Advertisement
০৪ মে ২০২৪

টাকা নেওয়া বন্ধ করল রাজ্য টিটি

টাকা দিলেই বাংলা দলে খেলার সুযোগ পাওয়া যায়, আনন্দবাজারে এই কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হওয়ার জেরে বিপর্যস্ত রাজ্য টেবল টেনিস সংস্থা আপাতত টাকা নেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

টাকা দিলেই বাংলা দলে খেলার সুযোগ পাওয়া যায়, আনন্দবাজারে এই কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হওয়ার জেরে বিপর্যস্ত রাজ্য টেবল টেনিস সংস্থা আপাতত টাকা নেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল।

শিলিগুড়িতে জাতীয় ক্যাডেট ও সাব জুনিয়র টিটিতে খেলার জন্য যে নয় থেকে বারো নম্বর খেলোয়াড়দের বাছা হয়েছিল, তাদের জন্য ডোনেশন ধার্য করা হয়েছিল পাঁচ হাজার টাকা করে। চারটে গ্রুপের যে ষোলো জন খেলোয়াড়ের জন্য এই নির্দেশ ছিল তাঁদের মধ্যে তিন জনের টাকা বৃহস্পতিবার জমা দিতে গিয়েছিলেন দুই জেলা কর্তা। কিন্তু রাজ্য টিটি সচিবের অফিসের এক কর্মী সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেন। জেলা কর্তাদের বলে দেন, ‘‘সচিব আমাকে এখন টাকা নিতে বারণ করেছেন।’’

এ দিকে শাস্তি বা বাদ পড়ার ভয়ে এত দিন মুখ বুজে থাকা জেলা কর্তারা কী ভাবে নিয়মিত বাচ্চা বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নামে তাদের বাবা-মায়ের থেকে রাজ্য কর্তারা ডোনেশন নিতেন তার কথা ফোন করে সংবাদপত্র অফিসে জানাতে শুরু করেছেন। যেমন এ দিন প্রকাশ্যে এসেছে গত বছর সাব জুনিয়র জাতীয় টিটিতে বালিকাদের টিমে সুযোগ করে দিয়ে দীপান্বিতা বসুর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল দশ হাজার টাকা। আবার গত বার সিনিয়র দলে প্রথম বারোর মধ্যে যাঁদের ঢোকানো হয়েছিল সেই তমোজিৎ নাথ এবং সৌরভ ঘোষের র‌্যাঙ্কিং তখন ছিল যথাক্রমে ২৬ এবং ৩২। অন্যদের টপকে বাংলার জার্সি পরার জন্য দু’জনকে নাকি দিতে হয়েছিল কুড়ি এবং দশ হাজার টাকা ডোনেশন। উত্তর কলকাতা এবং হুগলির কর্তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে নেওয়া ডোনেশনের সব টাকা তাঁরা চেকে জমা দেননি। ক্যাশেও দিয়েছেন। তার রসিদও পেয়েছেন।

রাজ্য সংস্থার সচিব দেবীপ্রসাদ বসু দাবি করেছিলেন, বাংলা দলে সুযোগ পাইয়ে দিয়ে কারও কাছ থেকে রাজ্য সংস্থা টাকা নেয়নি। ভালবেসে কেউ কেউ হয়তো টাকা দিয়েছেন। সচিবের এই দাবি মানতে নারাজ জেলা কর্তাদের একাংশ এবং প্রাক্তন খেলোয়াড়রা। তাঁদের দাবি, কোন কোন খেলোয়াড় বা তাঁদের অভিভাবকরা ‘ভালবাসার টাকা’ দিয়েছেন, সেটা সামনে আনা হোক। দেখানো হোক রসিদের অফিস কপি। কত টাকা চেকে জমা পড়েছে এবং কারা দিয়েছে তা জানাতে ব্যাঙ্কের কাগজপত্র প্রকাশ্যে এনে সচিব প্রমাণ করুন, বাংলা দলে সুযোগ পাইয়ে দিয়ে টাকা নেননি।

এ দিকে রাজ্য টিটির দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আসার পর তা ধামাচাপা দিতে তৎপর কর্তারা। এ দিন রাজ্য সংস্থার নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ‘সাজানো খবর’-এর প্রতিবাদে তাঁরা জমায়েত ডেকেছেন সচিবের বন্ডেল রোডের অফিসের সামনে। সেখানে শনিবার দুপুর সাড়ে তিনটেয় সংস্থার সব কর্তা, বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্পের ছাত্র-ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের শামিল করানোর চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, বিদ্রোহী কোচ বা খেলোয়াড়দের ফোন করে নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে ওই সভায় আসার জন্য।

এক সময় যে খেলা থেকে জাতীয় স্তরে পদকের পর পদক আসত বাংলায়, সেই খেলার হাল ফেরাতে ফের রাজ্যে সমান্তরাল ভাবে চলা তিন সংস্থাকে এক করার দাবি উঠেছে। দু’দিন আগেই ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ নিয়ে সভা করেছিলেন জয়ন্ত পুশিলাল, পৌলমী ঘটকদের মতো কয়েক জনকে নিয়ে। সেখানে তিনি নাকি জানিয়ে দেন, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষ রয়েছেন যে খেলায়, সেখানে উনি চেষ্টা করলেই সবাই এক হতে পারে। অসুস্থ লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার অবশ্য এই দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছেন না এখন। বুধবারই সোমনাথবাবু বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমি আগে অনেক চেষ্টা করেছি সবাইকে মেলানোর। এখন আমি অসুস্থ। ক্রীড়ামন্ত্রীই চেষ্টা করুন।’’ রাজ্য সংস্থার দু’চারজন ছাড়া টিটির প্রায় সব কর্তাই এখন চাইছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে টিটিতে বাংলার সুদিন ফিরুক।

দেখার হল, সেই সুদিন ফেরে কবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Table Tennis Association Table Tennis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE