গ্যালারিতে হুঙ্কার, ‘যা আমাদের সম্পত্তি সেটা ফেরত নেবই’। মাঠে বেঙ্গালুরুর দাপটের সামনে অসহায় দর্শক ডং-সঞ্জুরা। রবিবার কান্তিরাভায়।-ফেসবুক
ইস্টবেঙ্গল- ১ : বেঙ্গালুরু এফসি- ৩
(ডং) (লিংডো, কিম, মালসামজুয়ালা)
বেঙ্গালুরুতেই বেজে গেল বিদায়ঘণ্টা!
সুনীল ছেত্রীদের কাছে হেরে আই লিগ জয়ের স্বপ্ন শেষ ইস্টবেঙ্গলের। লাল-হলুদে হয়তো প্রথম ইনিংস শেষ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যেরও। সূত্রের খবর, পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন লাল-হলুদ কোচ। সোমবার শহরে নেমে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুধু ঘোষণা করবেন। বিশ্বজিৎ অবশ্য তাঁর পদত্যাগের বিষয় নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে টিম ম্যানেজার অ্যালভিটো ডি’কুনহা বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে বললেন, ‘‘বিশুদার সঙ্গে আমার রাতে কথা হয়েছে। উনি আর কোচ থাকতে চাইছেন না। কথা বলে মনে হল, কাল কলকাতায় ফিরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন!’’
বেঙ্গালুরুর জয়ে অবশ্য ইস্টবেঙ্গল নয়, মোহনবাগানের আই লিগ জয়ের আশাও প্রায় নিভে গেল। তবে রবিবারের ম্যাচের পরে লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমের ফাটলটা যেন আরও বড় হয়ে গেল! সব আঙুল কোচের দিকে। ফুটবলার থেকে কোচিং স্টাফ, সবার এক মত, ‘‘বিশুদা কত বড় কোচ জানি না। তবে উনি ম্যান ম্যানেজমেন্টে জিরো।’’ বেলো রজ্জাক তো একটা সময় বলেও ফেলেছিলেন, ‘‘সঞ্জয় সেন খুব বড় কোচ নয়। তবে ওঁর ম্যান ম্যানেজমেন্ট দুর্দান্ত। বিশ্বজিতের কোনওটাই নেই।’’
জানা গেল, বেঙ্গালুরুতে হারের পর ড্রেসিংরুমেই নাকি কোচকে ঘিরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। কেন না অর্ণব মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে খেলার কথা ছিল দীপক মণ্ডলের। যাতে ডিফেন্সে অভিজ্ঞতার অভাব না হয়, বল সাপ্লাইও হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করেন বিশ্বজিৎ। এবং সারাক্ষণ দীপককে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। মেহতাব হোসেনের খেলার কথা থাকলেও, খেলানো হয় হরমনজ্যোৎ খাবরাকে। যা নিয়ে অসম্ভব চটে যান দলের বাকি ফুটবলাররা। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে এক লাল-হলুদ ফুটবলার বলছিলেন, ‘‘কোচের খামখেয়ালিপনার জন্য আমরা হেরে গেলাম। আসলে উনি নিজেই সব সময় দ্বিধায় থাকেন। বাস্তবে কী চাইছেন আর কী চাইছেন না!’’
বেঙ্গালুরুতে শুরু থেকেই নড়বড়ে দেখাচ্ছিল লাল-হলুদকে। যদিও কোচের ‘খামখেয়ালিপনার’ শিকার সেই ডু ডংয়ের গোলেই এগিয়ে যায় তাঁর দল। কিন্তু যে দলে কোনও ভারসাম্য নেই, সে দল কতক্ষণই বা লিড ধরে রাখতে পারে! কিছুক্ষণের মধ্যেই ১-১ করে ফেলেন ইউজেনসন লিংডো। অবশেষে অবনতি হতে হতে যেটা ম্যাচ শেষে হয়ে দাঁড়ায় ১-৩। নিট ফল, আই লিগে এ বারের মতো বাংলার স্বপ্ন প্রায় শেষ।
বিশ্বজিতের সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা বার বার চোখে পড়েছে, সেটা হল তিনি সাহস দেখাতে পারেন না। দলের অন্দরেই নাকি তাঁকে ‘ভিতুদা’ বলে ডাকা হয়। এমনকী রবিবার ম্যাচের পরে একটা গুজব ওঠে— লাল-হলুদ কোচ পদত্যাগ করেছেন। যা শুনে ক্লাবের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘ওনার কি সেই সাহসও আছে? পদত্যাগ করার জন্য যে দম দরকার, সেটা বিশুর নেই।’’
এ দিনের ম্যাচেও তাঁর অতি-ডিফেন্সিভ মনোভাব ডুবিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গলকে। একটা সময় যখন মনে হচ্ছিল আই লিগ ট্রফির দিকে তরতর করে এগোচ্ছেন র্যান্টিরা, তখনই ম্যাচের চাবিটা বিপক্ষের হাতে তুলে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এবং তার চরম রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজির খেসারত দিতে হল গোটা টিমকে। পয়েন্ট তালিকায় এখন ১৪ ম্যাচে ২৪ ইস্টবেঙ্গল। ১৪ ম্যাচে ২৯ বেঙ্গালুরু ও ১৫ ম্যাচে ২৭ মোহনবাগান। বিশ্বজিৎ অবশ্য কোনও বিতর্কে ঢুকতে চাননি। কোনও অভিযোগের জবাবও দেননি। ম্যাচ শেষে শুধু বললেন, ‘‘আই লিগ জয়ের আর কোনও আশা নেই আমাদের।’’
যতটা সহজে বললেন, ততটা সহজ না হলেও, সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন আই লিগ জেতার। তাও একবার নয়, তিনবার। কিন্তু কিছু ভুল স্ট্র্যাটেজি ও তাঁর একগুঁয়েমির জন্য ভুগতে হল দলকে। ভুগলেন নিজেও। না হলে একজন কোচ ডার্বি জয়ের পর দু’টো ম্যাচ যেতে না যেতেই পদত্যাগ করছেন, এই ঘটনা বঙ্গ-ফুটবলে চমকপ্রদ। ফুটবলারদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘প্র্যাকটিসে কোনও বৈচিত্র নেই। গোটা মরসুম শুধু ১১ বনাম ১১ খেলে গেলাম। নতুন কিছু শেখার সুযোগই নেই।’’
হয়তো সে জন্য এ দিন ম্যাচেও কোনও নতুনত্ব দেখাতে পারলেন না র্যান্টি মার্টিন্সরা! না হলে বেঙ্গালুরুকে দেখে এমন কোনও টিম মনে হয়নি, যাদের হারানো যাবে না। বরং বলা যেতে পারে, ইস্টবেঙ্গল আত্মহত্যা করে, আই লিগ ট্রফির আরও কাছাকাছি পৌঁছে দিল সুনীলদের।
আই লিগ প্রায় বেঙ্গালুরুর
বেঙ্গালুরু এফসি
ম্যাচ ১৪, জয় ৯ ড্র ২, হার ৩, পয়েন্ট ২৯
মোহনবাগান
ম্যাচ ১৫, জয় ৭, ড্র ৬, হার ২, পয়েন্ট ২৭
ইস্টবেঙ্গল
ম্যাচ ১৪, জয় ৭, ড্র ৩, হার ৪, পয়েন্ট ২৪
বেঙ্গালুরু আর এক ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। বেঙ্গালুরু পরের ম্যাচে সালগাওকরের সঙ্গে যদি ড্র করে আর মোহনবাগান শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরুকে হারায় তা হলে হেড টু হেডের বিচারে চ্যাম্পিয়ন হবে মোহনবাগান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy