Advertisement
E-Paper

‘বাতিল’ ওডাফার ১৭ মিনিটের ঝড়ে ছারখার বাগান

এক বছরও হয়নি এক প্রকৃত ম্যাচ উইনারকে ‘বুড়ো ঘোড়া’ বলে ছাঁটাই করে দিয়েছিল মোহনবাগান। ঠিক যেমন সত্তরের দশকের গোড়ায় ‘খোঁড়া’ বলে সুভাষ ভৌমিককে তাড়ানো হয়েছিল বাগান থেকে। ‘ভোম্বল’ দেখিয়েছিলেন, তিনি-ই ঠিক করবেন, তাঁর কেরিয়ারের শুরু আর শেষ। শনিবার ওডাফা ওকোলি যেন সেই অতীত স্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনলেন টাইম মেশিনে। পাঁচ দশক পরেও যে স্মৃতি সবুজ-মেরুনের কাছে দুঃস্বপ্নই! দু’হাত আকাশের দিকে ছুড়ে গ্যালারির দিকে উর্ধ্বশ্বাস দৌড়। চোখ বন্ধ। মুখে যিশুর প্রার্থনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০৩:২৬
জোড়া গোলে জবাব।

জোড়া গোলে জবাব।

স্পোর্টিং ক্লুব-২(ওডাফা-২) : মোহনবাগান-১(কাতসুমি)

এক বছরও হয়নি এক প্রকৃত ম্যাচ উইনারকে ‘বুড়ো ঘোড়া’ বলে ছাঁটাই করে দিয়েছিল মোহনবাগান। ঠিক যেমন সত্তরের দশকের গোড়ায় ‘খোঁড়া’ বলে সুভাষ ভৌমিককে তাড়ানো হয়েছিল বাগান থেকে।
‘ভোম্বল’ দেখিয়েছিলেন, তিনি-ই ঠিক করবেন, তাঁর কেরিয়ারের শুরু আর শেষ। শনিবার ওডাফা ওকোলি যেন সেই অতীত স্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনলেন টাইম মেশিনে। পাঁচ দশক পরেও যে স্মৃতি সবুজ-মেরুনের কাছে দুঃস্বপ্নই!
দু’হাত আকাশের দিকে ছুড়ে গ্যালারির দিকে উর্ধ্বশ্বাস দৌড়। চোখ বন্ধ। মুখে যিশুর প্রার্থনা। গত বছরের খুব পরিচিত একটা দৃশ্য কলকাতা ময়দানে। আর একটু সহজ করলে— খুব পরিচিত ছবি মোহনবাগানের।
বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বিকট চিৎকার। চোখে আগুন, মুখে প্রবল সন্তুষ্টির ছায়া। আবার খুব পরিচিত দৃশ্য কলকাতা ময়দানে। পরিচিত ছবি বাগানেরও।
দুটোই গোল-পরবর্তী ওডাফা! তফাতের মধ্যে এ দিন অভিব্যক্তি দু’টো সবুজ-মেরুন জার্সিতে গোল করে নয়, সবুজ-মেরুন জালে বল ঢুকিয়ে! সবুজ-মেরুন তাঁকে ‘সেকেলে’ বন্দি করে রেখে দিতে চাইলে কী হবে, ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাস থেকে ওডাফাকে মুছে ফেলা যাবে না, সেটা দেখিয়ে দিলেন নাইজিরিয়ান গোলমেশিন।

যদিও পাক্কা পেশাদারের মতো ফোনে ওডাফা বলে দিলেন, ‘‘মোহনবাগানের উপর আমার কোনও অভিমান, বিদ্বেষ নেই। আমি গোল করেছি আমার বর্তমান দলকে অবনমন থেকে বাঁচাতে। এখনও মনে করি, বাগান আই লিগ জিততে পারে।’’

কিন্তু শনিবার মারগাওয়ে সঞ্জয় সেনের বাগানের বুকে এমন সপাটে হাতুড়ি কষালেন ওডাফা যে, প্রবল অনিশ্চয়তার আড়ালে ঢুকে পড়ল বাগানের আই লিগ জয়ের স্বপ্ন! তাঁর জোড়া গোলের ধাক্কায় জোড়া বিস্ফোরণ বাগানে। লিগ টেবলে প্রথমবার বেঙ্গালুরু এফসি-র (৩২) সঙ্গে পয়েন্ট সমান। এক ম্যাচ কম খেলার সুবিধেও শেষ (১৭)। এখন শেষের তিন ম্যাচে (রয়্যাল ওয়াহিংডো, স্পোর্টিং ক্লুব, বেঙ্গালুরু) বাগানের লিগ জয়ের অঙ্ক পড়ে থাকল হয়তো কেবল কাগজে-কলমে!

যদিও বাগান কোচ তা মানতে নারাজ। ম্যাচে শেষে মারগাও থেকে ফোনে সঞ্জয়ের মন্তব্য, ‘‘কাজটা খুব কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ম্যাচটা বাদ দিলাম। কিন্তু এখনও যদি পরের দু’টো হোম ম্যাচ জিততে পারি, তা হলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন। মিলিয়ে নেবে শেষে।’’

মুখে যতটা সহজে বললেন সঞ্জয়, মাঠে কি ততটা মসৃণ হবে? অন্তত শনিবারের ম্যাচে সনিদের খেলা দেখে সেই ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। স্ট্রাইকারদের বদান্যতায় প্রবল চাপ বাড়ছে ডিফেন্ডারদের উপর। লিগের সবচেয়ে নীচে থাকা টিমের বিরুদ্ধে তিন-চারটে সিটার নষ্ট হল। দিনের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা হাতছাড়া করলেন টিমের গেমমেকার বোয়া-ই। স্পোর্টিং বক্সে সনির সাজানো বল সোজা তুলে দিলেন বিপক্ষ গোলকিপারের হাতে।

আসলে এ দিনের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিলেন একা ওডাফাই। সত্তর মিনিটে জাগলেন। পরের সতেরো মিনিট ঝড় তুললেন। আর তাতেই বাগান ছারখার। যে ওডাফাকে কিনা প্রথমার্ধে প্রায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, সে-ই স্ট্রাইকারকে শেষের মিনিট কুড়ি কাল-ঘাম ঝরিয়েও ধরে রাখতে পারলেন না প্রীতম-আনোয়াররা। বিশেষ করে ওডাফার দ্বিতীয় গোলটা তো ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। টিভিতে ম্যাচ দেখে উঠে সুভাষ ভৌমিকও বলে দিলেন, ‘‘এ রকম গোল রোনাল্ডিনহোকে একবার করতে দেখেছিলাম।’’ চার বাগান ডিফেন্ডারকে মাঠে মূর্তি বানিয়ে সূক্ষ্ম প্লেসমেন্টে গোল। বাগান বাতিল সুভাষের তার পরে সবুজ-মেরুনকে বহু বার ঠিক এ ভাবেই কাঁদানোর কথা কি এ দিন মনে পড়েছে?

ওডাফার কাছে হারের ব্যাখ্যা বাগান কোচ সঞ্জয় দিলেন, ‘‘বোর্ডে এঁকে ছেলেদের কতবার বুঝিয়েছি, ওডাফাকে কী ভাবে আটকাতে হবে। কিন্তু দু’টো ভুলে সব শেষ হয়ে গেল। একটা স্ট্রাইকার দু’টো পোস্টেই গোল পেল। এতেই বোঝা যায় আমাদের ডিফেন্স কতটা ব্যর্থ।’’ সঞ্জয় নাকি ড্রেসিংরুমে ফিরে বেলো-আনোয়ারদের ধমকেছেন, স্পোর্টিং যে ভাবে বুক চিতিয়ে ওদের ডিফেন্স আগলে রাখল, সেই ভাবে খেলতে না পারলে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা ছেড়ে দাও।

তবে শুধুই কী ডিফেন্স? বাগান স্ট্রাইকাররাও বোধহয় সহজে পার পাবেন না। বলবন্ত, জেজে, বোয়া, সনি— বিপক্ষ গোলের ধারে-কাছে পৌঁছচ্ছেন না। সনি তাও দু’একটা ভাল পাস বাড়াচ্ছেন, কিন্তু বেশির ভাগ সময় সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ তাঁর সতীর্থরা। এ দিনও বাগানের একমাত্র গোলে সনির অবদানই বেশি। ফোনে বিরক্ত সনি বললেন, ‘‘এত সুযোগ নষ্ট হলে জেতা খুব কঠিন। আমরা নিজেরাই অন্য দলগুলোকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি।’’

Sporting Clube de Goa Jawaharlal Nehru stadium Mohun Bagan odafa football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy