এক সময় বাবার হাত ধরে এই অনুষ্ঠানেই প্রতি বছর আসত ছেলেটি। বসত মঞ্চের সামনে।
সময় যত এগিয়েছে, দর্শকাসন থেকে মঞ্চে উঠে ছেলেটি পুরস্কার নিয়েছে বহু বার।
এখন আর দর্শকাসনে নয়, তাঁর জায়গা মঞ্চে। সিএবি প্রেসিডেন্টের আসনে। তিনি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
ছোটবেলা থেকেই তাই সিএবি-র পুরস্কার অনুষ্ঠান তাঁর কাছে বছরের চতুর্দশ পার্বণের মতো। তাই তিনি যখন প্রধান কর্তা, তখন তাতে অন্তরের ছোঁয়া তো থাকবেই।
মঙ্গলবার ‘দাদা’র মঞ্চে ‘দিদি’-র আগমন তো সেই কারণেই।
‘‘মাত্র সপ্তাহ দু’য়েকের নোটিসে বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচ করার দায়িত্ব পেয়ে সবার আগে পাশে পেয়েছিলাম দিদি-কে,’’ স্মরণীয় সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন সৌরভ। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চে তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরভ বলেন, ‘‘এসএমএস করে তা জানানোর পাঁচ মিনিটের মধ্যে শহরের বাইরে থেকে ফোন করে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন দিদি। যা না পেলে ম্যাচটাই হতো না।’’
বাংলার আরও দুই ক্রিকেট কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামী ও পলাশ নন্দীকে সম্মান জানানোর পরে মমতা বলেন, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলার মাটি ছুঁয়ে সৌরভের নাম আসবেই। বাংলা সে জন্য গর্বিত।’’ বাংলার আর এক গর্ব ঝুলনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘বিশ্বকাপ ফাইনালে হারলেও সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছ। এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সে জন্য শুভেচ্ছা রইল। নিশ্চয়ই বিশ্বকাপ জিততে পারবে তোমরা। পারব না বলে কিছু হয় না।’’
আরও পড়ুন: বিরাটের সঙ্গে তুলনা ‘না-পসন্দ’ বাবরের
ইডেনে প্রয়াত সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার মূর্তি বসানোর অনুরোধও করেন মুখ্যমন্ত্রী। যা নিয়ে অনুষ্ঠানের পরে সৌরভ বলেন, ‘‘সেনাবাহিনীর কাছে এই অনুরোধ আমরা দু’বছর ধরেই করছি। এখনও জবাব পাইনি।’’ তবে বড় চমকটা এল এর পরে। মঞ্চের সামনে বসা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লকে ডেকে মমতা বলে দেন, ‘‘রাজ্য সরকারও এ বার থেকে ক্রিকেটে সফলদের পুরস্কার দেবে। সিএবি-র সাহায্য নিয়েই তা করা হবে।’’
পুরস্কার নেওয়ার পরে ঝুলন বিশ্বকাপের গল্প শুনিয়ে বলেন, ‘‘যখন আমি তেমন ভাল বল করছিলাম না, তখন কোচকে বলেছিলাম, আমাকে বসিয়ে দিন না। কিন্তু কোচ বলেন, না, তোমাকে আমরা ম্যাচে চাই।’’ নেটে মিতালি রাজকে অফ স্টাম্পের বাইরের বল করে করে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মেগ ল্যানিংকে আউট করার প্রস্তুতি নেওয়ার গল্পও শোনান সঞ্চালক হর্ষ ভোগলেকে।
বঙ্গ ক্রিকেটে সারা জীবনের অবদানের জন্য পলাশ নন্দীর হাতে জীবনকৃতি সম্মানও এ দিন তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ও সৌরভ। পলাশ বলেন, ‘‘প্রিয় মানুষদের হাত থেকে এই সম্মান পাওয়াটা আমার কাছে বিরাট ব্যাপার। আমার মা ও কোচ কল্যাণ বিশ্বাসের অবদানই সবচেয়ে বেশি আমার ক্রিকেট জীবনে। ধন্যবাদ দিতে চাই আমার ক্লাবগুলোকেও।’’
কোচবিহার ট্রফিজয়ী বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলকেও এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তবে বিজয় হাজারে ট্রফিতে রানার্স বাংলার মাত্র তিনজনের মঞ্চে ওঠা এবং ভিজি ট্রফিতে অভিষেক হওয়া রোশন সিংহকে মঞ্চে না ডাকার ঘটনা বেশ অবাক করার মতো।