এ ভাবেই সব প্রতিকূলতা টপকে গিয়েছেন স্বপ্না। ছবি: এপি।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছিলেন স্বপ্না। পরিকল্পনা ছিল দিন সাতেক থেকে কলকাতায় আসার। পুরো পৃথিবীই যে বদলে যাবে আচমকা, টের পাওয়ার কথা ছিল না। করোনাভাইরাসের দাপটে গৃহবন্দি কয়েক মাসে উপলব্ধি হল যে, বদলেছে তাঁকে ঘিরে আবেগও। যেখানে একদা সংবর্ধনা সঙ্গী হত, সেই নিজের পাড়াতেও জুটছে টিপ্পনী, মোকাবিলা করতে হচ্ছে সিলেবাসের বাইরের সব সমস্যার।
সব কিছু ঝেড়ে ফেলে কলকাতা ফিরে সাইয়ে অনুশীলনে নামার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি এখনও। অগত্যা, বাড়ির উঠোনেই চলছে প্রস্ততি। যা অবশ্য অনেক গালভরা শব্দ। আসলে উঠোনে ঘণ্টা দেড়েক ফ্রি-হ্যান্ড করা ছাড়া আর সে ভাবে কিছুই হচ্ছে না। একটু যে দৌড়বেন, সেই সুযোগও নেই। জলপাইগুড়ি শহরেও কোভিডের বাড়বাড়ন্ত যথেষ্ট। ফলে, জিমে যাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি এখনও।
১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে সাই হোস্টেল চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন স্বপ্নাকে কলকাতায় এনে অনুশীলন শুরুর ইচ্ছা রয়েছে কোচের। বললেন, “ঝুঁকি আছে বলেই এখন কিছু করা যাচ্ছে না। নিজের বাড়ির উঠোনে ছোট জায়গার মধ্যে যেটুকু করা যায়, সেটুকুই করছে স্বপ্না। কলকাতায় জোর করে আগে নিয়ে এসে অনুশীলন শুরু করলে যদি হিতে বিপরীত হয়, তখন তো কোয়রান্টিনে চলে যেতে হবে। তাই ইচ্ছা থাকলেও কিছু করা যায়নি।”
আগামী বছরের মার্চ থেকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে প্রতিযোগিতা শুরুর আশা করছেন কোচ সুভাষ সরকার। সূচিতে পর পর ফেডারেশন কাপ, আন্তঃরাজ্য প্রতিযোগিতা রয়েছে। জুনে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হবে চিনের হ্যাংঝোউতে। ২০২২ সালে ওখানেই বসবে এশিয়াডের আসর।
আরও পড়ুন: আইপিএল টসের সময় ইলেকট্রনিক টিমলিস্ট আসছে
এশিয়াড থেকে ফেরার পর ডায়েরিতে টোকিয়ো অলিম্পিক্স স্বপ্নের কথা লিখেছিলেন সোনাজয়ী। চেয়েছিলেন টোকিয়ো অলিম্পক্সকে পাখির চোখ করতে। বছর খানেক পিছিয়ে গেলেও টোকিয়োর রাস্তা অবশ্য দুর্গমই দেখাচ্ছে। স্বপ্না বললেন, “অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের জন্য লাগবে ৬৪২০ পয়েন্ট। জানি না কী হবে। আমি চেষ্টা করব। সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করব।” স্বপ্নার সেরা পয়েন্ট ৬০২৬। ফলে, উন্নতি করতে হবে অনেকটাই। কোচও বাস্তবে চোখ রাখতে চান। বললেন, “অনেকটাই বেড়েছে যোগ্যতার মান। একসময় ৫৯০০ ছিল, তার পর ৬১০০ ছিল। এখন বাড়তে বাড়তে ৬৪২০। চেষ্টা করবে স্বপ্না। আপাতত অলিম্পিকের কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে এগোতে চাইছি। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে।”
প্রিয় ছাত্রীর কাছে কোচের প্রত্যাশা কতটা? কোভিড অতিমারি তো পথে কাঁটাই বিছিয়ে দিল। উত্তর এল, “মুশকিল হল, ওখানে কার্যত কিছুই করতে পারছে না। এতগুলো মাস বসে রয়েছে। তবে ও তো প্রশিক্ষিত অ্যাথলিট। খুব বেশি পিছিয়ে পড়ার কথা নয়। কয়েক মাস পরিশ্রম করলে ঠিক ছন্দে ফিরবে। টেকনিক তো জানাই। শুধু ফিটনেস লেভেলটা বাড়াতে হবে। মার্চে পটিয়ালায় ফেডারেশন কাপ রয়েছে। দেখি, কেমন করে।”
এক সময় পিঠের ব্যথা ভোগাচ্ছিল। অস্ত্রোপচার করতে হবে কি না, ভাবনা চলছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্যথা মালুম হচ্ছে কম। বললেন, “চোটটা কোন পর্যায়ে আছে, তা বুঝতে পারছি না। এখন রিহ্যাবের ট্রেনিংটাই করছি। রিহ্যাবের ট্রেনিং করতে ভালওবাসি। কোমরের ট্রেনিংগুলো করতে সমস্যা হচ্ছে না। ব্যথা অনুভব করছি না।”
কোমরে নয়, ব্যথা আসলে অন্য। এশিয়াডের পদক নিয়ে তাচ্ছিল্য যে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না স্বপ্না!