রোচও বলছিলেন, “লিয়েন্ডার একইসঙ্গে দারুণ প্রতিভাবান আর অ্যাথলিট বলেই চল্লিশ পেরিয়েও পেশাদার ট্যুরে ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। কিন্তু অন্য ভারতীয়দের মতো পেজেরও চেহারা বিরাট নয়। আর এই শরীরের জায়গাটাতেই ভারতীয়রা অন্য এশীয়দের মতোই বাকি টেনিসপৃথিবীর কাছে হেরে যাচ্ছে। একমাত্র ব্যতিক্রম নিশিকোরি। ওর বড় শরীর না হলেও খেলাটা একদম আধুনিক। উঁচুদরের সার্ভিস, ভলি, অ্যাথলেটিসিজম।”
চার-চার জন বিশ্বসেরা তৈরি করেছেন। নিজেও খেলোয়াড়জীবনে অবিশ্বাস্য ডাবলস খেলেছেন। প্রাণপ্রিয় বন্ধু জন নিউকোম্বকে নিয়ে। সিঙ্গলসেও হয়তো সত্যিই ‘সেকেন্ড রড লেভার’ হয়ে উঠতেন, যদি না ফর্মের মধ্যগগনের তিন-তিনটে বছর কনুইয়ের চোট কেড়ে নিত! শেষের তথ্যটা যখন জয়দীপ মাইক হাতে দিচ্ছেন, পাশে বসা রোচ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ছেন। এত বছর পরেও বিষণ্ণ মুখ সেই মুহূর্তে!
পর মুহূর্তে বোধহয় নিজেই বুঝতে পেরে গুমোট ভাবটা কাটাতে রোচের রসিকতা, “ছেষট্টির ডেভিস কাপ ওয়ার্ল্ড গ্রুপ চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে জন আর আমার ডাবলসে জয়-কৃশের (জয়দীপ-রামনাথন কৃষ্ণন) কাছে সেই হারটা তো আসলে তখন অস্ট্রেলিয়ার টু-নিল এগিয়ে থাকার আত্মতুষ্টির মাসুল। দেখুন না, জয়ও তো একটু আগেই বলল, ওটা ওর জীবনের শ্রেষ্ঠ জয় আর আমার নিকৃষ্টতম হার!”
অন্য খেলার মতোই টেনিসেও অজিদের হাড়ভাঙা ট্রেনিংই এই খেলাটাতেও বিশ্বে অস্ট্রেলিয়ার দাপট দেখানোর অন্যতম কারণ বলে বিশ্বাস সত্তর বছরের ‘যুবক’ রোচের। যাঁর কাফ মাসল এখনও যে কোনও সক্রিয় প্লেয়ারের কাছাকাছি মজবুত! যিনি অবলীলায় বলে দিতে পারেন, “তা সত্ত্বেও টেনিসটাকে পরের লেভেলে প্রথম তুলেছে কিন্তু কোনও অস্ট্রেলীয় নয়। সেটা ইভান লেন্ডল। আর হয়তো মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। বিরাট প্রতিভাবান না হয়েও নিখাদ প্র্যাকটিস, অবিশ্বাস্য পরিশ্রম, নিখুঁত ডায়েটিং, ফিটনেসে কী করে বিশ্বসেরা হওয়া যায়, লেন্ডল আর মার্টিনাই প্রথম দেখিয়েছে। ওদের থেকে ব্যাটনটা ভারতীয়রা নিক, আমি চাই।”
আর নিজের দুই সেরা ছাত্রের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? রোচ একমনে ভেবে বললেন, “লেন্ডল হল সর্বোত্তম পরিশ্রমী। আর ফেডেরার হল টেনিসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। আমি লেন্ডলের ভেতর প্রতিভা এনেছিলাম। আর রজারকে আরও পরিশ্রমী করেছিলাম। প্রতিভাও ছিল বলেই লেন্ডল অতগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পেরেছে। ফেডেরার আবার প্রচুর ‘ফাইভ সেটার’ বার করেছে লড়াই দিয়ে। পরিশ্রমী না হলে যেটা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, ওর ম্যারাথন কেরিয়ারে কখনও কোনও বড় চোট না পাওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আছে। আমি নিশ্চিত ফেডেরার আরও চার-পাঁচ বছর চুটিয়ে খেলবে। আরও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবে। অন্তত আরও একটা উইম্বলডন তো বটেই!”
নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রবীণ সম্প্রতি এক তরুণ নিউ সাউথ ওয়েলসবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে অন্য সবার মতোই শোকাহত। অনুভব করছেন, অস্ট্রেলীয়রা খেলার মাঠে যতই কাঠিন্য দেখাক, আসলে কতটা মানবিক, কতটা আবেগী! “ফিল হিউজের সঙ্গে পরিচয় ছিল না। তবে ওর খেলা মাঠে গিয়ে দেখেছি। আসলে আমি স্টিভ-মার্কের (ওয় ভাই) বাবার সঙ্গে টেনিসটা খেলতাম বলে ক্রিকেটটা বরাবর ফলো করি। ফিলের অকালমৃত্যুতে গোটা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহলকে ভেঙে পড়তে দেখেই বোঝা যায়, ছেলেটা কত বড় টিমম্যান ছিল। আর অস্ট্রেলীয়রাও আসলে কতটা নরম মনের মানুষ!”