Advertisement
E-Paper

অনেক হয়েছে, এ বার আমরা ভারতকে হারাব

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ক্যাম্প জুড়ে একটাই গন্ধ যেন এখন ভুরভুর করছে! একটাই শপথ যেন সর্বত্র ছড়িয়ে সেখানে। বিশ্বকাপে ভারত-জুজু কাটিয়ে বেরোও! বিশ্বকাপে তেইশ বছরের ভারত-কাঁটা গলা থেকে বার করতেই হবে! অধিনায়ক মিসবা-উল-হক থেকে কোচ ওয়াকার ইউনিস। নির্বাচক প্রধান মইন খান থেকে দলে নতুন মুখ এহসান আদিল যাঁকেই এখন প্রশ্ন করুন, পনেরো ফেব্রুয়ারির অ্যাডিলেড ম্যাচ নিয়ে তিনি কী ভাবছেন, প্রত্যেকের এক জবাব। এ বার ইতিহাস পাল্টাবে। পাল্টাবেই।

শাহিদ হাশমি

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৫
বিশ্বকাপে গত বার। মোহালির এই ছবি বদলাতে চায় পাকিস্তান।

বিশ্বকাপে গত বার। মোহালির এই ছবি বদলাতে চায় পাকিস্তান।

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ক্যাম্প জুড়ে একটাই গন্ধ যেন এখন ভুরভুর করছে! একটাই শপথ যেন সর্বত্র ছড়িয়ে সেখানে।

বিশ্বকাপে ভারত-জুজু কাটিয়ে বেরোও! বিশ্বকাপে তেইশ বছরের ভারত-কাঁটা গলা থেকে বার করতেই হবে!

অধিনায়ক মিসবা-উল-হক থেকে কোচ ওয়াকার ইউনিস। নির্বাচক প্রধান মইন খান থেকে দলে নতুন মুখ এহসান আদিল যাঁকেই এখন প্রশ্ন করুন, পনেরো ফেব্রুয়ারির অ্যাডিলেড ম্যাচ নিয়ে তিনি কী ভাবছেন, প্রত্যেকের এক জবাব। এ বার ইতিহাস পাল্টাবে। পাল্টাবেই।

কী সেই ইতিহাস? বিরানব্বই থেকে গতবার যে ছ’টা বিশ্বকাপ হয়েছে তার পাঁচটায় ভারত-পাক মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রতিবার পরাজিত দলের নাম পাকিস্তান। আর বিরানব্বইয়ের আগে বিশ্বকাপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কখনও মুখোমুখি হয়নি। সোজা কথা, বিশ্বকাপে পাকিস্তান কোনও দিন হারাতে পারেনি ভারতকে।

“কিন্তু সেই ইতিহাস এ বার পাল্টে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে, খিদে আর লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠে নামব। টিমের প্রত্যেকে এই বিশেষ ম্যাচটা জিততে চাইছে। আর আমরা আত্মবিশ্বাসী, এ বার ইতিহাস পাল্টে দিতে পারব,” বললেন মিসবা।

কিন্তু কেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মঞ্চে ভারতকে কখনও হারাতে পারেনি পাকিস্তান? যার ব্যাখ্যা তিন বার সেই ম্যাচে অংশ নিয়েও নেই মিসবার কাছে। “দেখুন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ধরলে আমি তিনটে এ রকম ম্য্যাচ খেলেছি। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দু’বার আর দু’হাজার এগারো বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। তা সত্ত্বেও এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। খুব কঠিন আমার উত্তর দেওয়া,” বলার পর একটু ভেবে মিসবা আরও যোগ করেন, “হয়তো একে বিশ্বকাপ, তার উপর ইন্ডিয়া এই জোড়া চাপে এই ম্যাচটায় আমরা ভেঙে পড়ি। যেন একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, পঞ্চাশ বা কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে আমরা ভারতকে হারাতে পারব না। এ রকম একটা ব্যাপার তখনই হয়, যখন আপনি সেই ম্যাচটাকে প্রচণ্ড সিরিয়াসলি নেবেন। ভীষণ রকমের স্পেশ্যাল ভাববেন মনে মনে। তা ছাড়া আমার নিজের মনে হয়, প্রতিটা বিশ্বকাপে যেহেতু এই ম্যাচটা একবারই হয়েছে, সে জন্য ব্যাপারটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’টো ম্যাচ হলে হয়তো স্কোরলাইনটা এতটা একপেশে দেখাত না। তবে এ বার আমাদের টিম ছবিটা পাল্টাতে বদ্ধপরিকর।”

তার জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ম্যাচে মিসবাদের গেমপ্ল্যান কী? পাক অধিনায়ক বলছেন, তাঁর দল সে দিন অ্যাডিলেডে স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলবে। প্রাণপণ চেষ্টা করবে ভারতের ব্যাটিং পাওয়ারহাউসকে আটকাতে।

বিরাট কোহলি, না রোহিত শর্মা কার সে দিন জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা বেশি? মিসবা বললেন, “আমার মনে হয়, ভারত ম্যাচে আমাদের আগাগোড়া ভাল বোলিং করতে হবে। ভারতের ব্যাটিং খুব ভাল। সে জন্য কোহলি, রোহিত বা ধোনিকে আলাদা ভাবে ধরছি না। ওরা প্রত্যেকেই ভয়ঙ্কর। আর ওদের মধ্যে কেউ এক জন অথবা দু’জন যদি লম্বা সময় ক্রিজে থেকে যায়, তা হলে একাই দেড়শো প্লাসের ইনিংস খেলে দিতে পারে।” সঙ্গে আরও যোগ করছেন, “ওদের সব ব্যাটসম্যানের দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। কোনও এক জনকে টার্গেট করলে চলবে না। আরে, সুরেশ রায়না কিংবা রাহানেও অস্ট্রেলিয়ায় যে রকম ফর্ম দেখাচ্ছে, আমি নিশ্চিত ওরাও আমাদের কাছে সমস্যা হতে পারে।”

মিসবা দাবি করছেন, পাকিস্তান দলে প্রত্যাবর্তন ঘটানো সোহেল খান কিংবা টিমে নবাগত এহসান প্রত্যেক বোলার ছটফট করছেন বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের বিরুদ্ধে বোলিং করার জন্য। প্রত্যেক পাক ব্যাটসম্যান মুখিয়ে আছেন অ্যাডিলেডে তাঁর সেরাটা দিতে। “বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচের ইতিহাস পাল্টে দিতে আমরা সবাই নিজেদের সেরাটা দেব। সব কিছুরই শুরু বলে একটা ব্যাপার থাকে। ইতিহাস পাল্টানোর সেই শুরুটা করতে আমরাও তৈরি হচ্ছি। বিশ্বকাপ মানেই ভারতের কাছে পাকিস্তানের হার এই ছবিটার সমাপ্তি ঘটাতে আমরা সর্বস্ব দেব।”

কিন্তু কেন এই ম্যাচটা অন্য সব ম্যাচের চেয়ে আলাদা? মিসবার ব্যাখ্যায় উঠে আসছে, “দু’দেশের সমর্থকদের বিরাট ভাবে ম্যাচটার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার জন্যই। যেটা ভারত-শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে থাকে না। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা দু’দেশই যত ম্যাচ খেলি, তত ম্যাচ আমাদের মধ্যে খেলার সুযোগ ঘটে না। ফলে ভারত-পাক ম্যাচ হলে দু’দেশের সমর্থকদেরই তাঁদের প্রিয় দলের উপর প্রচণ্ড বেশি প্রত্যাশা থাকে। যে চাপটা দু’দলের ড্রেসিংরুমে এসে পড়ে। নইলে শুধু ক্রিকেটের দিক দিয়ে দেখলে ব্যাপারটা অতটা চাপের নয়। চাপটা তৈরি হয়ে যায় দু’দেশের সমর্থকদের প্রচণ্ড প্রত্যাশা থেকে।”

তা হলে সেই ‘জঙ্গি’ সমর্থকদের জন্য পাক অধিনায়কের বার্তা কী? বিশেষ করে যখন এই ম্যাচটায় যারা হারে তাদের সমর্থকেরা যেমন প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন, তেমনি যারা জেতে তাদের সমর্থকেরা আনন্দে পাগলের মতো আচরণ করে বসেন!

“আমি সমর্থকদের অনুরোধ করব, পনেরো তারিখের ম্যাচটাকে উপভোগ করুন। টেনশন করবেন না। ক্রিকেটটা টেনশন নিয়ে যেমন খেলা যায় না, তেমনি দেখাও যায় না কিন্তু। যারা ভাল করবে তাদের হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান, কিন্তু যারা ভাল করবে না তাদের হাঁড়িকাঠে চড়াবেন না।”

হাজার হোক, এটা স্রেফ একটা ক্রিকেট ম্যাচ!

pakistan world cup 2015 shahid hashmi karachi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy