Advertisement
০৭ মে ২০২৪

গোলকিপার হবে না বলে ছাড়তে চেয়েছিল ফুটবল

সিদ্ধান্ত বদলে গেল কী ভাবে? ‘‘আমার বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। অ্যাকাডেমি ছাড়লেও আমার বাড়ি ফেরার উপায় ছিল না। কারণ, বাবা আমাকে বাড়িতে ঢুকতেই দিতেন না। তখন কোথায় যেতাম?’’, বলে ফেলল প্রভসুখন।

গোলরক্ষক প্রভসুখন সিংহ গিল

গোলরক্ষক প্রভসুখন সিংহ গিল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২০
Share: Save:

বছর ছয়েক আগে কোচের উপর ক্ষোভে ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিল প্রভসুখন সিংহ গিল। কারণ, তাঁকে রক্ষণের বদলে গোলপোস্টের নীচে দাঁড়াতে বলেছিলেন চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমির কোচ হরজিন্দর সিংহ। আর সেই প্রভসুখন-ই এখন অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে বিভোর।

পঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলায় জন্ম প্রভসুখনের। উচ্চতা ছ’ফুট। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির ফাঁকে শোনাল তার কোচের প্রতি ক্ষোভ এবং উত্থানের কাহিনি, ‘‘আমি ডিফেন্ডার ছিলাম। চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে ডিফেন্ডার হিসেবেই ট্রায়াল দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। অথচ কয়েক দিন প্র্যাকটিস করার পরেই হরজিন্দর স্যার বললেন, তোমার উচ্চতা খুব ভাল। এ বার থেকে শুধু গোলকিপিং করবে। প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছিল। সব দলেই তো লম্বা স্ট্রাইকার দরকার। তা হলে আমাকে কেন কোচ গোলরক্ষক বানাতে চাইছেন? তা ছাড়া গোলরক্ষকের পুরোটাই তো হাত দিয়ে খেলা। আমি তো এর আগে কখনওই গোলপোস্টের নীচে দাঁড়াইনি।’’

হতাশ প্রভসুখনের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, কোচের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে তার ফুটবলজীবন শেষ করে দেওয়া। তার কথায়, ‘‘আমার এত কষ্ট হয়েছিল যে, হস্টেলে ফিরে কেঁদে ফেলেছিলাম। ঠিক করে নিয়েছিলাম, এখানে আর থাকব না। কারণ, গোলরক্ষক আমি হতে চাই না।’’

সিদ্ধান্ত বদলে গেল কী ভাবে? ‘‘আমার বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। অ্যাকাডেমি ছাড়লেও আমার বাড়ি ফেরার উপায় ছিল না। কারণ, বাবা আমাকে বাড়িতে ঢুকতেই দিতেন না। তখন কোথায় যেতাম?’’, বলে ফেলল প্রভসুখন। সঙ্গে যোগ করল, ‘‘তার পর দেখলাম, অধিকাংশ ম্যাচে আমাকেই গোলরক্ষক হিসেবে খেলাচ্ছেন কোচ। বাজে গোল খেলেও বেশি বকাবকি করছেন না। তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, গোলরক্ষক হিসেবেই সফল হব। ভাগ্যিস সে দিন অ্যাকেডেমি ছেড়ে চলে যাইনি।’’

মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত প্রভসুখনের পাশে আরও এক জন দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার রবীন্দ্র সিংহ। লেফট ব্যাক হলেও দলের প্রয়োজনে যে কোনও পজিশনে খেলতে পারতেন। প্রভসুখনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন রবীন্দ্র। জানলুইজি বুফন ও গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু-র ভক্ত বলল, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে থাকত রবীন্দ্র। ও আমার দাদার মতো। ইস্টবেঙ্গলে বিভিন্ন পজিশনে ওকে কী ভাবে ব্যবহার করতেন কোচ, সেই কাহিনি শোনাত। ও যদি পারে, তা হলে আমি কেন পারব না। নতুন লড়াই শুরু হল আমার।’’

চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে খেলতে খেলতেই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের অ্যআকাডেমির ট্রায়ালে নির্বাচিত হয় প্রভসুখন। তার পর অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের দলে।

এখনও কি ইচ্ছে করে স্ট্রাইকার হতে? প্রভসুখনের জবাব, ‘‘একেবারেই না। এখন আমি স্বপ্ন দেখি বুফনের মতো উড়ে গিয়ে বল ধরতে। স্বপ্ন দেখি, গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর মতো ইউরোপের ক্লাব ও সিনিয়র জাতীয় দলে খেলার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE