Advertisement
E-Paper

রোনাল্ডোকে হারাতে জিদানকেও থামাতে হবে

রিয়াল মাদ্রিদকে ফাইনালে উঠতে দেখে আমি একটুও অবাক নই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেমন খেলেছে এটা জানাই ছিল ও চোট সারিয়ে দলে ফিরলে আপনাআপনি চাঙ্গা হয়ে উঠবে রিয়াল।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৪:০৫
বের্নাবাওতে রিয়াল কোচ। বুধবার রাতে। ছবি : এএফপি

বের্নাবাওতে রিয়াল কোচ। বুধবার রাতে। ছবি : এএফপি

রিয়াল মাদ্রিদ-১: ম্যান সিটি-০

(ফের্নান্দো-আত্মঘাতী)

(দু’পর্ব মিলিয়ে ১-০)

রিয়াল মাদ্রিদকে ফাইনালে উঠতে দেখে আমি একটুও অবাক নই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেমন খেলেছে এটা জানাই ছিল ও চোট সারিয়ে দলে ফিরলে আপনাআপনি চাঙ্গা হয়ে উঠবে রিয়াল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি সেমিফাইনালে উঠলেও রিয়ালের মতো দলকে হারাতে এখনও কয়েক বছর লাগবে। রোনাল্ডো টিমলিস্টে থাকা মানে তো রিয়াল যেন ১২ জনকে নিয়ে খেলতে নামে।

তবু এর পরেও প্রশ্নটা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ডিফেন্ডারদের তো নাকানিচোবানি খাওয়াতে ওস্তাদ রোনাল্ডো। বিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, তোয়াক্কা করে না রোনাল্ডো। শুধু বলটা তাদের জালে পুরে দিয়ে আসে। কিন্তু ফাইনালে তো আর যে-সে ডিফেন্সের বিরুদ্ধে খেলবে না রোনাল্ডো। বিশ্বের সেরা ব্যাকলাইন অপেক্ষা করছে ওর জন্য। রোনাল্ডো কি পারবে? ৩১ বছর বয়সেও কি ওর সেই জৌলুস আছে যে, চিনের প্রাচীর ভাঙতে পারবে?

আমি বলব, হ্যাঁ পারবে।

অনেকে শুনে একটু অবাকই হবেন। বলতে পারেন, মেসি, নেইমার, সুয়ারেজকে আটকে দিল আটলেটিকো। লেভানডস্কি-মুলারের বায়ার্নকেও হারিয়ে দিল। রোনাল্ডো একা আর কী করবে? কিন্তু বলে রাখি, বায়ার্ন আর রিয়াল মোটেও একই স্টাইলের দল নয়। বায়ার্ন টোটাল ফুটবল খেলতে ভালবাসে। রিয়াল সম্পূর্ণ গতির উপরে আক্রমণকে সাজায়। যার কেন্দ্রে রোনাল্ডো। আটলেটিকো ডিপ ডিফেন্স করতে পারে। কিন্তু একটা ভুল পজিশন। একটা ভুল অফসাইড ট্র্যাপ। ব্যস, রোনাল্ডো ফ্রি। তখন কী আটলেটিকোর সেই গতি আছে ওকে আটকানোর। রোনাল্ডোর সঙ্গে সাপোর্টিং কাস্ট থাকবে গ্যারেথ বেল আর করিম বেঞ্জিমা। তিন জন দৌড়েই জিভ বার করিয়ে দিতে পারে আটলেটিকোর।

বুধবার রাতে তো সেই মহড়াই দেখাল রিয়াল। বেল এক দিকে উইং চিরে বেরোচ্ছে। রোনাল্ডো বল পেলেই ড্রিবল করছে। বলপজেশন রাখতে দিচ্ছে না ম্যান সিটিকে। ফুল স্পিডে খেলা যাকে বলে। সঙ্গে মার্সেলো আর কারভাজাল আবার ফুল ব্যাক কম, উইংগার বেশি। সিটিকে খুব বেশি গোলের সুযোগ দিল না। মাদ্রিদের গেমপ্ল্যানের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, ওরা খুব দ্রুত প্রতিআক্রমণে যেতে পারে। চোখের পাতা পড়তে না পড়তে ডিফেন্স থেকে অ্যাটাক। ম্যান সিটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, দশ বছরের বাচ্চাকে জোর করে উচ্চমাধ্যমিক দিতে পাঠানো হয়েছে। যারা সেমিফাইনালে তো উঠে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে কী করবে বুঝতে পারছে না। যে দলে সের্জিও আগেরো, রহিম স্টার্লিং, কেভিন দে ব্রায়ানের মতো প্রতিভারা আছে তাদের উচিত ছিল রিয়ালকে আরও বিপদে ফেলা। অ্যাওয়ে গোলের জন্য ঝাঁপানো। কিন্তু কী রকম যেন নামার আগেই হার মেনে নেওয়া মানসিকতা নিয়ে খেলল সিটি।

বার্সেলোনা, বায়ার্ন এরা অনেক বেশি সিস্টেম মাফিক ফুটবল খেলে। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান নিয়ে খেলা। যার বাইরে কেউ বেরোবে না। রিয়াল সে দিক থেকে বিপক্ষ অনুযায়ী গেমপ্ল্যান ঠিক করে। অনেক বেশি ফ্লুইড। যাদের সঙ্গে গোল করার দরকার, করে। যাদের বিরুদ্ধে গুঁটিয়ে যাওয়ার দরকার, সেটাও করে। স্পেনের সেই টিপিক্যাল পাস-পাস-পাস খেলে না। রোনাল্ডো, বেলের শক্তিগুলোকে পুরোদমে প্রয়োগ করে। হতে পারে রিয়াল ফুটবলারদের মধ্যে যোগসূত্র বার্সার মতো নিখুঁত নয়। অত নিঁখুত টিমগেম খেলে না রিয়াল। কিন্তু ওই যে বললাম গতি— দৌড় করিয়ে হাঁফিয়ে দেয় বিপক্ষকে।

মাঝমরসুমের ব্যর্থতা থেকে ফের ইউরোপের শৃঙ্গে বসার মুখে রিয়াল। রোনাল্ডো গোলগুলো করেছে কিন্তু নেপথ্যের নায়ক একজনই— জিনেদিন জিদান। যারা বলেছিল, শুধু জিদান নামটার জন্যই রিয়ালের হটসিটে ও ঠাঁই পেয়েছে, তাদের বুঝিয়ে দিল ফুটবলবুদ্ধি ঠিক কতটা প্রখর ওর। বুধবার রাতে সিটির ফের্নান্দোর পায়ে লেগে রিয়ালের ‘ডিফ্লেকটেড’ গোল ছাড়াও বেলরা আরও গোল করতে পারত ঠিকই। অনেক সুযোগ নষ্ট করেছে। কিন্তু নব্বই মিনিটই খেলাটার রিমোট জিদানের হাতে ছিল। একবারের জন্যও মনে হয়নি ম্যান সিটি হঠাৎ করে কোনও অঘটন ঘটিয়ে যাবে। এটাই তো একজন কোচের মাস্টারস্ট্রোক। যে দিন রোনাল্ডোর মতো ফুটবলার একশো শতাংশ ফিট ছিল না, সে দিনও ম্যাচ বার করে নিল জিদানের মগজ।

আটলেটিকোর তাই ফাইনালে শুধু রোনাল্ডোকে নিয়ে ভাবলে হবে না। রোনাল্ডো-বেলদের পিছনে মাথাটার সম্পর্কেও সমান সতর্ক থাকতে হবে।

Ronaldo Zinedine Zidane
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy