনও ৪-৫-১। প্ল্যান বি রাখা যাকে বলে,’’ বলছেন সুব্রত।
সবেমাত্র এক বছর হল কোচিং করাচ্ছেন। কোচ জিদানের ভবিষ্যৎ কী কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু একটা জিনিস তো পরিষ্কার—প্লেয়ার জিদানের পায়ের মতো কোচ জিদানের মগজাস্ত্রও ম্যাজিক দেখাতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy