উজ্জ্বল: আমেরিকায় সফল দুই ভারতীয় গ্রিশমা ও হর্ষবর্ধন।
শার্লট শহরের একপ্রান্তে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকটা গ্রামের পরিবেশ। রাস্তার এক দিকে আক্ষরিক অর্থেই ছবির মতো সুন্দর পর পর বাড়ি। উল্টো দিকে বিশ্ববিদ্যালয়। রবিবার সকালে দেখা গেল, স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটছেন, দৌড়চ্ছেন। কেউ গাছের নীচে বেঞ্চে বসে বই পড়ছেন।
কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়েই গত রবিবার ছিল অভিনব প্রতিযোগিতা ‘বাস্কেটবল উইদাউট বর্ডার’ বা বিডব্লিউবি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রতিযোগিতা। এ বছর ভারতের প্রতিনিধি দু’জন। গ্বালিয়রের হর্ষবর্ধন তোমার ও বেঙ্গালুরুর গ্রিশমা নিরঞ্জন।
হর্ষবর্ধনের মা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁর উৎসাহেই ক্রিকেট ছেড়ে বাস্কেটবল বেছে নেন বছর আঠারোর হর্ষবর্ধন। ট্রায়াল দিয়ে সুযোগ পান নয়ডায় এনবিএ অ্যাকাডেমিতে। তবে চোটের কারণে ক্লাস ইলেভেনের হর্ষবর্ধন এখন খেলতে পারছেন না।
হতাশ ভারতের প্রতিশ্রুতিমান বাস্কেটবলার বললেন, “কয়েক দিন আগে চোট পেলাম। তাই আর ঝুঁকি নিইনি। মার্কিন মুলুকে এই কয়েক দিনে অনেক কিছু শিখেছি। এ বার আমার লক্ষ্য ভারতীয় দলে ও এনবিএ-তে সুযোগ পাওয়া।”
গ্রিশমাও ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী। বাস্কেটবল খেলা শুরু করেছিলেন ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ে। এ দিন পুরো ম্যাচই খেলেন প্রতিশ্রুতিমান এই কিশোরী। দু’জনেরই স্বপ্ন সতনাম সিংহের মতো পেশাদার বাস্কেটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। রাতে স্পেকট্রাম এরিনায় হর্ষবর্ধন ও গ্রিশমা সাক্ষী থাকল এনবিএ অল স্টার ইভেন্টের। এই ম্যাচে লেব্রন জেমসের দল ১৭৮-১৬৪ হারাল ইয়ানিসদের আন্তেতেকুম্পো-দের।
এনবিএ কর্তারা এই মুহূর্তে বাস্কেটবলকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া। ভারত, সেনেগাল, মেক্সিকো ও চিনে অ্যাকেডেমি চলছে। এ বার তাঁদের লক্ষ্য বিশ্বের বাকি দেশগুলোতেও অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা। বাস্কেটবলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবিশ্বাস্য সাফল্য ও একের পর এক তারকা উঠে আসার রহস্যটা কী? এনবিএ-র অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট বাস্কেটবল অপারেশনস ট্রয় জাস্টিস বললেন, “আমাদের এখানে পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই বাস্কেটবল খেলতে শুরু করে সবাই। আমরা অবশ্য শুরুতেই ওদের ট্রেনিং করাই না। শুধু খেলতে বলি। আমাদের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল খেলার প্রতি ওদের যাতে ভালবাসা তৈরি হয় সেটা দেখা। যাদের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের বেছে নেওয়া হয়। এর পরে শুরু হয় আট বছর বয়সিদের বাস্কেটবল লিগের জন্য ট্রেনিং দেওয়া।”
প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়দের খুঁজে বার করার জন্য কয়েক হাজার স্কাউট রয়েছেন শুধু মার্কিন মুলুকেই। শুধু তাই নয়। সাধারণ মানুষও সম্ভাবনাময় বাস্কেটবলারের খোঁজ দিতে পারেন এনবিএ-তে। স্কাউটেরা তাঁদের দেখতে যাবেন। পছন্দ হলে ডাকেন অ্যাকাডেমিতে। ট্রয় বললেন, “আমাদের এখানে স্কুল ও কলেজ লিগকে দারুণ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অধিকাংশ তারকাই উঠে এসেছে কলেজ লিগ খেলে।”
সেরা উদাহরণ মাইকেল জর্ডান। নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে জন্ম বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা কিংবদন্তির। কিন্তু তিনি প্রথম নজর কাড়েন উত্তর ক্যারোলিনার এমসলি এ লেনি স্কুলে পড়ার সময়ে। তখন অবশ্য বাস্কেটবলের পাশাপাশি বেসবল ও অ্যাথলেটিক্স করতেন জর্ডান। স্কুল শেষ করে ভর্তি হন উত্তর ক্যারোলিনা কলেজে। সেখান থেকেই জাতীয় দলে। ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী যুক্তরাষ্ট্র দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সব শহরেই একাধিক বাস্কেটবল অ্যাকাডেমি রয়েছে। অধিকাংশই আবাসিক। ট্রয়ের কথায়, “জীবনের সব ক্ষেত্রেই সফল হওয়ার জন্য দরকার শৃঙ্খলা। অ্যাকাডেমি আবাসিক না হলে তা সম্ভব নয়।”
এনবিএ শীর্ষ কর্তার মতে ভারতেও প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। প্রয়োজন তাদের ঠিক মতো গড়ে তোলা। ট্রয়ের সঙ্গে একমত স্যাক্রেমেন্টো কিংসের মালিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবেক রণদিভে। মুম্বইয়ের জুহুতে বড় হওয়া বিবেক মাত্র পঞ্চাশ ডলার নিয়ে সত্তরের দশকে মার্কিন মুলুকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলেন। পড়া শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। ক্রিকেটভক্ত বিবেকের বাস্কেটবলের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কাহিনি বেশ আকর্ষণীয়। বললেন, ‘আমার মেয়ের তখন বারো বছর বয়স। ওকে বাস্কেটবল খেলা শেখাতে গিয়েই প্রথম মাথায় আসে দল তৈরির কথা।”
২০১০ সালে গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্সের অংশীদার হন বিবেক। তিন বছর পরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে এনবিএ ফ্র্যাঞ্চাইজি স্যাক্রেমেন্টো কিংসের মালিক হলেন বিবেক। তিনি বলছিলেন, “ভারতে প্রতিভার অভাব নেই। দরকার শুধু তাদের গড়ে তোলা। এই কারণেই ইন্ডিয়ানা পেসার্সের বিরুদ্ধে প্রি-সিজন ম্যাচ খেলতে অক্টোবরে মুম্বই যাচ্ছি।” জানালেন, ক্রিকেট এবং বলিউডের তারকাদেরও বাস্কেটবলের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এই সফরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy