আবার অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে স্টিভ। এ বার পেপ টকের দায়িত্বে।
ওদেরই হারিয়ে ষোলো বছর আগে বিশ্বকাপ হাতে তুলেছিলেন। সেই স্মৃতি এখনও তাজা স্টিভ ওয়র মনে। হয়তো সে জন্যই তাঁকে নেটে ডেকে আনলেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেম্যান। শুক্রবার অ্যাডিলেড ওভালে নকআউটে প্রতিপক্ষ যে সেই পাকিস্তানই।
বুধবার নেটে আসার আগে অবশ্য মঙ্গলবার ডিনারে একপ্রস্ত আড্ডা হয় নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ও মাইকেল ক্লার্কের দলের ছেলেদের মধ্যে। সেই আড্ডায় স্টিভ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, চাপের মুখে ভেঙে না পড়ে কী ভাবে শেষ বল পর্যন্ত পাল্টা লড়াইয়ের রসদ মজুত রাখা যায়। যা শুনে দল বেশ তেতে গিয়েছে বলে দাবি ক্লার্কের দলের ওপেনার অ্যারন ফ্লিঞ্চের।
মঙ্গলবার ডিনারে স্টিভ ওয় ফিঞ্চদের বলেন, “এ রকম একটা বিশাল টুর্নামেন্টে কোনও না কোনও সময় চাপে পড়ে যেতেই পারো। তখনই মনে করবে, কেন ক্রিকেটে এসেছ? উত্তর, উপভোগ করতে। এখনও নিশ্চয়ই সে ভাবেই উপভোগ করতে চাও। এই কথা মাথায় রেখেই মাঠে নামবে।” ষোলো বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে স্টিভ বলেন, “সে বারও এই কথাই ভেবেছিলাম। দশ বছর বয়সে শুতে যাওয়ার আগে যা ভাবতাম, ঘুম থেকে উঠেও তাই। কত রান করব বা ক’টা উইকেট নেব। এ জন্যই তো ক্রিকেটে আসা আমাদের। এখনই বা এ ভাবে ভাবব না কেন?”
পরে সাংবাদিকদের স্টিভ বলেন, “আগের বিশ্বকাপগুলোতে আমরা কী রান করতাম আর এখনকার ছেলেরা কত রান করে তার তুলনা করে ওদের বলছিলাম, তোমরা তো আমাদের সত্যিই বুড়ো প্রমাণ করে দিলে হে। যা খেলছ তোমরা, তাতে আমাদের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মান-ইজ্জতে লাগছে ভাই।”
স্টিভের এই ভোকাল-টনিকে তাঁরা কতটা উজ্জীবিত, তা ওপেনার ফিঞ্চের কথাতেই স্পষ্ট। বলেছেন, “স্টিভের কথাগুলো সত্যিই মনে দাগ কাটার মতো। উনি বললেন চাপটা আসে নিজের কাছে বড্ড বেশি কিছু চেয়ে ফেললে। হারার ভয়টা মন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে মাঠে নামার পরামর্শ দেন উনি। এমনিতেই আমাদের মধ্যে হারের ভয়টা একটু কমই। এখন সেটা আরও কমে গেল। শুক্রবার খোলা মনে মাঠে নামব।”
শুক্রবার অ্যাডিলেডে মিসবা-উল-হকেরা তাঁদের চাপে ফেলতে পারে ধরে নিয়েই যে এই পেপ-টক দেওয়ার জন্য স্টিভের ডাক পড়ল, তা আন্দাজ করছে ক্রিকেটমহল। কিন্তু যে পাকিস্তান তাদের চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছে অজি শিবির, উল্টে তারাই চাপে। নির্ভরযোগ্য পাক পেসার মহম্মদ ইরফান চোটের জন্য টুর্নামেন্টেরই বাইরে চলে যাওয়াটা মিসবাদের উপর সবচেয়ে বড় চাপ। যদিও পাক কোচ-ক্যাপ্টেন তা বুঝতে দিতে চাইছেন না। মিসবা যেমন বলে দিলেন, “ইরফানের ছিটকে যাওয়াটা আমাদের কাছে একটা বড় ধাক্কা ঠিকই। তা সত্ত্বেও আমরা পারব। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে পারব না কেন?”
অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে অবশ্য সেমিফাইনালে পাক বোর্ড জাতীয় দলকে একটা ‘উপহার’ দিতে পারে বলে আজই জানিয়ে রাখলেন পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান। ম্যাচ উইনার অফ স্পিনার সইদ আজমলকে তখন অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি। যিনি আইসিসি-র ব্যান-মুক্ত বোলার এখন।
কোচ ওয়াকার ইউনিসও বলছেন, “ইরফানের চোটটা বাজে সময় হল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তো আমাদের এগোতে হবে। ওয়াহাব রিয়াজ, রাহত আলিদের মতো পেসার রয়েছে আমাদের দলে। এমনিতেই তো আমাদের হাতে কয়েক জন বোলার নেই, বিশেষ করে স্পিনার। তা সত্ত্বেও তো যারা দলে আছে সেই সব বোলাররা অবস্থা ভালই সামলেছে। ওরা জানে কখন কী করতে হবে। শুরুটা খারাপ করলেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো থেকে আমাদের ছেলেরা যথেষ্ট ভাল খেলছে। চিন্তা কীসের?” মিসবারও সাফ কথা, “ভারত টানা ছ’টা ম্যাচ জিতে থাকলে আমরাও টানা চারটে জিতেছি। আমাদের উড়িয়ে দেবেন না।”
উড়িয়ে যে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রতিপক্ষও দিচ্ছে না, তা অস্ট্রেলিয়া শিবিরে ঘটনার ঘনঘটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ২০০৪-এর পর আবার জাতীয় দলের জার্সি উঠল স্টিভ ওয়র শরীরে। তাঁর ভাই মার্ক ওয় আছেন নির্বাচকদের প্যানেলে। এর আগে জিওফ মার্শ ও ইয়ান হিলিও এসেছেন ওয়ার্নার, স্মিথ, জনসন, ম্যাক্সওয়েলদের ‘পেপ টক’ দিতে। বিশ্বজয়ী দলের সদস্যদের বারবার এনেছেন লেম্যান। এ বার স্বয়ং স্টিভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy