Advertisement
E-Paper

শেষ বেলায় মৃত ম্যাচে প্রাণ ফেরালেন ক্যাপ্টেন কোহলি

ফতুল্লার ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে তখন একটা গমগমে আওয়াজ ভেসে আসছে। ম্যাচ ততক্ষণে শেষ। পুরস্কার বিতরণও চুকেবুকে গিয়েছে। ড্রেসিংরুমে বিরাট, রোহিতরা তবু চুপচাপ দাঁড়িয়ে। মন দিয়ে কিছু শুনে যাচ্ছেন। রবি শাস্ত্রীর কথা শুনছেন।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৫:০৪
ম্যাচ শেষে দুই অধিনায়ক। ছবি: এপি।

ম্যাচ শেষে দুই অধিনায়ক। ছবি: এপি।

ফতুল্লার ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে তখন একটা গমগমে আওয়াজ ভেসে আসছে। ম্যাচ ততক্ষণে শেষ। পুরস্কার বিতরণও চুকেবুকে গিয়েছে। ড্রেসিংরুমে বিরাট, রোহিতরা তবু চুপচাপ দাঁড়িয়ে। মন দিয়ে কিছু শুনে যাচ্ছেন।

রবি শাস্ত্রীর কথা শুনছেন।

বৃষ্টির প্রকোপে জেতা ম্যাচ হেরে টিম যাতে মুষড়ে না পড়ে, তাই শোনা গেল টিম ডিরেক্টরের এমন উদাত্ত বক্তৃতা-প্রদান। টিমকে বলে রাখা যে, টেস্টটা ড্র হলেও নৈতিক জয়টা তোমাদের। ২০১৬ পর্যন্ত ঠাসা ক্রিকেট-সূচি সামনে। দেশের মাটিতে প্রচুর টেস্ট খেলতে হবে। একটা ড্রয়ে কিছু আসে-যায় না। আর পুরো খেলা হলে ভারতই জিতত। টিম ডিরেক্টর বলে রাখলেন যে, এমন আগ্রাসী মনোভাব যেন না পাল্টায়। রাতের দিকে আবার গুলশনের কাছাকাছি এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় টিমকে ডিনারে নিয়ে গেলেন শাস্ত্রী ও প্রশাসনিক ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে। সেখানে খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে ডিজের গান চলল। আসলে হরভজন সিংহ, ঋদ্ধিমান সাহারা সোমবারই দেশে ফিরে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য তাঁদের জন্য কিছু করা। সর্দার সন্ধে নাগাদ ঢাকাই জামদানিও কিনে আনলেন। পুরোটাই বৃষ্টির হতাশা থেকে টিমকে চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা।

তবে মনে হয় না টিম ডিনার বা বক্তৃতা না হলেও বিরাটদের ক্রিকেট-ব্র্যান্ড বদলানোর কোনও ইচ্ছে থাকত বলে। বৃষ্টিতে আগাম মৃত্যু ঘটা ম্যাচের শেষ দিনেও ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বুঝিয়ে গেলেন তাঁর ‘ডিএনএ’ সত্যিই একটু স্বতন্ত্র! ব্যাটিংয়ে। ক্যাপ্টেন্সিতে।

স্লিপ। লেগস্লিপ। শর্ট লেগ। শর্ট মিড উইকেট।

ফার্স্ট স্লিপ। সেকেন্ড স্লিপ। লেগ স্লিপ। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ।

দেখলে মনে হবে, বাইশ গজে বোধহয় শিরা-উপশিরায় বিদ্যুত্‌তরঙ্গ বইয়ে দেওয়ার ম্যাচ চলছে। মারমার-কাটকাট যুদ্ধে এমন ঘাড়ের উপর নাগাড়ে ফিল্ড তুলে রাখার থিওরি বোধগম্য হয়। কিন্তু যে টেস্টের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে গিয়েছে পঞ্চম দিনের আগে, যার ভবিতব্যে ড্র বাদ দিয়ে আর কিছু পড়ে নেই, সেখানে আর এত খাটাখাটনির রাস্তায় কে যাবে?

বিরাট কোহলি যাবেন। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে মরা ম্যাচেও চাপের মুখে ফেলে দেবেন বিপক্ষকে। তিরিশ ওভার পড়ে জেনেও ফলো অন করাবেন বিপক্ষকে।

এ-পার বাংলা ধন্যবাদ দিতে পারে তামিম ইকবাল আর ইমরুল কায়েসকে। ইমরুল প্রথম ইনিংসে টিমের হয়ে সর্বোচ্চ তো করে গেলেনই, একই দিনে দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নেমে তামিমের সঙ্গে উইকেটে অক্লান্ত পড়ে থাকলেন। কে বলতে পারে, দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম পনেরোয় গোটা তিনেক বার করে নিতে পারলে কোহলি পরের পনেরোর জন্যও ঝাঁপাতেন না?

ঠিক এতটাই অবিশ্বাস্য ভাবনা এ দিন ভাবতে বাধ্য করেছিলেন কোহলি। বৃষ্টি গত চার দিনের মতো আজও ভুগিয়েছে। খেলা শুরু হতে দুপুর একটা বেজেছে। কিন্তু কোহলি ঘণ্টা আড়াইয়ের মধ্যেই প্রথম ইনিংসের বঙ্গ ব্যাটিংকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিলেন। লেগসাইড প্যাক করে সেই লাইনে বোলারদের ক্রমাগত করিয়ে গিয়ে। থিওরি যে ভুল ছিল না, প্রমাণ রবিচন্দ্রন অশ্বিন। পাঁচটা উইকেটের মধ্যে তিনটে এল ও ভাবে। প্রত্যাবর্তনের হরভজন সিংহও বেশ ভাল। তিনটে নিলেন। ওয়াসিম আক্রমের উইকেটসংখ্যা (৪১৪) টপকে টেস্টের সর্বোচ্চ শিকারিতালিকায় চলে এলেন ন’নম্বরে। এত কিছুর পরেও জয় আসেনি। সম্ভব ছিলও না। কিন্তু অন্তিমলগ্নের সাড়ে তিন ঘণ্টার রোমাঞ্চও কম নয়।

ক্যাপ্টেন কোহলি তো অন্তত দেখিয়ে গেলেন ভস্মীভূত ম্যাচ-ভাগ্যের ছাইগাদাতেও স্ফুলিঙ্গের জন্ম দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব। খুব সম্ভব।

Virat Kohli India Bangladesh cricket rain Ravi Shastri Rajarshi Gangopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy