Advertisement
E-Paper

কলকাতার জয় আর ঋদ্ধির ঝড়, জোড়া দিওয়ালি শহরে

ইস বার ভি কেকেআর। ইস বার ভি কেকেআর! ইস্ট অর ওয়েস্ট কেকেআর ইজ দ্য বেস্ট! রাত সাড়ে এগারোটা। নাইটদের জার্সি গায়ে কথাগুলো বলতে বলতে এ ভাবেই শয়ে শয়ে সমর্থকরা পাগলের মতো দু’হাত তুলে নাচছিলেন রাজাবাজার মোড়ে। রাস্তার এক পাশে পুলিশের আরটি ভ্যান। ম্যান প্যাক হাতে পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত কলকাতা পুলিশের জনা দশেক কর্মী। এগারোটা পঁয়তাল্লিশ। সল্টলেক সিটি সেন্টারের সামনে রঙমশাল হাতে ছুটছে বছর কুড়ির এক যুবক। পিছনে কেকেআর, কেকেআর স্লোগান দিতে দিতে পঞ্চাশ জনের একটা দল। আকাশে হাউই, মাটিতে তুবড়ি। কালীপুজো এগিয়ে এল নাকি!

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০৩:২৭
কেকেআরের জয়ে শহরের পথে উল্লাস। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

কেকেআরের জয়ে শহরের পথে উল্লাস। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ইস বার ভি কেকেআর। ইস বার ভি কেকেআর! ইস্ট অর ওয়েস্ট কেকেআর ইজ দ্য বেস্ট!

রাত সাড়ে এগারোটা। নাইটদের জার্সি গায়ে কথাগুলো বলতে বলতে এ ভাবেই শয়ে শয়ে সমর্থকরা পাগলের মতো দু’হাত তুলে নাচছিলেন রাজাবাজার মোড়ে। রাস্তার এক পাশে পুলিশের আরটি ভ্যান। ম্যান প্যাক হাতে পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত কলকাতা পুলিশের জনা দশেক কর্মী।

এগারোটা পঁয়তাল্লিশ। সল্টলেক সিটি সেন্টারের সামনে রঙমশাল হাতে ছুটছে বছর কুড়ির এক যুবক। পিছনে কেকেআর, কেকেআর স্লোগান দিতে দিতে পঞ্চাশ জনের একটা দল। আকাশে হাউই, মাটিতে তুবড়ি। কালীপুজো এগিয়ে এল নাকি!

রাত বারোটা। মল্লিকবাজার মোড়ের মাথায় নাইট সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় এবং উল্লাস দেখলে মনে হতেই পারে, জুনের প্রথম দিনেই নতুন বছর হানা দিল কি না। নাকি অকাল হোলি আর দিওয়ালি হাত ধরাধরি করে হাজির নাইট রাইডার্সের দ্বিতীয় আইপিএল জয়ের দিনে।

মল্লিকবাজার মোড়ের দখল ততক্ষণে নিয়ে নিয়েছে বাইক বাহিনী। গাড়িতে সওয়ার উগ্র নাইট অনুরাগীরা। মাথায় কেকেআর বান্দানা, হাতে ‘করব, লড়ব, জিতবে রে’ লেখা পতাকা। মুখে সেই ইডেন ফেরত জনতার হু হা-হু হা। সঙ্গে আতসবাজির রোশনাই। ঢাকঢোল, মায় ব্যান্ড পর্যন্ত হাজির।

নাইট সমর্থকদের মধ্যরাতে শহরের ব্যস্ত রাস্তার মোড় দখল নেওয়া এত ক্ষণ অসহায় ভাবে দেখছিলেন পুলিশকর্মীরা। ঠিক এই সময় আকাশে উড়ল বেগুনি রঙের ফানুসটা। মল্লিক বাজার মোড়ে যানজট। ম্যান প্যাকে নির্দেশ এল রাস্তা ফাঁকা করার। এ বার লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেল পুলিশ।

মুহূর্তে ছত্রভঙ্গ জনতা। রাস্তায় পড়ে সার সার মোটরবাইক।

শহরে দ্বিতীয় আইপিএল ট্রফি আসার রাতে চুম্বকে এটাই চিত্র কলকাতার। বাঁধ ভাঙা এই উচ্ছ্বাসের কোনও পরিবর্তন নেই উত্তরে চিৎপুর থেকে দক্ষিণে গার্ডেনরিচ পর্যন্ত।

তবে কেকেআর জিতলেও এই জনতা কিন্তু সম্মান দেখাতে ভোলেনি ঋদ্ধিমানের ইনিংসকে। রাজাবাজারের বাসিন্দা মহম্মদ আক্রম থেকে ব্রড স্ট্রিটের মহম্মদ নাসিমরা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে ‘বাইট’ দেওয়ার ফাঁকে বারবার টেনে আনছিলেন ঋদ্ধিমানকে। ‘উয়ো লড়কা শানদার ইনিংস খেলা। মগর উয়ো ভি তো হমারা কলকাত্তা কা থা পহেলা তিন আইপিএল মে।”

গভীর রাতে শহরের নাইট বরণের মাঝেও পরাজিত বীর ঋদ্ধিমানের জন্য কেকেআর সমর্থকদের সম্মান প্রদর্শনের কথা শুনে শিলিগুড়ির বাড়ি থেকেই ফোনে হাসলেন ঋদ্ধিমানের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। বললেন, “বলছেন কী? কলকাতায় উৎসবের মাঝেও ঋদ্ধিমানের কথা হচ্ছে!” স্থানীয় অগ্রগামী ক্লাবের ঘরে বসে টিভিতে গোটা ম্যাচ দেখেছেন জয়ন্তবাবু। আনন্দবাজারকে বললেন, “শনিবার রাত বারোটার সময় ফোন করেছিল। তখন ওকে বলেছিলাম, সব যন্ত্রণা কাল যেন তোর ব্যাট থেকে বেরোয়। কাল একটা ধামাকা ইনিংস চাই তোর কাছে। ও বলেছিল স্যার, আপনার কথা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করব। সেই চেষ্টা সফল। হারলেও এই আনন্দ রাখার জায়গা নেই।”

বাংলার উইকেটকিপারের ৫৫ বলে ১১৫ রান প্রসঙ্গে বাংলার প্রধান নির্বাচক দীপ দাশগুপ্তও বলছেন, “আমি অবাক নই। ঋদ্ধি এ রকমই খেলে।” ঋদ্ধির সঙ্গে ন’বছর মেসে কাটানো প্রাক্তন নাইট অশোক দিন্দা শহরের তাই ট্রফি জয়ের দিনেও একটু দুঃখিত। “আরে কেকেআর জিতেছে, ভাল কথা! গুড নিউজ। শাহরুখকে কনগ্র্যাটস। কিন্তু ঋদ্ধির জন্য খারাপ লাগছে।” তবে এরই মাঝে স্বাধীনতার পর বাংলার একমাত্র রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু আশাবাদী। ফোনে বললেন, “আজ এক সঙ্গে শহরের জন্য দু’টো ভাল খবর। এক, কেকেআরের জয়। দুই, আইপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরি করে সামনের বছর বিশ্বকাপের টিকিটটা আজই কনফার্ম করে নিল ঋদ্ধি। বাজির শব্দে কান পাতা যাচ্ছে না।”

শহরে শাহরুখের দলের আস্তানা বাইপাসের ধারের তারকা চিহ্নিত হোটেল মাঝরাতে উল্লাসে মাতেনি। হোটেলের কর্মীরা বরং ব্যস্ত ছিলেন নাইটরা শহরে ফিরলে কী ভাবে তাঁদের বরণ করা হবে, তাই নিয়ে। হঠাৎই দেখা দিলেন নাইটদের জার্সি গায়ে ডিনার সেরে বেরোনো পার্ক স্ট্রিটের ব্যবসায়ী সন্দীপ কুন্দ্রা এবং তাঁর তিন বন্ধু। কলকাতার বহু মানুষের আক্ষেপটা তিনিই শুনিয়ে দিলেন শেষ বেলায়। “ইডেন প্যাভিলিয়নে বসে ডিনারের মাঝে ম্যাচ দেখলাম। কলকাতার কোনও ছেলে ফার্স্ট টিমে থাকলে আরও ভাল লাগত। তবে সাহা কিন্তু সৌরভের মতো আজ ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্রে উঠে এল।”

হোটেলের ভিতরে তখন সাকিব আল হাসানের প্রিয় কাঠি রোল, পাঠানের প্রিয় লুচি-কষা মাংস, মনীশ পাণ্ডের প্রিয় বাহার-এ-পনির, অধিনায়ক গম্ভীরের কুলচা ‘বল-এ-বাজি’, জাক কালিসের প্রিয় পর্ক-আইটেম স্প্যাগেটি কার্বোনারা তৈরির শলা পরামর্শ চলছে বলে জানালেন হোটেল কর্মীরা।

উৎসব তো আর রবিবার রাতেই শেষ হবে না!

kkr ipl debanjan bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy