Advertisement
E-Paper

চার্লটনদের ইতিহাসকে মনে করালো

যোগ্যতা বা মানের দিক থেকে দু’টো বিশ্বকাপে আকাশ-পাতাল তফাত। তবু তুলনাটা চলে আসছে প্রভাবের দিক থেকে। আমার মনে হয়, ইংল্যান্ডের ফুটবলে ছেষট্টির পর এটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ জয়। এই জয়কে হাতিয়ার করে নতুন স্বপ্ন দেখতে পারে ওরা।

চিমা ওকোরি

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:০৮
বিশ্বজয়ী: অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কাপ হাতে ইংল্যান্ডের উল্লাস। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বিশ্বজয়ী: অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কাপ হাতে ইংল্যান্ডের উল্লাস। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ইংল্যান্ড শেষ বার বিশ্বকাপ জিতেছে ১৯৬৬-তে। সেটা ছিল জেফ হার্স্ট, ববি চার্লটনের ইংল্যান্ড। জানি অনেকে চিৎকার করে উঠবেন— কোথায় সেই বিশ্বকাপ আর কোথায় অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ! কোনও তুলনা চলে!

যোগ্যতা বা মানের দিক থেকে দু’টো বিশ্বকাপে আকাশ-পাতাল তফাত। তবু তুলনাটা চলে আসছে প্রভাবের দিক থেকে। আমার মনে হয়, ইংল্যান্ডের ফুটবলে ছেষট্টির পর এটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ জয়। এই জয়কে হাতিয়ার করে নতুন স্বপ্ন দেখতে পারে ওরা।

ইংল্যান্ডের ছোটরা এ দিন এমন একটা শহরে বিশ্বকাপ জিতল, যেখানে আমি সারাজীবন ধরে ফুটবল খেলেছি। আর শনিবার আমি ইংল্যান্ডে বসে ছিলাম। রিয়ান ব্রিউস্টারদের দেশে বসে ওদেরকে বলতে চাই— তোমরা ভাগ্যবান, ফুটবলের আবেগ আর উন্মাদনার সেরা শহরে বিশ্বজয়ী হয়ে থাকলে! এমনিতে ইংল্যান্ডে খুব একটা উত্তাপ দেখিনি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ নিয়ে। বাজারে গিয়েও দেখলাম, কেউ ফাইনাল নিয়ে তেমন কথা বলছে না। বরং উইকএন্ড ইপিএল নিয়েই মেতে আছে সকলে। শনিবার সব বড় দলগুলোরই খেলা ছিল। দুই ম্যাঞ্চেস্টার, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি। সবচেয়ে বড় ম্যাচ ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম টটেনহ্যাম হটস্পার।

সে সব নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল সকলে। ইপিএলের ম্যাচ থাকা মানেই রেডিও স্টেশনগুলোতেও সারাক্ষণ সে সব নিয়ে কাটাছেঁড়া। আর ম্যান ইউ ম্যাচ থাকলে তো কথাই নেই। শুধু জোসে মোরিনহোকে নিয়েই যে কোনও তর্ক সভা জমে যাবে। আমি কিন্তু ম্যাচটা দেখতে বসে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলাম। ইংল্যান্ড এ বার অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপও জিতেছে। ওদের পক্ষে যুব ফুটবলে ভাল করাটা কিন্তু মোটেও অবাক করার মতো কিছু নয়। সারা দেশে দারুণ ফুটবল পরিকাঠামো। প্রত্যেকটা ক্লাবের অ্যাকাডেমি আর যুব ফুটবলের অত্যাধুনিক প্রোগ্রাম রয়েছে। ব্রিউস্টার যেমন লিভারপুলের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছে, তেমনই ফিল ফোডেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে নজর কেড়ে নিয়েছে পেপ গুয়ার্দিওলার। এখন ইংল্যান্ডের সিনিয়র দলের অনেক সদস্যও ওদের যুব ফুটবলের সিস্টেমের ফসল।

আর ছেষট্টির সেই ঐতিহাসিক জয়ের কথা বারবার এসে পড়ছে ম্যাচের ধরনটা দেখে। সে দিনও সাড়ে বারো মিনিটের মধ্যে জার্মানি গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল। তার চার মিনিটের মধ্যে কিংবদন্তি জেফ হার্স্ট গোল শোধ করে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন ইংল্যান্ডকে। এ দিন ইংল্যান্ডের ছোটদের কাজটা আরও কঠিন ছিল কারণ, স্পেন দু’গোল করে প্রায় ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিয়েছিল ব্রিটিশদের। ওয়েম্বলির সেই ইংল্যান্ড দলটা চিরকালীন শ্রেষ্ঠদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। গর্ডন ব্যাঙ্কস, ববি মুর, ববি চার্লটন, জেফ হার্স্ট— ফুটবলের রূপকথায় স্থান করে নেওয়া সব নাম। সেই সব কিংবদন্তিদের ছোট না করেও যদি বলতে পারি, কোনও বিশ্বকাপ ফাইনালেই দু’গোলে পিছিয়ে পড়ে পাল্টা পাঁচ গোল দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বিরলতম ঘটনাগুলোরই একটা। আর কখনও দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না।

আবহ বা আবেগের দিক থেকেও তো ছেষট্টির ওয়েম্বলির থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে ছিল না শনিবারের যুবভারতী। ফুটবলের মায়াবী রাত উপস্থিত ছিল ইংল্যান্ডের তরুণদের সামনে। এই ছেলেগুলো হয়তো কেউ কেউ বড়দের বিশ্বকাপে খেলবে। বৃহত্তম মঞ্চের রিহার্সালটা ওদের হয়ে থাকল।

ম্যাচের আধ ঘণ্টা মতো ০-২ পিছিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। ওই সময়টুকু পর্যন্ত দেখে মনে হচ্ছিল, স্পেনের তিকি তাকার ইন্দ্রজালে বিশ্বের আরও অনেক দলের মতো সম্মোহিত হতে চলেছে তারা। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি, উদ্যম আর স্কিল— তিনটেই ছিল এই ইংল্যান্ড দলের। আমার কাছে টার্নিং পয়েন্ট ব্রিউস্টারের প্রথম গোলটা। দুর্দান্ত হেডে গোল করে ও-ই ম্যাচে ফেরাল ইংল্যান্ডকে। ২-১ অবস্থায় বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফিরে ইংল্যান্ড নিশ্চয়ই নিজেদের বলতে পেরেছিল যে, ম্যাচ সমান-সমান। চলো ঝাঁপিয়ে পড়ি।

কে ভেবেছিল, ম্যাচটা এমন দু’টো ভাগে প্রায় সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দু’টো ছবি হয়ে থাকবে। স্পেন প্রথমার্ধটা শাসন করল। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল ইংল্যান্ড। ব্রিউস্টার ছাড়া ফিল ফোডেনকে নিয়ে খুব হইচই হচ্ছে। শনিবারেও ফোডেন দু’টো গোল করল। এমনি-এমনি গুয়ার্দিওলার মতো কোচ ওকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত নয়। পেপ চিরকাল প্লে-মেকারের ভক্ত। ফোডেন যেন একদম পেপ-মডেলের ফুটবলার। খেলাটাকে তৈরি করে।

তবে স্কোরশিটে নাম না থাকলেও আরও দুই ইংল্যান্ড ফুটবলারের কথা বলতে চাই। ক্যালাম হাডসন-ওডোই এবং স্টিভন সেসেইওন। কী অসাধারণ স্ট্র্যাটেজি ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপারের! স্পেনের তিকি তাকা পাসিং নির্ভর। মাটিতে ভয়ঙ্কর। আকাশ পথে হানা দিয়ে ব্রিটিশ টর্নেডো ডুবিয়ে দিল স্প্যানিশ আর্মাডাকে। উইং দিয়ে ক্রমাগত মাপা ক্রস পাঠিয়ে এই দু’জনই বড় ভূমিকা নিল ইংল্যান্ডের জয়ে।

ভয়ঙ্কর গতি আর উন্নত শারীরিক গঠনেও স্পেনকে পিষে দিয়ে গেল ইংল্যান্ড। এটা ভারতের জন্যও একটা শিক্ষা। শারীরিক গঠনে অনেক পিছিয়ে ভারতীয় ফুটবলাররা। শক্তি ছাড়া এখনকার ফুটবলে টেকা কঠিন, দেখিয়ে দিয়ে গেল ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দল।

শক্তির এই মন্ত্রকে ‘টেমপ্লেট’ করেই এগোতে হবে। বিশ্বকাপ তো এসেছে। এ বার ভারতকে পৌঁছতে হবে বিশ্বকাপে!

Steve Cooper 1966 FIFA World Cup FIFA U-17 World Cup 2017 FIFA Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy