Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

নির্বাসিত ফিফার একনায়ক

এক জনের স্বপ্ন ছিল ফিফা প্রেসিডেন্টের চেয়ার। এক জন চেয়েছিলেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে সরে যেতে। দু’জনের কারও ইচ্ছাই পূর্ণ হল না। উল্টে সোমবারের জুরিখ হয়ে থাকল ফুটবলের আর এক কালো অধ্যায়। এক সঙ্গে ফিফার বর্তমান এবং ভবিষ্যত্ চলে গেল বিতর্কের অন্ধকারে। ফিফা এথিকস কমিটির সিদ্ধান্তে বেআইনি টাকা লেনদেনের দায়ে আট বছর নির্বাসিত হলেন সেপ ব্লাটার ও মিশেল প্লাতিনি।

হাতে হাত মিলিয়ে ডুবলেন।

হাতে হাত মিলিয়ে ডুবলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫২
Share: Save:

এক জনের স্বপ্ন ছিল ফিফা প্রেসিডেন্টের চেয়ার।

এক জন চেয়েছিলেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে সরে যেতে।

দু’জনের কারও ইচ্ছাই পূর্ণ হল না। উল্টে সোমবারের জুরিখ হয়ে থাকল ফুটবলের আর এক কালো অধ্যায়। এক সঙ্গে ফিফার বর্তমান এবং ভবিষ্যত্ চলে গেল বিতর্কের অন্ধকারে। ফিফা এথিকস কমিটির সিদ্ধান্তে বেআইনি টাকা লেনদেনের দায়ে আট বছর নির্বাসিত হলেন সেপ ব্লাটার ও মিশেল প্লাতিনি।

শুক্রবার শেষ বারের জন্য শুনানিতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেছিলেন ব্লাটার। কিছু দিন আগেও কোর্ট অব আর্বিট্রেশনে আবেদন জানিয়েছিলেন প্লাতিনি। শেষরক্ষা হল না কারও। খুব বেশি সময় না নিয়ে ফিফা এথিকস কমিটি জানিয়ে দিল ব্লাটারের থেকে নেওয়া ১৩ লক্ষ পাউন্ডের কোনও লিখিত হিসেব নেই। ফিফার নীতির বিরুদ্ধে এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল। আর তাতেই অবসান ঘটল ফুটবলের দুই শক্তিশালী চরিত্রের।

তবে ব্লাটার এবং প্লাতিনি— দু’জনের কেউই লড়াই ছাড়ছেন না। ব্লাটার জানিয়েছেন, তিনি কোর্ট অব আরবিট্রেশনে যাচ্ছেন। উয়েফা থেকেও বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, প্লাতিনিও এই শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন করবেন।

কিন্তু ঘটনা হল, এই লড়াই আদৌ সফল হবে কি না, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকছে, তেমনই প্রশ্ন থাকছে, উয়েফার ভবিষ্যৎ কী হবে? ফিফার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে যাবে আর কয়েক মাসের মধ্যে। যেখানে লড়াইয়ে ছিলেন প্লাতিনিও। কিন্তু উয়েফার ভাগ্য ঝুলে থাকছে। ছ’ মাস পরেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট ইউরো শুরু হচ্ছে। যে টুর্নামেন্ট নিজের দেশে নিয়ে এসেছিলেন প্লাতিনি। কিন্তু প্লাতিনির শাস্তির পর এখন প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি উয়েফা প্রেসিডেন্ট ছাড়াই ইউরো হয়ে যাবে? নাকি চট জলদি নতুন কোনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে?

এত কাণ্ডের পরেও অবশ্য ব্লাটার দমছেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়ে এ দিন পাল্টা তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো পাঞ্চিং ব্যাগ হয়ে গিয়েছি।’’ এর পরই ব্লাটারের বক্তব্য, ‘‘আমার পরে ফিফায় এখনও নতুন প্রেসিডেন্ট কেউ হয়নি। তাই এথিকস কমিটি আমার বিরুদ্ধে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফিফার মধ্যে কেউ বুঝতেই পারছে না কেন আমাকে শাস্তি দেওয়া হল। আমি ঠিক ফিরে আসব।’’

কোন লেনদেনের জেরে শাস্তি পেতে হল এই দু’জনকে? ঘটনার সূত্রপাত ২০১১-তে। তখন মহম্মদ বিন হামামের ভয়ে রাতে ঘুম উড়ে গিয়েছিল ব্লাটারের। চেয়ার হারানোর আতঙ্কে নতুন স্ট্র্যাটেজি ছকতে শুরু করেন তিনি। নির্বাচন হওয়ার কিছু মাস আগে পর্যন্ত হামাম শিবিরের অন্যতম সৈনিক ছিলেন প্লাতিনি।

ঠিক সেই সময়েই প্লাতিনিকে ১৩ লক্ষ পাউন্ডের একটা বড় রকমের অঙ্ক দেন ব্লাটার। এর পরে রহস্যজনক ভাবে হামাম ক্যাম্প ছেড়ে ফের ব্লাটারকে সমর্থন করেন প্লাতিনি। শুধু তাই নয়, হামামও প্রেসিডেন্টের লড়াই থেকে নাম তুলে নেন। হামামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, প্লাতিনি ওই বিশাল অঙ্কের অর্থ নেওয়ার পরই কেন হামাম লড়াই থেকে সরে গেলেন।

ফিফা এথিকস কমিটি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দু’জনকে শাস্তি দিয়ে বলেছেন, ‘‘এটা যে ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল, তার কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। কিন্তু এই ভাবে অর্থ লেনদেন করাটা সম্পূর্ণ ফিফার নীতির বিরুদ্ধে। আর ব্লাটারও প্রমাণ করতে পারেননি ফিফার নিয়ম অনুযায়ী এই লেনদেন হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE