কুইন এলিজাবেথ অলিম্পিক পার্কে শুক্রবার বিদ্যুৎ পড়ল দু’বার।
৪১টা স্টেপ। ৯.৮৭ সেকেন্ড। উসেইন বোল্টের একশো মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালে প্রথম বিদ্যুতটা পড়তে দেখেন দর্শকরা। ছ’সপ্তাহের চোট সারিয়ে নামার পরও জামাইকান স্প্রিন্ট সম্রাটের বছরের সেরা সময়ে রেস জেতার মেজাজটা তো গত সাত বছর ধরে এ রকমই। তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
দ্বিতীয় বিদ্যুতটা পড়ল রেসের পর সাংবাদিক সম্মেলনে।
বোল্টের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মাইকেল গ্যাটলিন নিয়ে প্রশ্নটা উড়ে আসার পর। মার্কিন অ্যাথলিট এ বছর ১০০ মিটার ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে শেষ করেছেন চার বার। সবচেয়ে কম, গত মাসে দোহা মিটে ৯.৭৪। তাই আগামী মাসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও গ্যাটলিনই ফেভারিট বলে শোরগোল কম হচ্ছে না। গ্যাটলিনের চ্যালেঞ্জের মুখে তাঁর এক নম্বরের আসনটা টলে গেল কি না প্রশ্নটা করতেই গর্জে উঠলেন বোল্ট, ‘‘আমি এখনও এক নম্বর। কখনও দু’নম্বর ছিলাম না। অবসরের আগে পর্যন্ত এক নম্বরই থাকব।’’
এ রকম মেজাজে বোল্টকে শেষ কবে দেখা গিয়েছে ভক্তরা মনে করতে পারছেন না। অথচ রেসের আগে খোশমেজাজেই ছিলেন জামাইকান মহাতারকা। সাধারণত পারফর্ম করার আগে তাঁর অনবদ্য ভঙ্গি, নাচে গোটা স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখেন, লন্ডনেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। কে বলবে তখন ছ’টি অলিম্পিক সোনার মালিককে দেখে চলতি মরসুমে ১০ সেকেন্ডের কম এক বারও কোনও মিটে দৌড়তে পারেননি। তাঁর সঙ্গে বৃষ্টিভেজা ট্র্যাক আর স্টেডিয়ামে হাওয়ার বিপরীতে দৌড়নো তো ছিলই। সে সব হেলায় সামলালেন। এতটাই অনায়াস ছিল তাঁর দৌড়, টুইটারে মন্তব্য ভাসতে থাকে, ‘‘দৌড়ল কোথায়, এ তো পার্কে জগিং করছিল বলে মনে হল।’’
তবে মেজাজে জিতলেও একটা কাঁটা কিন্তু থাকছেই। সেটা গ্যাটলিনকে নিয়েই। মার্কিন অ্যাথলিটের সময়কে টপকে গেলে চিনে বিশ্ব মিটের আগে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারতেন তিনি। বোল্ট নিজেও সেটা জানেন, তাই রেসের শুরুটা ভাল না হওয়ার আক্ষেপটা স্পষ্ট ফুটে উঠছিল তাঁর কথায়। সেই কারণেই হয়তো গর্জে ওঠা, আক্ষেপও, ‘‘আরও দ্রুত দৌড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্টার্টিংটা ভাল হয়নি। শুরুটা ভাল না হলে ছন্দটা সে রকম থাকে না। মন খারাপ হয়ে যায়।’’ তাই বেজিংয়ে নামার আগে তাঁকে যে এখনও খাটতে হবে স্বীকার করে নিয়েছেন বোল্ট। ২০০৮ অলিম্পিকে ঠিক যেখানে প্রথম চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড করে, সেই বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়ামে নামার প্রস্তুতি নিয়ে বোল্ট বলেছেন, ‘‘নিজেকে আরও তুলে আনতে হবে। এই দুটো রেসে অনেক উপকার হয়েছে।’’
শোনা যাচ্ছিল এ মরসুমে কোনও মিটে না হলেও প্র্যাক্টিসে ৯.৭ সেকেন্ডে নিয়মিত দৌড়চ্ছেন বোল্ট। যে প্রসঙ্গ উঠতেই জামাইকান মহাতারকা বলে দেন, ‘‘না, বললে মিথ্যে বলা হবে। আসলে প্র্যাক্টিসে তো অনেক চাপমুক্ত হয়ে দৌড়নো যায় তাই। তবে নিজের সময় নিয়ে আরও খাটতে হবে। কোনও নির্দিষ্ট সময় সামনে নেই। আরও আরও দ্রুত দৌড়তে চাই।’’ যা বিশ্ব মিটের আগে বোল্টের পাল্টা গ্যাটলিনকে চাপে রাখার কৌশল বলেই মনে করছেন অনেকে।
সাত বছরে এই আত্মবিশ্বাসের বিদ্যুতটারও তো ঝলসে ওঠা দেখতে অভ্যস্ত তাঁর ভক্তরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy