শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটা খারাপ হলেও ভারত কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে দিব্যি নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের আগে বুধবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৭ রানে জয়টা রোহিত শর্মাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশ বাড়িয়ে তুলল।
দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও ভারত যে ফাইনালে উঠছে, এটাই ভারতীয় ক্রিকেটে সবচেয়ে ইতিবাচক খবর। বিরাট কোহালির সেরা দল তো দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েও মাতিয়ে এসেছে। এ বার দেখা যাচ্ছে দেশের বাইরে গিয়ে আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চের ছেলেরাও সাফল্য পাচ্ছে। যাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা খুবই কম, তারাও পরিবেশ, পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সফল হচ্ছে। এর চেয়ে বড় ইতিবাচক দিক আর কী হতে পারে?
বুধবার অবশ্য আরও একটা ভাল খবর বুধবার পাওয়া গেল। ফাইনালের ঠিক আগে রোহিতের রানে ফেরাটা ভারতীয় শিবিরকে অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত করবে বলেই আমার বিশ্বাস। একেবারে সঠিক সময়ে রোহিতের এই ফর্মে ফেরাটাও আমার কাছে কম বড় প্রাপ্তি নয়।
আরও পড়ুন: ১৭ বছর আগের আজকের দিনকে মনে করালেন লক্ষ্মণ
শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে গেলেও এই ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রতিটা ম্যাচে একজন করে নায়ক পেয়েছি আমরা। জয়দেব উনাদকাট, শার্দূল ঠাকুর-রা সুযোগ পেয়ে নিজেদের দারুন ভাবে মেলে ধরেছে। এ বার আমরা পেয়ে গেলাম আরও এক উঠতি তারকাকে। ওয়াশিংটন সুন্দরের কথাই বলছি। তামিলনাড়ুর ১৮ বছরের এই ছেলেটাকে যদিও আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট, আইপিএলের সুবাদে ইতিমধ্যেই চিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও যে ও ত্রাস হয়ে উঠতে পারে, তা বোঝাল বুধবারের ম্যাচে।
নায়ক: অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের দাপটে বেসামাল বাংলাদেশ। বুধবার কলম্বোয়। ছবি:এএফপি
বাংলাদেশের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই আউট করে ওদের কাজটা কঠিন করে দিল ওয়াশিংটন। নিজেরই শহরের তারকা অফস্পিনার আর অশ্বিনকে যে ভবিষ্যতে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চলেছে, তা বোঝাই গেল। অশ্বিন এমনিতেই চাপে রয়েছে। ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাচ্ছে না বলে এ বার লেগস্পিন শুরু করেছে। নাগপুরে ইরানি কাপের টিভি ধারাভাষ্য দিতে এসে দেখছি অশ্বিনের এই মরিয়া লড়াই। সমস্যাটা হল, লেগস্পিনটা ভাল করা যায় স্বাভাবিক ভাবে। একজন অফস্পিনার জোর করে লেগস্পিন করার চেষ্টা করলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইরানির ম্যাচে অশ্বিনের এই ব্যর্থ চেষ্টাই দেখতে হচ্ছে। অফস্পিন করে যার টেস্টে তিনশোর ওপর উইকেট নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তাকে লেগস্পিন করতে হবে কেন? এই করতে গিয়ে না অশ্বিনের অফস্পিনের ক্ষতি হয়। তার ওপর ওয়াশিংটনের মতো প্রতিশ্রুতিমান অফস্পিনার যেখানে ক্রমশ উঠে আসছে, সেখানে অশ্বিনকে আরও সাবধান হতেই হবে।
ওয়াশিংটনের মধ্যে এমন এক অফস্পিনারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, যে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সেরা দলের তুরূপের তাস হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক নতুন অফস্পিনার খুঁজে পাওয়া যেমন ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে একটা ভাল খবর, তেমনই ভাল খবর রোহিত শর্মার রানে ফেরা। গত কয়েকটা ম্যাচে রোহিতের রান না পাওয়াটা চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছিল। বুধবার সেই চিন্তা দূর হল।
পাওয়ার প্লে-তে একটু ভাল খেলে দিতে পারলেই রোহিত ভাল রান পায়। এটাই ওর খেলার বরাবরের অভ্যাস। কিন্তু এত দিন সেটাই করতে পারছিল না ও। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পাওয়ার প্লে-তে আউট হয়ে যাচ্ছিল। এ দিন কিন্তু রোহিত ও নিজের আসল খেলায় ফিরে এসে জাত চিনিয়ে দিল। যার জেরে ৬১ বলে ৮৯ রানের ইনিংসটা খেলতে পারল ও। এই জন্যই তো বলে ফর্ম সাময়িক আর জাত চিরকালীন। ফর্মে ফেরার জন্য রোহিত ব্যাটিং অর্ডারে নেমে আসতেই পারত। কিন্তু তা ও করেনি। সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার এই প্রবণতাই একজন অধিনায়কের সব চেয়ে ভাল দিক।