ফাইনালের পথে সৌরভ। ছবি: রয়টার্স
ইনচিওন এশিয়ান গেমসে নামার আগেই বলেছিলেন তাঁর সামনে সোনা জেতার সেরা সুযোগ এ বার। ঠিক সেটাই করে দেখানোর থেকে এক ধাপ দূরে সৌরভ ঘোষাল।
দোহা আর গুয়াংঝৌ এশিয়াডে ব্রোঞ্জ জয়ী ভারতীয় স্কোয়াশ তারকা সোমবারই নজির গড়লেন পুরুষদের সিঙ্গলসের ফাইনালে উঠে অন্ততপক্ষে রুপো নিশ্চিত করে। এর আগে স্কোয়াশে এশিয়াড দু’টো ব্রোঞ্জ ছিল ভারতের। যা সৌরভই দেশকে দেন ২০০৬ ও ২০১০ এশিয়াডে। এ বার পদকের রং বদলানো নিশ্চিত হয়ে গেল।
ইনচিওন এশিয়াডে শীর্ষবাছাই হলেও সৌরভের পক্ষে কিন্তু ফাইনালে ওঠার কাজটা সোজা ছিল না। সেমিফাইনালে চ্যালেঞ্জ ছিল মালয়েশিয়ার ওং বেং হি-র। যে কি না এশীয় প্লেয়ারদের মধ্যে অন্যতম সেরা ও ২০০২ ও ২০০৬ এশিয়াডে চ্যাম্পিয়নও। কিন্তু সৌরভের আগুনে ফর্মের সামনে তিনি দাঁড়াতেই পারেননি।
২৮ বছরের ভারতীয় তারকা ৪৫ মিনিটেই ১১-৯, ১১-৪, ১১-৫ জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। যেটা সৌরভের কাছে প্রতিশোধের ম্যাচও ছিল। “১০-১২ বছর ধরে ওকে চিনি। তবে পেশাদার সার্কিটে ওং বেংয়ের বিরুদ্ধে খুব বেশি মুখোমুখি হইনি। এক বারই টিম ইভেন্টে হারিয়েছিলাম। দোহা এশিয়াডে ওর কাছেই সেমিফাইনালে ১-৩ হারতে হয়েছিল,” বলে দেন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৬ নম্বরে থাকা সৌরভ।
মেয়েদের মধ্যে বিশ্বের এক নম্বরের কাছে আর এক ভারতীয় তারকা দীপিকা পাল্লিকলের এ দিন হারের দুঃখ কিছুটা হলেও সৌরভের জয়ে কাটল। তবে সেমিফাইনালে হারলেও স্কোয়াশে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জিতলেন দীপিকা।
মঙ্গলবার ফাইনালে সোনা জেতার লড়াইয়ে সৌরভের সামনে বিশ্বের ৪৬ নম্বর কুয়েতের আবদুল্লা আল মুজায়েন। তবে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৩০ ধাপ পিছিয়ে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বীকেও হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না তিনি। “তিন জন ভাল প্লেয়ারকে গত তিন দিনে হারিয়েছি। রবিবার ভিলেজে ফিরে ভাবছিলাম কী ভাবে পরের দিন আরও ভাল খেলা যায়। সেটাই আজ আবার করব। একটা করে ম্যাচ নিয়ে ভেবে এসেছি। সেই পরিকল্পনাটাই ধরে রাখছি,” বলে সঙ্গে সৌরভ আরও যোগ করেন, “সোনা জেতাটা অবশ্যই বিরাট পাওনা তবে আপাতত পদকের থেকেও ম্যাচের উপর বেশি ফোকাস করছি।”
এক সময় বিশ্ব স্কোয়াশে দাপট দেখানো পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জও ফাইনালে উঠতে সামলাতে হয় সৌরভকে। বিশ্বের ৪২ নম্বর নাসির ইকবালকে ৩-১ হারিয়েই শেষ চারে ওং বেংয়ের মুখোমুখি হ০ন।
প্রায় পাঁচ দশক স্কোয়াশে পাকিস্তানের আধিপত্য দেখেছে বিশ্ব, ৩০টা ব্রিটিশ ওপেন আর ১৪টা বিশ্ব ওপেন খেতাবে। তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে আশি ও নব্বইয়ের দশক। যে সময়ে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতেন জাহাঙ্গির খান, জনশের খানের মতো কিংবদন্তিরা। প্রায় পাঁচ বছর অপরাজিত থাকার নজির গড়া (৫৫৫টা টানা ম্যাচ জেতার রেকর্ড) ছ’বার বিশ্ব ওপেন আর ১০ বার ব্রিটিশ ওপেন জয়ী জাহাঙ্গিরের দেশের দাপট যদিও এখন আর নেই। এ বারের এশিয়াডে পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদের ইভেন্টেও পাকিস্তানের কেউ কোয়ার্টার ফাইনাল টপকাতে পারেননি। এশীয় শক্তি হিসেবে বরং উঠে আসছে ভারত।
সৌরভ মনে করেন ভারতীয় স্কোয়াশের এখন স্বর্ণযুগ। “কমনওয়েলথ গেমসে দীপিকা-জ্যোৎস্নার সোনা ভারতে মেয়েদের স্কোয়াশে বিরাট অনুপ্রেরণা দেবে। এশিয়াডের স্কোয়াশে কোনও ভারতীয় মেয়ের প্রথম পদকও দেখল বিশ্ব।’’ কলকাতা র্যাকেট ক্লাবে স্কোয়াশে হাতেখড়ি। আন্তর্জাতিক সার্কিটে ভারতের সাফল্যকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা সৌরভের উত্থানের রহস্য? ১৫-১৮ বছর বয়েসে চেন্নাইয়ের স্কোয়াশ অ্যাকাডেমির অবদান তো আছেই, তার সঙ্গে ইংল্যান্ডে প্রাক্তন বিশ্বসেরা জেমস উইলস্ট্রপের বাবা ম্যালকম উইলস্ট্রপের প্রশিক্ষণকেও কৃতিত্ব দেন সৌরভ। বলেন, “আজ আমি যা কিছু তার পিছনে সব অবদান ম্যালকমের। পেশাদার সার্কিটে হোক বা বাইরে ম্যালকমই আমার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু।”
চব্বিশ ঘণ্টা পরই ঠিক হয়ে যাবে দেশকে তিনি স্কোয়াশে প্রথম সোনা দিতে পারবেন কিনা। সৌরভের স্বপ্ন কিন্তু শুধু এখানেই থেমে নেই। পুরুষদের দলগত বিশ্ব খেতাব আর এশিয়ান গেমসের দলগত সোনা দেশকে এনে দিতে চান তিনি।
শ্যুটিংয়ে প্রাপ্তি ব্রোঞ্জ ও বিতর্ক
সংবাদ সংস্থা • ইনচিওন
ব্রোঞ্জ জয়ী চার কন্যা রাহি, আনিসা, হিনা ও দীপিকা। ছবি: রয়টার্স
এশিয়ান গেমসে শ্যুটিং থেকে আরও একটি ব্রোঞ্জ পদক জয়ের দিনই ফের ইনচিওনে ঝামেলায় পড়লেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। ২৫ মিটার পিস্তল ইভেন্টে রাহি সর্নোবত (৫৮০), আনিসা সইদ (৫৭৭) ও হিনা সিধুঁ মোট ১,৭২৯ স্কোর করে ব্রোঞ্জ জেতেন সোমবার। সোনা পায় দক্ষিণ কোরিয়া (১,৭৪৮) ও রুপো জেতে চিন (১,৭৪৭)। এই নিয়ে এ বারের এশিয়াডে শ্যুটিং থেকে চতুর্থ পদক জিতল ভারত। এ দিন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যায় দেশে ফেরার নির্দিষ্ট বিমান ধরতে দেওয়া হল না ছ’জন ভারতীয় শ্যুটারকে। যার মধ্যে এশিয়াডে ব্রোঞ্জজয়ী শ্বেতা চৌধুরীও ছিলেন। তাঁদের কোরিয়ান শুল্ক বিভাগ আটকে দেয়। ভারতের শেফ দ্য মিশন আদিল সুমারিওয়ালা বলেন, “সকাল দশটায় ছ’জন শ্যুটারের বিমান ধরার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের বন্দুকের নম্বর শুল্ক দফতরের কাছে থাকা ফর্মের সঙ্গে মেলেনি। ক’য়েক জনের কাছে ছুরি, স্ক্রু ড্রাইভার, লাইটার ইত্যাদি পাওয়া যায়। তাই বিমান ধরতে তাদের দেরি হয়েছে। পরে অবশ্য ব্যাপারটা মিটে গেলে শ্যুটাররা বিকেলের বিমানে দেশে রওনা দেয়।” অভিযোগের আঙুল জাতীয় শ্যুটিং সংস্থার উপর উঠলেও এনআরএআই সচিব রাজীব ভাটিয়া বলেন, “শ্যুটারদের সঙ্গে লাইটার, স্ক্রু ড্রাইভার থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। বন্দুকের ছোটখাটো মেরামতিতে এগুলো লাগে। এগুলো সঙ্গে রাখতে অনুমতিপত্র শ্যুটারদেরই নিতে হয়। এনআরএআই-কে নয়।”
এশিয়াড থেকে অবসর বিন্দ্রার
সংবাদ সংস্থা • ইনচিওন
অলিম্পিকে ভারতের এক মাত্র সোনাজয়ী শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রা অবসর নিচ্ছেন। সোমবার বিন্দ্রা টুইট করেন, “মঙ্গলবার আমার পেশাদার শ্যুটিং জীবনের শেষ দিন।” এ দিনই বিন্দ্রা নিজের প্রিয় ১০মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে নামবেন। যে ইভেন্টে তিনি অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন। কিন্তু নিজেই কেরিয়ারে দাঁড়ি টানার কথা বললেও বেজিং অলিম্পিকে সোনাজয়ীর পরবর্তী টুইট নিয়ে ধোঁয়াশা ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে তিনি লিখেছেন, “তবে এর পরও আমি শখের শ্যুটার হিসেবে শ্যুটিং আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাব। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন প্র্যাকটিসও।” পাশাপাশি বিন্দ্রা রিও অলিম্পিকে নামার ইচ্ছের কথা জানান। বলে দেন, “আর হ্যাঁ চেষ্টা করব রিও অলিম্পিকে থাকার, ফিটনেসের দিক থেকেও একেবারে সঠিক জায়গায় আছি। আমি নিশ্চিত আরও পারফরম্যান্স বাকি রয়েছে।”
এক নজরে সোমবার
• শ্যুটিং: ২৫ মিটার পিস্তলে মেয়েদের ব্রোঞ্জ।
• স্কোয়াশ: দীপিকা পাল্লিকলের ব্রোঞ্জ। সৌরভ ঘোষাল সিঙ্গলস ফাইনালে।
• উশু: নরেন্দর গ্রেওয়াল ও ইয়ামনাম সানাথই দেবী পুরুষ ও মেয়েদের কোয়ার্টার ফাইনালে।
• হকি: তাইল্যান্ডকে ৩-০ হারাল মেয়েরা।
• ফুটবল: জর্ডনের কাছে ০-২ হার। বাস্কেটবল: ৮০-৬১ কাজাখস্তানকে হারাল ছেলেরা।
• টেনিস: ছেলে ও মেয়েদের টিম কোয়ার্টার ফাইনালে একই ভাবে ১-২ হারল কাজাখস্তানের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy