Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রিয়াল আমাকে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলতে দিতে চায়নি, দাবি দি মারিয়ার

অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া বিস্ফোরণটা ঘটাতে নিলেন দেড় মাসের একটু বেশি। ১৩ জুলাইয়ের মারাকানায় নীল-সাদা জার্সিতে তাঁর নামতে না পারা আর্জেন্তিনা ফুটবলের শোকগাথায় চিরকালের মতো ঢুকে পড়েছে। চোট ছিল, দি মারিয়া নামতে পারেননি, কাপটাও নিয়ে যায় ফিলিপ লামের জার্মানি। কিন্তু কেউ জানত, দি’মারিয়ার কাপ ফাইনালে নামা আটকাতে সর্বাত্মক চেষ্টায় নেমে পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ?

সে দিন কোচ সাবেয়ার সঙ্গে দি মারিয়া।

সে দিন কোচ সাবেয়ার সঙ্গে দি মারিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া বিস্ফোরণটা ঘটাতে নিলেন দেড় মাসের একটু বেশি।

১৩ জুলাইয়ের মারাকানায় নীল-সাদা জার্সিতে তাঁর নামতে না পারা আর্জেন্তিনা ফুটবলের শোকগাথায় চিরকালের মতো ঢুকে পড়েছে। চোট ছিল, দি মারিয়া নামতে পারেননি, কাপটাও নিয়ে যায় ফিলিপ লামের জার্মানি।

কিন্তু কেউ জানত, দি’মারিয়ার কাপ ফাইনালে নামা আটকাতে সর্বাত্মক চেষ্টায় নেমে পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ?

কেউ জানত, রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের পাঠানো চিঠি ১৩ জুলাইয়ের সকালে টুকরো-টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন দি’মারিয়া?

কেউ জানত, কাপ ফাইনালের ঘণ্টা কয়েক আগে ওই ঘটনার কারণে অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন দি’মারিয়া?

হলিউড থ্রিলারের চিত্রনাট্য মনে হতে পারে। কিন্তু এটা রুক্ষ বাস্তব। আর্জেন্তিনীয় রেডিও প্রোগ্রামে দি’মারিয়াকে যা পরের পর বলতে শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে ফুটবল বিশ্ব। ক্লাব ফুটবলের দাপটে ফুটবলারদের কাছে এখন দেশ বড় না ক্লাব, সেই বিতর্ক বহু দিন ধরে চলছে। কিন্তু ক্লাবের স্বার্থ যে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফাইনালকেও আক্রমণ করে বসবে, আন্দাজের বাইরে ছিল। কেউ বুঝে পাচ্ছেন না, বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মহান এক মঞ্চ থেকে কী ভাবে ফুটবলারকে সরে দাঁড়াতে বলে তাঁর ক্লাব? কী ভাবে চিঠি পাঠিয়ে দি’মারিয়াকে হুমকি দিয়ে বলা হতে পারে, তুমি নামলে কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রেগে যাবে!

ঠিক কী হয়েছিল ১৩ জুলাই?

রিয়াল প্রেসিডেন্ট পেরেজ।

দি’মারিয়ার কথা ধরলে, তিনি বুঝতে পারছিলেন যে কাপ ফাইনালে নামা তাঁর এমনিই সম্ভব নয়। চোটের যা অবস্থা, তাতে নামলে পাঁচ মিনিটের বেশি টানা যাবে না। কিন্তু সকাল এগারোটা নাগাদ মাদ্রিদ থেকে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের যে চিঠি তাঁর কাছে এসে পৌঁছয়, দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান দি’মারিয়া। যা প্রথমে আর্জেন্তিনা ফুটবল ফেডারেশনকে পাঠিয়েছিলেন গ্রন্দোনা। “আমি তখন পায়ে বরফ ঘষছি। চেষ্টা করছি কোনও ভাবে যদি বিকেল চারটের ফাইনালে নামা যায়, তখন ওই চিঠিটা পাই,” বলতে শোনা গিয়েছে দি মারিয়াকে। পেরেজ নাকি চিঠিতে স্পষ্ট লিখেছিলেন, কোনও ভাবে ফাইনালে নামা যাবে না ওই চোট নিয়ে। চিঠি পেয়ে দি’মারিয়া এতটাই খেপে যান যে, টুকরো-টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেন আর্জেন্তিনা মহাতারকা।

“চিঠিটা দ্বিতীয় বার পড়ার ইচ্ছে আমার হয়নি। দু’বার ভাবিওনি কী করা উচিত। ঠিক করেছিলাম, যা হয় হবে, এটা কিছুতেই আমি মানব না,” বলে দিয়েছেন দি মারিয়া। কিন্তু তার পরেও তো আপনি নামলেন না। আর্জেন্তিনাও কাপ ফাইনাল হেরে গেল। এ বার দি’মারিয়ার উত্তর, “হ্যাঁ, পারিনি নামতে। তবে আমাকে না নামানোর সিদ্ধান্তটা আলেসান্দ্রো সাবেয়া নিয়েছিলেন। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের চিঠি নয়। আমি চাইনি, ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে একজন কম প্লেয়ার নিয়ে খেলুক আর্জেন্তিনা।”

শুধু দি মারিয়া বোমা ফাটালে তা-ও রিয়াল প্রেসিডেন্টের কিছু বলার বোধহয় জায়গা থাকত। বিশ্বকাপের পর রিয়াল বনাম দি মারিয়া নিয়ে কম জলঘোলা তো হয়নি। ক্লাব প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের যত অবনতি হয়েছে, তত ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে দি মারিয়ার। টাকা-পয়সা নিয়ে বিতর্ক চলায় পেরেজ একবার দি’মারিয়াকে নাকি বলেও দেন যে, তুমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো অর্থ চাইছ? আগে ব্যালন ডি’অর-টা জেতো, তার পর দর বাড়াতে এসো! দি’মারিয়া রিয়াল ছেড়ে দেন শেষ পর্যন্ত। ম্যাঞ্চেস্টারে চলে আসেন। এবং তাঁর রিয়াল ছাড়া নিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন স্বয়ং সিআর সেভেন। দি মারিয়াকে রেখে দিতে নিজে উদ্যোগী হয়েছিলেন রোনাল্ডো। কিন্তু কোনও কিছুতেই কাজ না হওয়ায় হতাশ রোনাল্ডো বলে ফেলেন, “দি মারিয়াও চলে গেল। রিয়াল আর ভাল খেলবে কী করে?” তার মধ্যে এই বিতর্ক। আর পেরেজকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়ে দি মারিয়ার সমর্থনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন জুনিয়র গ্রন্দোনাও।

“পেরেজের চিঠি আমরা পেয়েছিলাম। আর্জেন্তিনা ফুটবল ফেডারেশনকেও ও অনুরোধ করেছিল, দি’মারিয়াকে না নামাতে। পরে দি’মারিয়ার সঙ্গে কথা বলে ওটা আমরা ছিঁড়ে ফেলার বন্দোবস্ত করি,” বলে দিয়েছেন জুনিয়র গ্রন্দোনা। তাঁর বক্তব্য, দি মারিয়া নিয়ে তাঁদের উপর মারাত্মক চাপ তৈরি করা হচ্ছিল।

দি মারিয়া নিজে দিনটার কথা কোনও ভাবে মনে করতে চান না। “১৩ জুলাই সকালে আমাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হচ্ছিল। তার পর ওই চিঠি। আমার ফুটবল জীবনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনা যদি কিছু থাকে, তা হল ওই চিঠি। কারণ আমি জানি, আর একটা বিশ্বকাপ ফাইনালে নামা প্রচণ্ড কঠিন,” বলেছেন দি’মারিয়া। কিন্তু কেন ওই চিঠি তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বলে তাঁর মনে হয়? আর্জেন্তিনা ফুটবলারের জবাব, “মনে হয় বিমা সংক্রান্ত ব্যাপারের জন্য।” আর রিয়াল ছাড়া সেটা কি রিয়াল প্রেসিডেন্টের ওই মহাবিতর্কিত চিঠি পাঠানোর পরিণতি?

অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া মানেন না। বরং বলছেন, রিয়ালেই তিনি থাকতে চেয়েছিলেন। বলছেন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মন থেকে চেয়েছিলেন যাতে তিনি থেকে যান।

এবং অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া পাল্টা শোনাচ্ছেন। রিয়ালকে। ঘুরিয়ে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে।

অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার মনে হচ্ছে, রিয়ালের তো তাঁকে বিক্রি করে লাভই হল। যা খরচ করেছিল তাঁকে কিনতে, তার চেয়ে রিয়াল তো অনেক বেশি লাভ করল তাঁকে বিক্রি করে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE