Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

আর্মান্দোর মান বাঁচালেন সেই বিতর্কিত সুয়োকাই

বলিউডের চালু গল্প। শোলে-র প্রিমিয়ার শো-তে ট্রেন ডাকাতির দৃশ্যটা দেখার পর দিলীপকুমার ছবির পরিচালক জিপি সিপ্পিকে নাকি বলে ফেলেছিলেন, “ক্লাইম্যাক্সটা শুরুতেই দেখিয়ে দিলে? আর কী দেখব?” জবাবে শোলের পরিচালক দিলীপকুমারকে বলেন, “পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত।”

জবাব অবিশ্বাস্য গোলে। বুধবার। ছবি: উৎপল সরকার।

জবাব অবিশ্বাস্য গোলে। বুধবার। ছবি: উৎপল সরকার।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

মুম্বই এফসি-২ (ইয়াকুবু, আশুতোষ)

ইস্টবেঙ্গল-২ (সুয়োকা-২)

বলিউডের চালু গল্প। শোলে-র প্রিমিয়ার শো-তে ট্রেন ডাকাতির দৃশ্যটা দেখার পর দিলীপকুমার ছবির পরিচালক জিপি সিপ্পিকে নাকি বলে ফেলেছিলেন, “ক্লাইম্যাক্সটা শুরুতেই দেখিয়ে দিলে? আর কী দেখব?” জবাবে শোলের পরিচালক দিলীপকুমারকে বলেন, “পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত।”

বুধবার বিকেলের যুবভারতীও যে পেন্ডুলামের মতো দুলল একই রকম নাটকীয়তা নিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় মাঝমাঠ থেকে ইয়াকুবুর অর্ধবৃত্তাকার শটে বিশ্বমানের গোলটার পরে প্রেসবক্সে ফিসফিসানি, “এক ছোবলেই ছবি বানিয়ে দিল ইয়াকুবু!” খেলা দেখতে আসা মোহনবাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফার মুখে তখনও বিস্ময়। তারই মাঝে এক সমর্থকের মন্তব্য, “পিকচার আভি বাকি হ্যায়।” কথা শেষ হতে না হতেই সুয়োকার দর্শনীয় ব্যাকভলিতে গোলশোধ। ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে উঠল মেওয়ালাল, শ্যাম থাপা, ভাইচুংদের মুখ। দু’ মিনিট পরে অভিষেকের সেন্টার থেকে সুয়োকার দ্বিতীয় গোল হতেই মাঠ ছাড়লেন করিম। ব্রাত্য সুয়োকাই আর্মান্দোকে এনে দিলেন তিন পয়েন্ট--শিরোনাম দিয়ে কেউ কেউ ম্যাচ রিপোর্ট লিখতেও শুরু করে দিয়েছিলেন। ইস্টবেঙ্গল কোচকেও দেখা গেল শেষ বেলায় রক্ষণ আঁটসাঁট করতে গুরবিন্দরকে নামানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ম্যাচ শেষ হতে বাকি আর পাঁচ মিনিট। কিন্তু নাটক যে আরও বাকি, কে তা জানত? ঠিক দু’মিনিট পরেই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ফাঁক-ফোকড় কাজে লাগিয়ে মুম্বইয়ের দলটির লেফট ব্যাক আশুতোষ হেলায় ২-২ করে গেলেন। একই সঙ্গে অনেকটাই দূরে সরে গেল আই লিগ খেতাব তালুবন্দি করার লাল-হলুদ স্বপ্ন।

ম্যাচ শেষে চোয়াল শক্ত করে গটগট করে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন জোয়াকিম আব্রাঞ্চেস। সঙ্গে সতীর্থদের উদ্দেশে হতাশা মোড়া বিড়বিড়ানি, “এরা লিডটাও ধরে রাখতে পারে না। লিগ জিতব কী?” ইস্টবেঙ্গল লেফট হাফ যুবভারতীর টানেলে যখন এ কথা বলছেন, তখন অগ্নিগর্ভ লাল-হলুদ গ্যালারি। যে ম্যাচ থেকে হেসেখেলে তিন পয়েন্ট আসে সেই ম্যাচেও আটকে গেল আর্মান্দোর ছেলেরা। বাড়ি ফেরত দর্শকরা কেউ ঘুরছিলেন মুখ ব্যাজার করে, কেউ কেউ ক্লাব সচিবের গাড়িতে ‘মর্গ্যান লাও’ বলার সঙ্গেই ‘পাদুকা মিসাইল’ উৎক্ষেপণে ব্যস্ত। যিনি একটু আগেই বলে গিয়েছেন, “টাকা গুনতে গিয়ে ফুটবলাররা তো ক্লান্ত হচ্ছে না। যত ক্লান্তি কি মাঠেই?”

ঠিক তখনই সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরণ ইস্টবেঙ্গল কোচের। দ্বিতীয়ার্ধে নামা সুয়োকা জোড়া গোল করে আপনার মুখ রক্ষা করল। ও প্রথম দলে ছিল না কেন? আর্মান্দো বললেন, “সুয়োকার আগের দিনের আচরণ আমার ভাল লাগেনি। তাই বেঞ্চে রেখেছিলাম। ও যাতে বুঝতে পারে কাজটা ঠিক করিনি।” সন্ধি, আপস, ক্ষমার পরেও এ যে ‘হম কিসিসে কম নেহি’-মার্কা ইগো মেশানো চিত্রনাট্য! তাও কখন? যখন তিন পয়েন্ট আনলে আই লিগ খেতাবের লড়াইতে ভেসে থাকা যাবে। এ দিন তাঁর ‘দুষ্টু ছেলে’ সুয়োকাই যে মুখ রাখলেন তাঁর। সুয়োকা নিজেও কম যান না। ম্যাচে গোল করে টেকনিক্যাল এরিনায় দাঁড়ানো কোচের পাশ দিয়ে এমন ভাবে চলে গেলেন যেন তাঁকে দেখেননি। ড্রেসিংরুমে প্রার্থনার সময়ও কোচ তাঁর গোলের প্রশংসা করলে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্টেডিয়ামও ছাড়লেন মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলে।

প্রথম পর্বে খালিদ জামিলের দলের বিরুদ্ধে বলের দখল নিজেদের পায়ে বেশি সময় রাখতে না পারার জন্যই বালেওয়াড়িতে ডুবেছিল চিডিরা। সেই সংক্রমণ এ দিন প্রথমার্ধ জুড়ে রইল ইস্টবেঙ্গলের খেলায়। ৪-৫-১ ছকে এক পয়েন্টের জন্য খেলতে নেমে ইয়াকুবুরা সেই সুযোগটাই নিয়েছিল প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এই সময় লাল-হলুদ আক্রমণে না ছিল ঝাঁঝ। না ছিল আগ্রাসন। দ্বিতীয়ার্ধে সুয়োকাকে নামিয়ে সেই দাপটটাই বাড়াতে চেয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ। সুয়োকা নামতে সচলও হল লাল-হলুদ ব্রিগেড। ডিকাকে নামিয়ে সেট পিস, লং-রেঞ্জার আর বল জোগানোর জেনারেটরও চালু করে দিয়েছিলেন আর্মান্দো। ইস্টবেঙ্গল তখন আক্রমণে গেলে ৪-৩-৩। অ্যালফ্রেড, হাতিফিরা আক্রমণে এলে ৪-৪-২। কিন্তু আচমকাই ইয়াকুবুর গোল। গত সপ্তাহে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ওয়েন রুনি ওয়েস্টহ্যামের বিরুদ্ধে যে রকম গোল করেছিলেন এ যেন হুবহু তারই প্রতিচ্ছবি। দু’জনের জার্সি নম্বরও দশ। ইয়াকুবুর গোলের সময় অ্যান্টিসিপেশন এবং গেম রিডিংয়ে ভুল হয়ে গিয়েছিল লাল-হলুদ গোলরক্ষক অভিজিতের।

তার পর সুয়োকার জোড়া গোলে এগিয়ে গিয়ে যেখানে লিড ধরে রাখার কথা ঠিক সেটাই করা যায়নি। আশুতোষ যখন সমতা ফেরাচ্ছেন তখন জায়গাতেই ছিলেন না রাইট ব্যাক অভিষেক এবং স্টপার অর্ণব। অভিষেক তার অনেক আগে থেকেই জায়গায় থাকছিলেন না। আর্মান্দোও চেঁচাচ্ছিলেন টেকনিক্যাল এরিয়া থেকে। এরপরেও ভুল শোধরাতে ব্যর্থ সরশুনার ছেলে। আর গোটা ম্যাচ জুড়ে ভুলের পর ভুল করে গেলেন অর্ণব। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে এত কেঁপে গেলে আই লিগ আসবে কী ভাবে? আর্মান্দোকেও ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেই ফেড কাপ থেকেই তো গড়বড় করছেন অর্ণব। তা হলে গুরবিন্দর শুরু থেকে নয় কেন?

বাকি আর ছয় ম্যাচ। আর্মান্দো বলছেন, “এখনও কিছু বলা যায় না। প্রথম তিনে থাকার লড়াই চলবে।”এ দিন ড্র করে ১৮ ম্যাচের পর ২৮ পয়েন্ট লাল-হলুদের। শীর্ষ থাকা বেঙ্গালুরু ২০ ম্যাচে ৩৭। বাকি ছয় ম্যাচে ‘ম্যাজিক’ হবে? এক লাল-হলুদ কর্তার মন্তব্য, “বেঙ্গালুরুর বাকি চারটে ম্যাচের তিনটেই অ্যাওয়ে। কাজটা কিন্তু কঠিন। আমরা তো তাড়া করবই।”

ইগো, বদমেজাজ, অফ ফর্ম, ক্লান্তি, চোটের মাঝে এই আত্মবিশ্বাস এল কোথা থেকে? পাঁচ বার আই লিগ জেতা লাল-হলুদ কোচ কি আশ্বাস দিয়েছেন, “পিকচার আভি বাকি হ্যায়?”

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, অভিষেক, অর্ণব, রাজু, রবার্ট, ভাসুম (সুয়োকা), খাবরা, লোবো (বলজিৎ), জোয়াকিম, লেন (লালরিন্দিকা), চিডি।

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সরাসরি: কার দখলে ‘দিল্লিবাড়ি’?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

east bengal i league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE