Advertisement
E-Paper

শান্তির আবহ পাল্টে গেল ট্রফি-শ্যুটে

এ দিনও পাকিস্তান নিয়ে সেই শান্তিরই রিংটোন সেট করে এলেন কোহালি। বললেন, ‘‘পাকিস্তান খুব পরিশ্রম করে ফাইনালে এসেছে। আমাদের মতো ওরাও ফাইনালটা জিততে চাইবে।’’ একটু পরে একই জায়গায় বসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সরফরাজ আমেদ।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৪:৩২
ওভালে আইসিসি-র পোস্টারে দুই সেনাপতি। ছবি: রয়টার্স

ওভালে আইসিসি-র পোস্টারে দুই সেনাপতি। ছবি: রয়টার্স

রবিবারের ফাইনালের আগে কি দুই অধিনায়কের মুখে শুধুই শান্তির কথাবার্তা চলবে? নাকি পুরনো দিনের সেই আগুনের ফুলকিও উড়তে দেখা যাবে? এমন একটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছিল ওভালে।

বিরাট কোহালির মুখে পাকিস্তানকে খোঁচা দেওয়ার প্রবণতা কোথায়, তাঁর মুখে তো উল্টে পাকিস্তান নিয়ে প্রশংসা। এজবাস্টনে বসে ফাইনালে ওঠার পরেই বলেছিলেন, প্রথম ম্যাচে হারের পরেও পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন দেখে তিনি মুগ্ধ।

এ দিনও পাকিস্তান নিয়ে সেই শান্তিরই রিংটোন সেট করে এলেন কোহালি। বললেন, ‘‘পাকিস্তান খুব পরিশ্রম করে ফাইনালে এসেছে। আমাদের মতো ওরাও ফাইনালটা জিততে চাইবে।’’ একটু পরে একই জায়গায় বসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সরফরাজ আমেদ। পাক অধিনায়কের মুখ থেকেও গরম গরম কোনও বিবৃতি পাওয়া গেল না।

দুই অধিনায়কের ট্রফি নিয়ে ফটো সেশনটায় গিয়ে বোঝা গেল, ভিতরে ভিতরে কী রকম ফুটন্ত আবহাওয়া হয়ে রয়েছে। দুই ফাইনালিস্টকে নিয়ে আইসিসি সুন্দর কোলাজ তৈরি করেছে। চলতি টুর্নামেন্টে দু’টো দলের মোড় ঘোরানো কিছু মুহূর্ত সেই কোলাজে রয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কোহালি এবং সরফরাজ পোজ দিলেন। দু’জনের মধ্যে বিশেষ কথা হল না।

দু’জনে স্ট্যান্ডের নীচ দিয়ে হেঁটে মাঠে এলেন ট্রফি নিয়ে ছবি তুলতে। সেখানেও কোহালির চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশ সিরিয়াস। ‘উই আর রেডি ফর ইট’ সংলাপটা এমন ভাবে বললেন,মনে হল, সরফরাজকে শুনিয়ে রাখতে চান, কাল তোদের হারাব। ফটো-শ্যুট হওয়ার পরে পাক অধিনায়কের সঙ্গে কোহালির হাত মেলানো দেখেও কেউ বলবে না, দু’জনের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল টেমসের পারে! বরং আবেগপূর্ণ মানুষ হয়েও খুব ঠান্ডা একটা ‘হ্যান্ডশেক’ করতে দেখা গেল ভারত অধিনায়ককে।

পরিষ্কার হয়ে গেল, সাংবাদিক বৈঠকে বলা কথাগুলো আসলে চাপ কমানোর উদ্দেশে বলা। যেমন কোহালি বলে গেলেন, এটাকে আর একটা ম্যাচ হিসেবেই দেখছেন। প্র্যাকটিসে একই রকম তীব্রতা। একই রুটিন। ‘‘আমরা কেউ আলাদা ম্যাচ হিসেবে এটাকে দেখছি না,’’ বক্তব্য কোহালির। পরে গিয়ে কখনও নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, সে দিন সত্যিটা বলিনি। আসলে পাকিস্তান ম্যাচের চাপটাই আলাদা। যেমন তাঁর আগের সব অধিনায়ক করেছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে রাহুল দ্রাবিড়— সকলে।

ভারতীয় অনুশীলনে যদিও সামান্য আতঙ্ক তৈরি হল অশ্বিনকে নিয়ে। ফিল্ডিং করার সময় হঠাৎ করে তিনি পড়ে গিয়ে হাঁটুতে চোট পান। ফিজিও ছুটে আসেন। এর পর হাঁটুতে স্ট্র্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয় অশ্বিনের। যে হেতু সেই সময় তাঁকে অস্বস্তিতে দেখা যাচ্ছিল, সাময়িক ভাবে প্রশ্ন তৈরি হয় ফাইনালে খেলতে পারবেন তো? ফিজিও প্যাট্রিক ফারহার্টের সঙ্গেও খানিক্ষণ সময় কাটাতে হয় তাঁকে। পরে অবশ্য নেটে ফিরে গিয়ে বল করেন অশ্বিন। পুরোপুরি অস্বস্তি না কাটলেও ফাইনালে খেলবেন বলেই খবর।

সম্ভবত এজবাস্টনের সেমিফাইনালে যে টিম খেলেছিল, তাঁরাই খেলবেন ফাইনালে। অশ্বিনের অস্বস্তি হয়তো কেটে যাবে। ফাইনালের মহড়াতেও কাটল না কোচ-অধিনায়ক অস্বস্তি। শনিবারও দেখা গেল, কোহালি এবং কুম্বলে সেই দূরে দূরেই থেকে গেলেন। কোহালিরা যখন ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছেন নেটে, তখন কুম্বলে অন্য দিকে যশপ্রীত বুমরা-দের নিয়ে আলাদা বোলিং সেশন করছেন। কোহালি ব্যাগ গুছিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাব যাব করছেন। সেই সময় কুম্বলে এসে এক বার কথা বললেন। কোহালিকে দেখা গেল ঘাড় নেড়ে চলেছেন। সব মিলিয়ে মেরেকেটে হয়তো তিন মিনিটের কথোপকথন।

একই পাতায় দুই শিশির বিন্দু নয়, দু’টি পাতা হয়ে থেকে গেলেন তাঁরা। গোটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জুড়ে। ট্রফির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে রবিবার। কোচকে নিয়ে কী করা হবে, সেই মামলা নিষ্পত্তির প্রশ্ন তার পরেও থেকে যাবে। এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, নতুন কোচ চান অধিনায়ক এবং দলের বেশির ভাগ সিনিয়র ক্রিকেটার।

কোহালি-কুম্বলে টেনশনের তুলনায় ভারত-পাক রেষারেষির পারদ কম মনে হবে। বরাবরের ভারত-পাক দ্বৈরথ মানে হচ্ছে, মাঠের বাইরে ক্রিকেটারেরা দারুণ বন্ধু। কিন্তু মাঠের মধ্যে কেউ কাউকে ছাড়বেন না। মাঠের বাইরে যেমন জাভেদ মিয়াঁদাদ খুব ভাল বন্ধু ছিলেন রবি শাস্ত্রীর। কিন্তু মাঠের মধ্যে দু’জনের ভীষণ লাগত। একটি ভারতীয় চ্যানেলের জন্য শাস্ত্রী এবং মিয়াঁদাদ গত কাল একটি অনুষ্ঠান করেছেন। সেখানেও মিয়াঁদাদ প্রথমে স্লেজিং করেন শাস্ত্রীকে, ‘‘শারজায় তোমাদের কত হারিয়েছি। দেখো, রবিবারও এক জিনিস ঘটতে পারে।’’ শাস্ত্রী দ্রুত জবাব দিয়ে দেন, ‘‘জাভেদ, তোমাদের যা মিডল-অর্ডার দেখছি, তুমি প্যাড পরে ফ্লাইট ধরে লন্ডন চলে এসো। ফার্স্ট ইলেভেনে চান্স পেয়ে যাবে।’’

ইমরান, মিয়াঁদাদ, শাস্ত্রী, কিরণ মোরেদের যুগ আর নেই। যে ভারত-পাক ম্যাচের আগে বারুদ উৎপন্ন হবে। এখন পেশাদারদের যুগ। আগুন যা আছে, ভিতরে রাখো। মাঠে খুব দরকার পড়লে স্বমূর্তি প্রকাশ করো। না হলে পেশাদারদের মতো এসে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজের কাজটা করে চলে যাও।

এর মধ্যেই কখনওসখনও ট্রফির জন্য পোজ দিতে এসে কোহালির চোখ বড় বড় করে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের দিকে তাকানোর দৃশ্য নজরে আসবে। কখনও মহম্মদ আমিরকে বল করে রোহিত শর্মার দিকে কড়া চাহনি নিয়ে ধেয়ে আসতে দেখা যেতে পারে। কখনও পাকিস্তানের বোলিং কোচ আজহার মেহমুদ চতুর ভঙ্গিতে মনে করিয়ে দেবেন, ‘‘বিশ্বকাপ বা বিশ্ব মানের ইভেন্টে হয়তো ভারত বেশি জিতেছে। কিন্তু সমস্ত রকম ম্যাচ মিলিয়ে আমরাই এগিয়ে।’’ মিয়াঁদাদ বনাম মোরে সেই বিখ্যাত ব্যাঙের মতো লাফালাফি বা আফ্রিদি বনাম গম্ভীর বা শোয়েব বনাম হরভজন তেড়েফুড়ে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

ক্রিকেট সিস্টেমটাই যে পাল্টে দিয়েছে। ভারত-পাক এখন যতটা না আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর ম্যাচ, তার চেয়েও বেশি করে বল্গাহীন আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দ্বৈরথ। যারা যত ভাল সেটা করতে পারবে, তাদের তত জেতার সম্ভাবনা বেশি!

শনিবার লন্ডনে রাতের দিকেও খুব গরম। রবিবার দুপুরের দিকে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ের আশঙ্কা। ক্রিকেট ভক্তদের প্রার্থনা থাকবে, প্রকৃতির ঝড় কেটে গিয়ে যেন ক্রিকেটের ঝড় ওঠে।

Virat Kohli India vs Pakistan The Oval cricket Champions Trophy ICC Champions Trophy 2017 চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বিরাট কোহালি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy