Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশিরভেজা রাতে ক্যাপ্টেন কুলের ভুল ঢাকলেন শামি-জাডেজা

বদলা ও বদল, দুইই পেল কোটলা। বিকেলে বিরাট কোহলির ৬২। রাতে ভারতের নাটকীয় ৪৮ রানে জয়। বিকেলে কোহলির ব্যাটে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়ার পর শেষ রাতে শিশির ভেজা কোটলায় ভারতীয় বোলারদের বদলার আগুন জ্বালাতে দেখা। বেশ তৃপ্তি সহকারেই ঘরে ফিরলেন দিল্লিবাসী। সূর্যাস্তের আগে যদি তাঁদের মন ভরিয়ে থাকেন ঘরের ছেলে বিরাট, সূর্যাস্তের পর তা করলেন মহম্মদ শামি। ম্যাচের সেরার পুরস্কারটাও তাই তাঁরই হাতে উঠল। জাডেজা, মিশ্রদের সঙ্গতও পেলেন দারুণ।

বদলার তৃপ্তি। কোটলা যুদ্ধ জিতে ভারতীয় অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। ছবি: পিটিআই

বদলার তৃপ্তি। কোটলা যুদ্ধ জিতে ভারতীয় অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। ছবি: পিটিআই

রাজীব ঘোষ
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

বদলা ও বদল, দুইই পেল কোটলা।

বিকেলে বিরাট কোহলির ৬২।

রাতে ভারতের নাটকীয় ৪৮ রানে জয়।

বিকেলে কোহলির ব্যাটে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়ার পর শেষ রাতে শিশির ভেজা কোটলায় ভারতীয় বোলারদের বদলার আগুন জ্বালাতে দেখা। বেশ তৃপ্তি সহকারেই ঘরে ফিরলেন দিল্লিবাসী। সূর্যাস্তের আগে যদি তাঁদের মন ভরিয়ে থাকেন ঘরের ছেলে বিরাট, সূর্যাস্তের পর তা করলেন মহম্মদ শামি। ম্যাচের সেরার পুরস্কারটাও তাই তাঁরই হাতে উঠল। জাডেজা, মিশ্রদের সঙ্গতও পেলেন দারুণ। তাতেই কাত ক্যারিবিয়ান দস্যুরা। কোচিতে যা করেছিলেন ব্র্যাভোরা, তাতে তাঁদের দস্যুই মনে হয়েছিল বটে। কিন্তু এ দিন সেই ক্যারিবিয়ানদেরই দস্যুবৃত্তি ঘুচিয়ে দিলেন শামিরা।

শনিবার ফিরোজ শাহ কোটলায় অবশ্য ডোয়েন স্মিথ, কায়রন পোলার্ডরা শুরুতে ধোনিদের বেগ দেওয়ারই উপক্রম করেছিলেন নিজেদের ১৭০-২ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে। সেখান থেকে ২১৫-য় শেষ তাঁরা। রাত গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশিরে ভেজা বল গ্রিপ করতে বেশ অসুবিধায় পড়তে দেখা যায় ভারতীয় বোলারদের। তবু স্মিথের স্টাম্প ছিটকে দিয়ে যে লক গেট খুলে দিলেন মহম্মদ শামি, তার পরই ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ে ধস নামা শুরু এবং ৪৮ রানে বদলার জয়। একে ধোনির ভাগ্য বলবেন, না ভারতীয় বোলারদের ক্যারিশমা, তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।

রাতে কোটলায় ভরপুর শিশির। দুই ইনিংসের মাঝে বিরতিতে মোটা দড়ি, ধোঁয়াধার স্প্রে ও জোড়া সুপার সপার চালিয়ে মাঠ শুকোতে হচ্ছিল। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কেন তা আগে থেকে জানতেন না, কে জানে? রাতে বোলারদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হবে জেনেও কেন টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন, এটাই ছিল শনিবাসরীয় কোটলায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাতে ভারতের জয়ের পর অবশ্য এই প্রশ্নগুলো কর্পূরের মতো উধাও হয়ে গেল।

কোটলার প্রেস বক্সের পাশেই টিভি বক্সে এক ঝাঁক প্রাক্তন তারকা। তাঁদের কাছে এই প্রশ্ন রাখতে কেউ কাঁধ ঝাঁকালেন, কেউ বা বললেন, “ম্যাচের পর বরং এটা ধোনিকে জিজ্ঞাসা করবেন। ও ভাল বলতে পারবে।” বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ধারাভাষ্যকার বলেই কি ধোনির সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলতে পারবেন না কেউ?

টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ধোনি বলেছিলেন, “পিচে হাল্কা ঘাসের আস্তরন দেখে মনে হচ্ছে পিচে ক্যারি থাকবে।” কিন্তু আদতে তা হল কোথায়? ভারত বাঁধা পড়ল ২৬৩-তে। ম্যাচের পর ক্যাপ্টেন বললেন, “২৬৩ তোলার পক্ষে বেশ কঠিন উইকেট। কুড়ি রান কমই তুলেছিলাম। বোলাররা বাঁচিয়ে দিল। ম্যাচটায় হারতেও পারতাম আমরা। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারিনি। বেশ কিছু গলদ এখনও রয়ে গিয়েছে। সেগুলো শোধরাতে হবে।”


চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক শামি। ছবি: বিসিসিআই

কামব্যাকের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বিরাট কোহলি ৬২-র ইনিংস খেললেও খোলস ছেড়ে বেরতে পারলেন না। অতি সাবধানী তাঁর ৭৮ বলের ইনিংস। যেখানে মাত্র পাঁচটি বাউন্ডারি। আর যাই হোক আগ্রাসী বিরাট কোহলিসুলভ নয়। মাঠে নামার আগে টিভিতে বলছিলেন, “টেকনিক নিয়ে বেশি মাথা খারাপ করে লাভ নেই। মানসিক ভাবে স্থির থাকলে টেকনিক আপনিই ঠিক থাকবে। এ রকম খারাপ সময় সব ক্রিকেটারের জীবনেই আসে। সেটা মেনে নিতেই হয়। আমিও নিয়েছি। জানি যথা সময় আগের জায়গায় ফিরে আসব।” এ দিন তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হল, তিনি ফেরার পথে অনেকটাই এগিয়ে এসেছেন। হয়তো আর একটু রাস্তা বাকি।

ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সার্বিক অবস্থাটাই এ রকম। এই যে এ দিন চতুর্থ উইকেটে রায়না ও কোহলি ১০৫-এর পার্টনারশিপ গড়লেন, তা এল দু’বছর দু’মাস পর। পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ান ডে-তে ভারতের চতুর্থ উইকেট জুটি শেষ একশোর উপর তুলেছিল সেই ২০১২-র অগস্টে। যে দিন গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে ১১০-এর পার্টনারশিপ গড়েছিলেন মনোজ তিওয়ারি। শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে। সে বছরই হোবার্টে রায়না-কোহলির ১২০-র অপরাজিত পার্টনারশিপ হয়তো অনেকের মনে আছে। তবে তার তুলনায় এ দিনেরটা একটু ম্যাড়মেড়ে। কারণ উইকেট। না আছে গতি, না বাউন্স। কোহলি, রায়নাদের পারফরম্যান্স নিয়ে ধোনি বললেন, “বিরাটের আজকের ইনিংসটা ওকে পরের ম্যাচগুলোতে নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। যতই হোক ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। রায়না তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকেই ভাল খেলছে। তবে ওরা যে রকম শুরু করল, এই শুরুটাকে বড় ইনিংসে পরিণত করতে হবে।” এই পার্টনারশিপটার জন্যই ভারত দুশোর গণ্ডি পেরতে পারল। দলকে আড়াইশোর গণ্ডি পার করিয়ে দিল ধোনির ৪০ বলে ৫১। বাকিদের সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল।

শেষ রাতে বোলাররা তত্‌পর না হলে কোচির মতোই কোটলাতেও কপালে দুঃখ ছিল। তাই ধোনির মুখে শামিদের প্রশংসা। বললেন, “শামি সত্যিই খুব ভাল বল করেছে। রিভার্স সুইংও করিয়েছে। কতগুলো ব্রেক থ্রু-ও দিল। মিশ্রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। বল ভিজে গেলে জাডেজা বেশি ফ্লাইট দিতে পারে না। কিন্তু মিশ্র পারে বলেই ওকে বেশি ব্যবহার করলাম।”

ভারত

রাহানে ক ব্র্যাভো বো স্যামি ১২
ধবন বো টেলর ১
রায়ডু ক স্যামি বো বেন ৩২
কোহলি ক স্যামুয়েলস বো রামপল ৬২
রায়না ক পোলার্ড বো টেলর ৬২
ধোনি ন.আ ৫১
জাডেজা বো টেলর ৬
ভুবনেশ্বর ক পোলার্ড বো ব্র্যাভো ১৮
শামি ন.আ ১
অতিরিক্ত ১৮
৫০ ওভারে মোট ২৬৩-৭
পতন: ৪, ৫০, ৭৪, ১৭৯, ১৯৬, ২১৯, ২৪৮
বোলিং: রামপল ৮-০-৪৭-১, টেলর ১০-০-৫৪-৩, বেন ১০-০-৪৭-১, ব্র্যাভো ৮-০-৫১-১, স্যামি ৪-০-১৪-১, স্যামুয়েলস ৫-১-২১-০, রাসেল ৩-০-১৪-০, পোলার্ড ২-০-১০-০।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

স্মিথ বো শামি ৯৭
ডারেন ব্র্যাভো বো শামি ২৬
পোলার্ড বো মিশ্র ৪০
স্যামুয়েলস ক কোহলি বো উমেশ ১৬
রামদিন ক রায়না বো মিশ্র ৩
ব্র্যাভো ক ধবন বো শামি ১০
রাসেল স্টা: ধোনি বো জাডেজা ৪
স্যামি বো জাডেজা ১
রামপল ক ও বো শামি ১৬
টেলর ক ভুবনেশ্বর বো জাডেজা ০
বেন ন.আ ০
অতিরিক্ত
৪৬.৩ ওভারে মোট ২১৫
পতন: ৬৪, ১৩৬, ১৭০, ১৮৩, ১৮৯, ১৯৫, ১৯৯, ১৯৯, ২০১।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৭-০-৩২-০, উমেশ ৯-০-৪২-১, শামি ৯.৩-০-৩৬-৪, জাডেজা ৯-০-৪৪-৩, মিশ্র ১০-২-৪০-২, কোহলি ২-০-২০-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE