Advertisement
E-Paper

মনে ভয় নিয়ে স্ট্র্যাটেজি কষলে এ রকমই খেলা হয়

আগের দিন আনন্দবাজারে আমার প্রিভিউয়ে বলেছিলাম, ফুটবলারদের গ্যালারির কথা ভুলে যেতে হবে। সমর্থকরা চিত্কার করবেনই। কিন্তু সেটাকে প্লেয়াররা নিজেদের উপর চাপে বদলালে চলবে না।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪১
১-১-এর তৃপ্তি। শনিবার।

১-১-এর তৃপ্তি। শনিবার।

ইস্টবেঙ্গল-১ : মোহনবাগান-১

(র‌্যান্টি) (গ্লেন)

আগের দিন আনন্দবাজারে আমার প্রিভিউয়ে বলেছিলাম, ফুটবলারদের গ্যালারির কথা ভুলে যেতে হবে। সমর্থকরা চিত্কার করবেনই। কিন্তু সেটাকে প্লেয়াররা নিজেদের উপর চাপে বদলালে চলবে না।

শনিবারের ডার্বিতে ফুটবলাররা করল ঠিক উল্টোটা। গ্যালারির কথা মাথায় রাখল বেশি। নিজেদের দায়িত্বের কথাটা ভুলে গেল।

গোটা ম্যাচে হাতে গুনে বলা যায় ক’টা মাত্র পজিটিভ সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান, কোনও দলের ফুটবলাররাই বল পায়ে রাখতে চাইছিল না। সনি-ডংয়ের মতো প্লেয়াররাও— বল পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পাস! তা হলে কোনও আক্রমণ তৈরিটা হবেটা কোথা থেকে? ম্যাচের শুরু থেকে যে-ই বল পাচ্ছে, এক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা অন্যকে দিয়ে দিচ্ছে। কেউ কোনও মুভ তৈরি করতে চাইছে না। দেখে মনে হল, বড় ম্যাচে এতটাই হারের ভয়ে ঢুকে গিয়েছিল দু’দলের মধ্যে যে, ফুটবলাররা বল ধরেই অহেতুক তাড়াহুড়ো করে আসলে ম্যাচটাই মাটি করে ফেলল।

সঞ্জয় আর বিশু, দুই কোচেরই স্ট্র্যাটেজি ছিল, ঘর বাঁচিয়ে তার পর আক্রমণে যাব।

সে জন্য খেলার শুরু থেকেই ডিপ ডিফেন্স রেখে দেওয়া। খেলা স্লো করে দেওয়া। লম্বা পাসে ভরসা রাখা। ডিফেন্সের বদলে মাঝমাঠ থেকে বিল্ড-আপ করা। প্রতি-আক্রমণেও খেলা স্লো করে দেওয়া। ডিফেন্সে বল এলেই নো-ননসেন্স ক্লিয়ারেন্স। মানে যতটা সম্ভব রক্ষণাত্মক ফুটবল সম্ভব আর কী!

কিন্তু স্ট্র্যাটেজি রক্ষণাত্মক হওয়া সত্ত্বেও ম্যাচের দুটো গোলের পিছনেই দু’দলের ডিফেন্সকে দায়ী করব আমি। র‌্যান্টির গোলটা ‘পোচার্স ফিনিশ’ ছিল, সেটা বলতেই হবে। কিন্তু ওই সময় মোহনবাগান ডিফেন্ডারদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। সেন্টার ব্যাকদের কাজ হচ্ছে, যখন কোনও কাউন্টার হবে, তখন যত দ্রুত সম্ভব গোলকিপারের ছয় গজের মধ্যে চলে যাও। যাতে ক্রস এলে তুমি আগে ক্লিয়ার করতে পারো। সঙ্গে বিপক্ষের সাপোর্টকে মার্ক করে দাও। যাতে পাসের সমস্ত আউটলেট বন্ধ হয়ে যায়। বিকাশ জাইরুর পাসটা মোহনবাগানের দুই সেন্টার ব্যাক লুসিয়ানো-কিংশুক কেন র‌্যান্টি অবধি পৌঁছতে দিল? অত জায়গা পেলে গোল তো করবেই র‌্যান্টির মতো স্ট্রাইকার। গোলকিপার দেবজিতের ওখানে কিছুই করার ছিল না।

কর্নেল গ্লেনের ১-১ করার গোলটাও আবার ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সের ভুলে। কোনও সেট পিসের সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হয় ডিফেন্সকে— বলের দিকে তাকাও, ম্যানের দিকে নয়। কারণ, জালে বলটাই ঢোকে। ইস্টবেঙ্গল সেই ভুলটাই করল। ম্যান মার্ক করতে ব্যস্ত ছিল। বলের ফ্লাইটের দিকে মন দেয়নি। গ্লেনের হেডটা তাই গোলে।

সেন্টার ব্যাকদের মতো দু’দলের সাইডব্যাকরাও তো নজর কাড়তে পারল না। যখন মাঝমাঠ কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারছে না, তখন সাইডব্যাকদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। সেটা হল না। মোহনবাগানের প্রীতম-ধনচন্দ্র, ইস্টবেঙ্গলের রাহুল-সৌভিক কারাও কোনও ওভারল্যাপ দেখতে পেলাম না।

অনেকে হয়তো বলবেন, সনি, র‌্যান্টি, ডং, গ্লেন, এত সব আক্রমণাত্মক বিদেশি ফুটবলার থাকতেও কী করে নব্বই মিনিটের শেষে ১-১!

সহজ হিসেব।

এক) দু’দলের বিল্ড-আপ প্লে যদি ভাল না হয় তা হলে কী করে ভাল আক্রমণ তৈরি হবে? ফুটবলে মাঝমাঠ সব সময় সাপ্লাই লাইন হয়। সেখানে যদি মাঝমাঠ ঘুমিয়ে থাকে, তা হলে আক্রমণও ঘুমিয়ে থাকে। দু’দলের মাঝমাঠই আজ আক্রমণ তৈরি করতে পারেনি। ইস্টবেঙ্গলে মেহতাব হোক, বা মোহনবাগানে সৌভিক-প্রণয়, মুভ তৈরি করার বদলে ধাক্কাধাক্কি বেশি করল মাঝমাঠে। যে কারণে দু’দলের দুই সেন্টার ফরোয়ার্ডই বেশি বল পায়নি। মোহনবাগানের গ্লেন যেমন একা পড়ে যাচ্ছিল। বল পেলেই দু’-তিনজন ঘিরে নিচ্ছিল। সাপোর্টে কাউকে পায়নি। এক-দু’বার ক্রস থেকে ভাল হেড করেছিল ঠিকই। কিন্তু তার বেশি কিছু নয়। র‌্যান্টির আবার হোল্ড আপ প্লে ভাল। বল ঠিকঠাক ধরে রাখছিল। ফ্রি-কিকটাও দারুণ মেরেছিল। কিন্তু গ্লেনের মতো ওকেও বল পেতে বারবার সাই়ডলাইনে চলে যেতে হচ্ছিল।

দুই) মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের দুই ক্রিয়েটিভ প্লেয়ারই শনিবার ফর্মে ছিল না। সনি যেমন বল ধরে রাখতে চাইছিল না। ওর আউটসাই়ড ডজ ধরে ফেলেছিল ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স। তার উপর আবার মিস পাস। উইং দিয়ে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও, ক্রস ঠিক করে বাড়াতে পারছিল না। প্রথমার্ধে প্রতি-আক্রমণে ভাল জায়গায় বল পেয়েও তাড়াতাড়ি পাস দিয়ে দিল। কোনও শট নেওয়ার প্রবণতা দেখলাম না। ইস্টবেঙ্গলে ডং আবার নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেনি। ডং বল প্লেয়ার। বল পজেশন বেশি না পেলে এ রকম ফুটবলার চাপ পড়ে যায়। আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় ম্যাচ থেকে। প্রথমার্ধের শেষে হেড। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একটা সুন্দর শট। ব্যস, ওইটুকুই শনিবারের ডং। আর সেই লং বলের পুরনো রোগও তাড়া করেছিল ইস্টবেঙ্গলকে। ডং অত লম্বা নয় যে লং বলে দারুণ কিছু করবে।

তিন) মাঠে দু’দলে নেতৃত্বের অভাবও দেখলাম। সিনিয়র ফুটবলারদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। যদি সিনিয়ররাই এ রকম চাপের ম্যাচে জয়ের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তা হলে তার প্রভাব তো দলের উপর পড়বেই।

দুই বিদেশি ফুটবলার গোল করলেও আমার কাছে ম্যাচের সেরা ইস্টবেঙ্গলের বিকাশ জাইরু। কী অসাধারণ প্রতিভা! যে দিন বাকি সবাই ভয় পেয়ে মাঠে নেমেছিল, বিকাশ সে দিন কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ছিল। ইস্টবেঙ্গলের উইং যতটুকু ডানা ঝাপ্টাল, সব ওর জন্যই। ছেলেটা ওয়ার্কলোড নিতে পারে। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। ভাল ভাল ক্রস বাড়াচ্ছিল। ওর ইচ্ছেটাই যদি দু’দলের বাকিদের মধ্যে থাকত, শনিবার হয়তো একটা ভাল ম্যাচ আমরা দেখতে পেতাম।

হতে পারে আই লিগ সবে শুরু হয়েছে। সবে মাত্র দুটো দলের তৃতীয় ম্যাচ এটা। এক পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেওয়া খারাপ নয়। কিন্তু মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল মানে তো শুধু তা নয়, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি!

সেটা কি দু’দলের কোচেরা ভাবেনি?

মোহনবাগান: দেবজিত্, লুসিয়ানো, কিংশুক, প্রীতম, ধনচন্দ্র, সৌভিক (জেজে), প্রণয়, সনি, কাতসুমি, আজহারউদ্দিন (বলবন্ত), গ্লেন (বিক্রমজিত্)।

ইস্টবেঙ্গল: রেহেনেশ, বেলো, অর্ণব, রাহুল, সৌমিক, মেহতাব, রফিক, ডং (তুলুঙ্গা), অবিনাশ (খাবরা), বিকাশ, র‌্যান্টি।

subrata bhattacharya derby match
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy