Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সরে গেলাম

মোহনবাগান মাঠের নাটকীয় সাংবাদিক সম্মেলন ততক্ষণে অতীত। লক্ষ্মীরতন শুক্ল কয়েক ঘণ্টা আগে বাংলা ক্রিকেটের প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন। বুধবার সন্ধেয় নিজের এক বন্ধুর বাড়িতে বসে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকারে বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে যা যা বললেন তা তাঁর অবসর প্রেক্ষাপটের মেজাজের সঙ্গে মিলল না। বরং লক্ষ্মীরতন শুক্ল আশ্চর্য রকম রক্ষণাত্মক থেকে গেলেন...

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২২
Share: Save:

মোহনবাগান মাঠের নাটকীয় সাংবাদিক সম্মেলন ততক্ষণে অতীত। লক্ষ্মীরতন শুক্ল কয়েক ঘণ্টা আগে বাংলা ক্রিকেটের প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন। বুধবার সন্ধেয় নিজের এক বন্ধুর বাড়িতে বসে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকারে বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে যা যা বললেন তা তাঁর অবসর প্রেক্ষাপটের মেজাজের সঙ্গে মিলল না। বরং লক্ষ্মীরতন শুক্ল আশ্চর্য রকম রক্ষণাত্মক থেকে গেলেন...

প্রশ্ন: এতক্ষণে বাসি ঠোঙা হয়ে যাওয়া প্রশ্নটা আবার করব না যে, কেন ছাড়লেন। জানতে চাইব, ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্তটা কি সত্যিই আপনার? নাকি অবসর নিতে আপনি বাধ্য হলেন?

লক্ষ্মী: গোটা জীবনে আমাকে কোনও ব্যাপার নিয়ে কেউ বাধ্য করতে পারেনি। আমি যা ভাবি, তাই করি। আমি বাচ্চা নই যে, কেউ আমাকে টোন-টিটকিরি করবে আর আমি খেলা ছেড়ে দেব। আসলে গত একমাস ধরে কিছু কিছু ব্যাপার ঘটেছে, যা আমি ভাবিনি হতে পারে বলে। মোটিভেশনের অভাব হয়ে যাচ্ছিল। ভেতর থেকে কিকটা আর পাচ্ছিলাম না। সবাই বুদ্ধিমান। না বললেও তাঁরা বুঝে যাবেন। কিছু জিনিস আছে, যা আমি নিজের মুখে বলতে চাই না। খেলা ছাড়ার ব্যাপারটা নিয়ে আমি পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি আমারই ছিল। আমি আমার প্লট নিজে লিখতে চেয়েছি। চাইনি, অন্য কেউ লিখুক।

প্র: কী ঘটেছিল গত কয়েক মাসে?

লক্ষ্মী: দেখুন, আমি নিজেও এটা মনে করি যে, চোট পেয়ে যদি একমাস আমি ক্রিকেটের বাইরে থাকি তা হলে আমারও ম্যাচ প্র্যাকটিস নিয়ে ফেরা উচিত। সবার ক্ষেত্রেই সেটা হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে কেউ কেউ প্রিভিলেজড কাস্টমার হয়, কেউ কেউ হয় না। ক্রিকেটের উপরে আমি নই, জানি। কিন্তু তার পরেও ‘বাট’ বলে একটা শব্দ থাকে। যেটা আমার লেগেছে। আমার মনে হয়েছে আমি কি তা হলে সত্যিই সেই লক্ষ্মীরতন শুক্ল নই যাকে বাংলা টিমের দরকার পড়ত? আলোচনার পর আলোচনা হত। প্র্যাকটিসে যাওয়ার আগে, পরে। ক্রিকেট আর এনজয় করছিলাম না। মনে হচ্ছিল, আমি এ সব করে ম্যাচের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। ম্যাচ ফি নিচ্ছি। যেটা উচিত নয়। বাংলাকে ঠকানো আমার উচিত হচ্ছে না।

প্র: বাংলা নিয়ে এত আবেগের কথা বলছেন। কিন্তু সেই বাংলাই তো আপনার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। আপনি তো লিখেওছেন সেটা সিএবিকে পাঠানো ই-মেলে।

লক্ষ্মী: হ্যাঁ। আমি কারও নাম করতে পারব না। সে কে, লোকে যদি জানে ভাল। না জানলে, আমি জানাতে যাব না। তবে যে-ই করে থাক, ঠিক করেনি। কথাটা এক-আধ বার নয়, কানে দশ বার আমার এসেছে। আমি জানি যে, এক পার্সেন্ট লোক হয়তো আমার দায়বদ্ধতা নিয়ে বলছে। সবাই বলছে না। কিন্তু আমার মনে হল, এক পার্সেন্টও যখন বলছে, তখন রেসপেক্টফুলি বেরিয়ে যাওয়াই ভাল। তবে এটা বলব যে, কথাগুলো অর্থহীন।

প্র: জল্পনা যে বাংলা কোচ সাইরাজ বাহুতুলে আপনার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সত্যি?

লক্ষ্মী: বললাম তো, আমি কারও নাম বলব না। তবে আমি একটা ব্যাপার এখানে পরিষ্কার করে দিতে চাই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এটাকে প্লিজ জুড়বেন না। দাদাকে আমি নই, অনেকে ভালবাসে। দাদির কাছ থেকে অসম্ভব সাপোর্ট পেয়েছি। ওর থেকে আমি ক্রিকেট শিখেছি। দাদি আমাকে বারবার বলেছে, খেলা ছাড়িস না। তাই কেউ যদি আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দাদিকে জোড়ার চেষ্টা করে, বলব ভুল করছে। আমি তো মনে করি, লক্ষ্মীরতন শুক্ল কতটা কমিটেড সেটা সবচেয়ে ভাল জানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর এটাও আশা রাখি যে, দাদিকে যদি কেউ গিয়ে বলে আমার দায়বদ্ধতা নেই দাদি তাকে ঘর থেকে বার করে দেবে।

প্র: তা হলে কার কথায় অপমানিত হয়ে আপনি খেলা ছেড়ে দিলেন? এটাও তো আপনাকে নিয়ে বলা হয়েছে যে, আপনার জন্য বাংলা ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

লক্ষ্মী: সম্পূর্ণ মিথ্যে। যে বলছে, সে মিথ্যেবাদী। তাকে বলুন, সামনাসামনি এসে বলতে। ক্ষমতা থাকলে বলুক।

প্র: আপনি প্রথম প্রশ্নের জবাবটা দিলেন না। ঠিক আছে। আপনার পুরো এপিসোডে মনোজ তিওয়ারির ভূমিকা কী ছিল?

লক্ষ্মী: আমি বলব, মনোজ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আর আমার এত খারাপ সময়ও আসেনি যে মনোজ, দিন্দা বা ঋদ্ধিমানদের সঙ্গে ঝগড়া করতে যাব। আর এখানে মনোজের কী ভূমিকা, আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সেটা ও বলতে পারবে।

প্র: আর সাইরাজ? তিনি আজ সাংবাদিকদের বলেছেন যে, আপনার সিদ্ধান্তে তিনি বিস্মিত।

লক্ষ্মী: সাই (সাইরাজ) জানত। আমি বিজয় হাজারে থেকে ফেরার পর দাদিকে বলেছি যে, আর খেলতে চাই না। তার পর টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছি। নির্বাচকদেরও জানিয়েছি যে পরিবর্ত খুঁজে নিতে। তাই সাই জানত। তার পরেও ও যদি সারপ্রাইজড হয়, আমার কিছু বলার নেই। ও হয়তো সারপ্রাইজড হয়েছে ভেবে যে, কেন এত ভাল একজন প্লেয়ার অবসর নিয়ে ফেলল!

প্র: ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ভাবলেন?

লক্ষ্মী: না, এখনও না। পরিবারের সঙ্গে এখন সময় কাটাব। যা এত দিন পারিনি। তবে ভবিষ্যতে ক্রিকেট প্রশাসনে আসার ইচ্ছে আছে।

প্র: ইডেনে বাংলার ম্যাচ এরপর দেখতে যাবেন?

লক্ষ্মী: যাব না কেন? আগেও তো গিয়েছি।

প্র: বাংলা ক্রিকেট কী ভাবে লক্ষ্মীরতন শুক্লকে মনে রাখুক, আপনি চান?

লক্ষ্মী: বাংলার লক্ষ্মীরতন শুক্লকে মনে রাখার কোনও দরকারই নেই। বাংলাকে বরং লক্ষ্মীরতন শুক্ল মনে রাখবে। সময়-অসময়ে, দরকারে পাশে থাকবে।

প্র: বাংলা অবসর ভেঙে ফিরতে বললে ফিরবেন?

লক্ষ্মী: নাহ্, আর কখনও না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

laxmi ratan shukla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE