Advertisement
E-Paper

কাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ, সাম্পাওলির ভুলেই বিদায় মেসিদের

এই বিশ্বকাপে প্রত্যেকটা ম্যাচেই ফ্রান্স উন্নতি করেছে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে দিদিয়ে দেশঁর দলকে অনেক বেশি পরিণত দেখিয়েছে। নিখুঁত অঙ্ক করে প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলেছেন পোগবা-রা।

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৫
স্বপ্নভঙ্গ: আর্জেন্টিনার বিদায়ে বিষণ্ণ মেসি। :ছবি: গেটি ইমেজেস।

স্বপ্নভঙ্গ: আর্জেন্টিনার বিদায়ে বিষণ্ণ মেসি। :ছবি: গেটি ইমেজেস।

ফ্রান্স ৪ • আর্জেন্টিনা ৩

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার প্রথম একাদশ দেখেই আঁতকে উঠেছিলাম। এ কী দল নামাচ্ছেন হর্হে সাম্পাওলি! ৪-৩-৩ ছকে ফরোয়ার্ডে লিয়োনেল মেসির সঙ্গে ক্রিস্তিয়ান পাভন এবং অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সের্খিয়ো আগুয়েরো, গন্সালো ইগুয়াইন!

মেসির মতো শিল্পীকে কোনও দলই স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়ার ভুল করবে না। ম্যাচের প্রিভিউতেই লিখেছিলাম, মাঝমাঠে এনগোলো কঁতের উপরে থাকবে আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে আটকানোর মূল দায়িত্ব। তাঁকে সাহায্য করবেন পল পোগবা। ফরাসি পাহারাদারদের এড়ানোর জন্যই মেসি একটু পিছন থেকে খেলছিলেন। একেবারেই ঠিক ভাবনা। কারণ, ওঁকে আটকানোর জন্য কঁতে ও পোগবা নিজেদের জায়গা ছেড়ে উঠে যাবেন। তৈরি হবে শূন্যস্থান। যা কাজে লাগাবেন অন্য ফুটবলাররা। এই কারণেই আগুয়েরো বা হিগুয়াইনের মধ্যে অন্তত এক জনকে প্রথম দলে রাখা উচিত ছিল সাম্পাওলির। যাঁদের কাজ হত ফ্রান্সের ডিফেন্ডারদের সব সময় অস্বস্তিতে রাখা। দুই প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বল থেকে গোল করার চেষ্টা করা। অবাক হয়ে দেখলাম তার কিছুই হল না। উল্টে ১১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দিলেন আঁতোয়া গ্রিজম্যান।

এই বিশ্বকাপে প্রত্যেকটা ম্যাচেই ফ্রান্স উন্নতি করেছে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে দিদিয়ে দেশঁর দলকে অনেক বেশি পরিণত দেখিয়েছে। নিখুঁত অঙ্ক করে প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলেছেন পোগবা-রা। আর্জেন্টিনা যখন আক্রমণে উঠেছে, পুরো দল নেমে এসেছে নিজেদের রক্ষণে। একই ভাবে আক্রমণে উঠেছেন চার-পাঁচ জন। দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণ থেকেই পেনাল্টি আদায় করেন কিলিয়ান এমবাপে। বল নিয়ে দ্রুত গতিতে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। এমবাপেকে ফাউল করেন মার্কোস রোহো। নিশ্চিত ভাবেই পেনাল্টি। গোল করতে ভুল করেননি গ্রিজম্যান। ২৬ মিনিটে বক্সের মধ্যে স্যামুয়েল উমতিতির হাতে বল লেগেছিল। আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা পেনাল্টির দাবি জানিয়েছিলেন। রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, পেনাল্টি ছিল না। ।

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ফিরল প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে গোল করেন প্যারিস সাঁ জারমাঁয় এমবাপের সতীর্থ দি মারিয়া। ভেবেছিলাম, দ্বিতীয়ার্ধে হয়তো দলে পরিবর্তন করবেন সাম্পাওলি। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে আগুয়েরো বা হিগুয়াইনের মধ্যে কাউকে হয়তো নামাবেন। কিন্তু সেই একই দল নামালেন আর্জেন্টিনা কোচ। যদিও দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যেই গ্যাব্রিয়েল মের্কাদোর গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। গোলের নেপথ্যে সেই মেসি। ফ্রান্সের পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া এভের বানেগার ফ্রি-কিক বিপন্মুক্ত করার চেষ্টা করেন পল পোগবা। কিন্তু বল পৌঁছয় মেসির পায়ে। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের নেওয়া শট মের্কাদোর পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়।

এই গোলটাই যেন ফ্রান্সকে তাতিয়ে দিয়েছিল। ৫৭ মিনিটে রাইট ব্যাক বঁজামা পাঁভা দুর্ধর্ষ গোলে সমতা ফেরালেন। আমার মতে এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোল। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের আউট স্টেপে নেওয়া ওঁর শট যে ভাবে বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকল, তাতে গোলরক্ষকের কিছু করার ছিল না। ৬৪ মিনিটে ফের ফ্রান্স এগিয়ে গেল এমবাপের গোলে।

পিএসজি তারকা এ দিন একাই কার্যত শেষ করে দিলেন মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। এমবাপে, গ্রিজম্যান এবং অলিভিয়ের জিহুর ত্রয়ীর সামনে অসহায় দেখাচ্ছিল আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারদের। এমবাপের মধ্যে থিয়েরি অঁরির ছায়া দেখছিলাম। বলের উপরে দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ, প্রচণ্ড গতিতে বিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় গোল করার প্রবণতা— অঁরিকে মনে করাচ্ছিল। চার মিনিটের মধ্যে ফের গোল করলেন এমবাপে। দুর্দান্ত খেলে সমালোচকদের জবাব দিলেন পোগবা।

শেষ পর্যন্ত আগুয়েরোকে ৬৬ মিনিটে নামালেন সাম্পাওলি। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি স্ট্রাইকার সংযুক্ত সময়ে গোলও করেন। কিন্তু তত ক্ষণে মেসির বিশ্বকাপ-ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে।

Football FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Argentina Lionel Messi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy