Advertisement
E-Paper

এ বার টেনিসেও পেশাদার লিগ, মুম্বইয়ের হয়ে নাদাল

মুম্বইয়ের হয়ে টেনিস খেলছেন রাফায়েল নাদাল! দুবাই দলের হয়ে নোভাক জকোভিচ! সিঙ্গাপুর টিমে আবার প্রধান শক্তির নাম সেরেনা উইলিয়ামস! ব্যাঙ্ককই বা কোথায় পিছিয়ে? তাদের দলের প্রধান আকর্ষণের নাম অ্যান্ডি মারে! মুম্বই আর সিঙ্গাপুর আবার এক জন ‘মার্কি’ প্লেয়ারেই সন্তুষ্ট না থেকে ‘আইকন’ খেলোয়াড়দের তালিকা থেকে দ্বিতীয় মহাতারকাও নিজেদের দলে নিয়েছে। মুম্বইয়ে নাদালের পাশে যখন পিট সাম্প্রাসকে দেখা যাবে, সিঙ্গাপুর তখন সেরেনার সঙ্গে সঙ্গে আন্দ্রে আগাসির মতো কিংবদন্তিকে নিয়ে ফেলেছে।

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৯:১১
রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জকোভিচ

রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জকোভিচ

মুম্বইয়ের হয়ে টেনিস খেলছেন রাফায়েল নাদাল! দুবাই দলের হয়ে নোভাক জকোভিচ! সিঙ্গাপুর টিমে আবার প্রধান শক্তির নাম সেরেনা উইলিয়ামস! ব্যাঙ্ককই বা কোথায় পিছিয়ে? তাদের দলের প্রধান আকর্ষণের নাম অ্যান্ডি মারে!

মুম্বই আর সিঙ্গাপুর আবার এক জন ‘মার্কি’ প্লেয়ারেই সন্তুষ্ট না থেকে ‘আইকন’ খেলোয়াড়দের তালিকা থেকে দ্বিতীয় মহাতারকাও নিজেদের দলে নিয়েছে। মুম্বইয়ে নাদালের পাশে যখন পিট সাম্প্রাসকে দেখা যাবে, সিঙ্গাপুর তখন সেরেনার সঙ্গে সঙ্গে আন্দ্রে আগাসির মতো কিংবদন্তিকে নিয়ে ফেলেছে।

রীতিমতো টেনিস প্লেয়ারদের নিলাম অনুষ্ঠান থেকে। দর হেঁকে। অন্য তিন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে টেক্কা দিয়ে।

আর সেই পুরো যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত কে? না, ভারতীয় টেনিসের অন্যতম সফল তারকা মহেশ ভূপতি।

আসলে রবিবার দুবাইয়ের ওবেরয় হোটেলে টেনিস বিশ্ব এক নতুন বলয়ে গিয়ে পড়ল। যেখানে ক্রিকেটের আইপিএলের ঢঙে টেনিসের আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার লিগের (আইপিটিএল) জন্য আইকন থেকে বড়-মেজো-সেজো, বিশ্বের নানা মাপের ৭০ জন টেনিস প্লেয়ারের নিলাম হল। এই বছরের ২৮ নভেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর হতে চলা অভূতপূর্ব টুর্নামেন্টের জন্য চারটি শহর ভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি দল তাদের দল গড়ে ফেলল এই নিলাম থেকে। চারটি দলমুম্বই, দুবাই, সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক। এবং গোটা ভাবনাটার পিছনে মহেশ ভূপতি। যে কারণে আইপিটিএল-কে বলা হচ্ছে মহেশের ‘ব্রেনচাইল্ড’!

এত দিন টেনিস বিশ্ব বলতে বোঝাত গ্র্যান্ড স্ল্যাম, এটিপি ও ডব্লিউটিএ ট্যুর, ডেভিস কাপ ও ফেড কাপ। নতুন ভাবধারার আইপিটিএল সেখানে একটা দমকা হাওয়া তো বটেই। যে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী বছরেই কিনা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বিশ্বের এক আর দু’নম্বর টেনিস তারকা। মেয়েদের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম চার জনের মধ্যে তিন জনই। বর্তমান উইম্বলডন এবং অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন। সাম্প্রাস-আগাসির মতো টেনিসের প্রবাদপ্রতিম। তবে এ ধরনের টুর্নামেন্ট টেনিস-গ্রহে একেবারে নতুন নয়। ঊনচল্লিশ বছর আগে বিলি জিন কিং এ রকমই শহরভিত্তিক দলগত এক সেটের ম্যাচের টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন আমেরিকা জুড়ে। এবং সেই ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসে (ডব্লিউটিটি) এখনও খেলেন লিয়েন্ডার পেজ।

যদিও ধারে ও ভারে বিলি জিনের ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসের চেয়ে মহেশের আইপিটিএল অনেক এগিয়ে থাকছে। অন্তত এই মুহূর্তে ছবিটা তেমনই। নাদাল-জকোভিচ-মারে-আজারেঙ্কা-সেরেনারা ছাড়াও কোনও দলে রয়েছেন সঙ্গা, কোনও দলে আনা ইভানোভিচ, কোনও দলে টমাস বার্ডিচ, লেটন হিউইট। নাদাল এক সেটের ম্যাচ পিছু পাবেন এগারো লাখ ডলার। জকোভিচ, মারে, সেরেনা, আজারেঙ্কা তার চেয়ে সামান্য কম। দশ লাখ ডলার। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটা দল ছয় থেকে সর্বাধিক দশ জন প্লেয়ার কিনতে পারে। খরচ করতে পারে ষাট লাখ থেকে এক কোটি ডলার সর্বাধিক।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পঁচাত্তরে প্রথম ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসে খেলেছিলেন। তিনি এ দিন বলছিলেন, ওই টুর্নামেন্টে এখন আর বিশ্বের নামী তারকারা খেলেন না। আইপিটিএলে প্রথম বছরেই মেগাতারকাদের ছড়াছড়ি। ভারতের যে দুই টেনিস তারকাকে এ দিন নিলামে কেনা হল, সেই সানিয়া মির্জা ও রোহন বোপান্না, দু’জনকেই কিনেছে মুম্বই।

তবে দেশের এক নম্বর সিঙ্গলস প্লেয়ার সোমদেব দেববর্মনের অবিক্রিত থাকাটা কিংবা লিয়েন্ডার পেজের নাম নিলামেই না থাকাটা অবাকের। লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজ এ দিন দাবি করলেন, “লিয়েন্ডারকে সংগঠকদের তরফ থেকে যোগাযোগ করাই হয়নি।” আবার আইপিটিএলের এক সূত্র এ দিন বললেন, “চুক্তির ড্রাফটে সই করার যে নির্দিষ্ট সময় ছিল সেটা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও লিয়েন্ডারের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।” তবে ভারতের সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী (ডাবলস ও মিক্সড ডাবলস মিলিয়ে ১৪টি) লিয়েন্ডার এ দিন ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, টেনিস থেকে তিনি যা পেয়েছেন তাতে আইপিটিএল না খেললে তাঁর এতটুকু আক্ষেপ নেই। বোপান্না আবার স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত। নিলাম শেষ হওয়ামাত্র টুইটারে তিনি লেখেন, “দুর্দান্ত খবর। প্রথম আইপিটিএলেই আমি আছি। সেটাও আবার নিজের দেশের শহরের টিমে!”

যদিও নরেশ কুমারের মতো দেশের প্রাক্তন তারকা ডেভিসকাপার কিংবা বর্তমান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বিষ্ণু বর্ধনের মতো তরুণ টেনিস প্লেয়ারের গলায় আক্ষেপ। নরেশ কুমার বললেন, “এই সব টুর্নামেন্ট করে ভারতীয় টেনিসের স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো যাবে কি? তার চেয়ে আমাদের প্লেয়ারদের বিশ্বের নানা চ্যালেঞ্জার, এটিপি ট্যুরে খেলিয়ে পয়েন্ট বাড়ানোর চেষ্টা বেশি করে হলে ভারতীয় টেনিসের উপকার হবে।” বিষ্ণু বললেন, “আইপিটিএলে মুম্বইয়ের খেলা নিশ্চয়ই দেখব ওখানে গিয়ে। কিন্তু নিজে খেলতে পারলে আরও ভাল লাগত।”

বিশ্ব টেনিসেরও কি মান বাড়বে আইপিটিএল থেকে? টুর্নামেন্টে এক-একটি ম্যাচে মোট পাঁচটি খেলা হবে। পুরুষ-মেয়ে সিঙ্গলস, ডাবলস, মিক্সড ডাবলস, লেজেন্ড সিঙ্গলস মিলিয়ে। কিন্তু প্রত্যেক ম্যাচ মাত্র এক সেটের। ৫-৫ গেম হলেই টাইব্রেক। তাতেও ‘অ্যাডভান্টেজ রুল’ নেই। প্রথম পয়েন্ট যে পাবে সে-ই জিতবে। ফলে কতটা উঁচু মানের লড়াই দেখা

যাবে, কিংবা আদৌ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাবে কি না সেই প্রশ্ন কিন্তু টেনিস মহলে কোথাও কোথাও উঠছে। জানা গেল, নাদাল, জকোভিচ, মারে, সেরেনার মতো ‘মার্কি’ প্লেয়াররা শুধু ‘হোম’ ম্যাচেই খেলবেন। তাও নিজের ইচ্ছে মতো। এঁরা অন্য শহরে ট্র্যাভেল করবেন না। দলের বাকি প্লেয়াররা করবেন। অর্থাৎ, নাদাল মুম্বইয়ে, জকোভিচ দুবাইয়েই থাকবেন টুর্নামেন্টের এক মাস। যে সময়টা মূলত পেশাদার টেনিস প্লেয়ারদের অফ সিজন প্র্যাকটিস, পরের মরসুমের প্রস্তুতির সময়। ফলে নাদাল-জকোভিচদের মতো মহাতারকাদের কাছে আইপিটিএলের মঞ্চ একই সঙ্গে রথ দেখা আর কলা বেচা-র বললে বোধহয় ভুল হবে না।

আখতার আলির মতো প্রবীণ টেনিস ব্যক্তিত্ব অবশ্য বললেন, “যখন এত টাকার ব্যাপার। এক একটা ম্যাচ খেলতে যখন নাদালরা এত টাকা পাচ্ছে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপও থাকবে ম্যাচে। তা ছাড়া নাদাল-জকোভিচ, মারে-বার্ডিচ কিংবা সেরেনা-আজারেঙ্কা যখন মুখোমুখি হবে, তখন এই টপ প্লেয়াররা নিজেদের ইগো বাঁচাতেও সিরিয়াসলি খেলবে। তবে সব মিলিয়ে এটা একটা টেনিস-উৎসব। তার বেশি নয়।”

tennis league
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy