Advertisement
E-Paper

গাওস্করের দায়িত্ব শুধু আইপিএলে

একশোর ওপর টেস্ট ম্যাচ খেলা ভিন্ রাজ্যের প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক শুক্রবার নৈরাশ্য ভরা গলায় বললেন, “গত ক’দিন সুপ্রিম কোর্টের স্টেপ আউট করা দেখে ভাবছিলাম ছয় হবে। হল কিনা সিঙ্গল!” আম ক্রিকেট-উৎসাহী টুইট করলেন, ‘পর্বতের মূষিকপ্রসব।’ রাতে জনৈক ক্রিকেট কর্তা বলছিলেন, “ভেবেছিলাম ওয়ার্কিং কমিটির একটা মিটিং এতক্ষণে ডাকা হবে। কোর্টের অর্ডার বেরিয়ে গিয়েছে দশ ঘণ্টা হল। কিছুই হল না।”

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০৪:৫৯
আশীর্বাদের আশায়। শুক্রবার চেন্নাইয়ের একটি মন্দিরে শ্রীনিবাসন। ছবি:  রয়টার্স।

আশীর্বাদের আশায়। শুক্রবার চেন্নাইয়ের একটি মন্দিরে শ্রীনিবাসন। ছবি: রয়টার্স।

একশোর ওপর টেস্ট ম্যাচ খেলা ভিন্ রাজ্যের প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক শুক্রবার নৈরাশ্য ভরা গলায় বললেন, “গত ক’দিন সুপ্রিম কোর্টের স্টেপ আউট করা দেখে ভাবছিলাম ছয় হবে। হল কিনা সিঙ্গল!”

আম ক্রিকেট-উৎসাহী টুইট করলেন, ‘পর্বতের মূষিকপ্রসব।’

রাতে জনৈক ক্রিকেট কর্তা বলছিলেন, “ভেবেছিলাম ওয়ার্কিং কমিটির একটা মিটিং এতক্ষণে ডাকা হবে। কোর্টের অর্ডার বেরিয়ে গিয়েছে দশ ঘণ্টা হল। কিছুই হল না।”

ভারতীয় ক্রিকেটমহলে অনেকের আবার মনে হচ্ছে, আদালতের রায় অনুযায়ী ইন্ডিয়া সিমেন্টসের যে দুই কর্মচারী ঢাকায় টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের তো বাংলাদেশ ম্যাচের আগে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। মিডিয়া ম্যানেজার আরএন বাবা এবং লজিস্টিকস ম্যানেজার রাসেল দু’জনেই ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কর্মচারী। তাঁরা না দিয়েছেন পদত্যাগপত্র, না ভারতীয় শিবির ছেড়ে চলে এসেছেন। তা হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মর্যাদা দেখানো হল কোথায়? নাকি ম্যাচ থাকায় করেননি? শনিবার ইস্তফা দেবেন?


সবিস্তার...

গত কয়েক দিনে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে প্রচণ্ড উত্তেজক স্ট্রাইকরেট চলতে চলতে শুক্রবার যেন হঠাৎ করে ডট বলের দিন গেল। অন্তর্বর্তী নির্দেশ বেরোল, কিন্তু তাতে সেই জোর নেই যা গত ক’দিন কোর্টের মনোভাব দেখে আমজনতা অনুমান করেছিল। ছ’রানের হিটে সিঙ্গলস না হলেও হল যেন দুই!

বিচারপতি মুদগল ক্যামেরার সামনে রায়কে ‘ব্যালান্সড’ অ্যাখ্যা দিলেও রায়ের ব্যাখ্যা নিয়ে এক-এক গোষ্ঠীতে এক-এক ধরনের প্রতিক্রিয়া। দু’পক্ষেরই দাবি, তাঁরা জিতলেন।

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের শিবিরের ধারণা, তিনি চমকপ্রদ কামব্যাক করলেন। শ্রীনি অবধারিত রসাতলে যাচ্ছেন, গোটা ক্রিকেট-পৃথিবীর এই ধারণা উল্টে দিয়ে তিনি আইসিসি-তে যাওয়ার ছাড়পত্রও জোগাড় করে নিয়েছেন। আদালত পরিষ্কার বলেছে, বাদীপক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী শ্রীনির আইসিসিতে যাওয়ার ব্যাপারে তারা কোনও নিষেধাজ্ঞা দিতে রাজি নয়। ওটা আদালতের বিচারাধীন বিষয়ের মধ্যে পড়ছে না। আদালত শ্রীনিকে গণ-চাহিদা অনুযায়ী বরখাস্তও করেনি। চেন্নাই সুপার কিংসকে শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে নিয়েছে আইপিএলে। চরম কোণঠাসা অবস্থা থেকে সদ্য ছানি অপারেশন করিয়ে আসা ভদ্রলোকের আর কী চাইবার থাকতে পারে?

শ্রীনি-বিরোধী শিবিরের বক্তব্য ঠিক উল্টো। তারা মনে করে, যতটা ধ্বংসাত্মক ভাবে তারা জিতবে ভেবেছিল, সেটা হয়তো ঘটেনি। কিন্তু জিতেছে তো বটেই। আদালত ‘বরখাস্ত’ শব্দটা ব্যবহার না করেও শ্রীনিকে এক রকম ভারতীয় ক্রিকেট থেকে তো সরিয়ে দিয়েছে। বলে দিয়েছে, আইপিএল চলা পর্যন্ত গাওস্কর সর্বোচ্চ দায়িত্বে। তার পর দায়িত্বভার নেবেন শিবলাল যাদব। শিবলাল এ দিন টিভি চ্যানেলে পরিষ্কার বলেছেন, তাঁর কাজের মেয়াদ জুন থেকে সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, শ্রীনির পদে অভিষিক্ত কর্তা এ মরসুমে আর তাঁকে ফিরতে দেখছেন না। সেপ্টেম্বর মানে ফের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তাঁকে ফিরতে হবে।

শ্রীনি-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, গাওস্কর আইপিএলে সর্বোচ্চ পদে থাকলে কী হবে, তাঁকে তো চালাতে হবে গর্ভনিং কাউন্সিল দিয়ে। সেখানে শ্রীনির লোক ভর্তি। যা হবে, শ্রীনির ইচ্ছে অনুযায়ী হবে। আইপিএলের সিইও সুন্দর রামন যেহেতু ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কর্মচারী, তাঁকে সরানো হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আদালত দিয়েছে গাওস্করকে। শ্রীনি গোষ্ঠী বলছে, আইপিএল শুরু হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে এখন সুন্দরকে সরানো সম্ভব নয়। তা হলে টুর্নামেন্টই করা যাবে না। গাওস্কর কোথায় পাবেন নতুন লোক? তিনি সরে যাওয়ার পর বোর্ড দেখবেন শিবলাল যাদব। শিবলাল ঘোষিত শ্রীনি-প্রেমী। অর্থাৎ শ্রীনির হাতেই রিমোট থেকে গেল। সে মিডিয়া যতই হইচই করুক।

শ্রীনি-বিরোধীরা মনে করছেন, আদালতে এ দিন ছুটকারা একমাত্র পেয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আদালত বলেছে, ধোনির বিরুদ্ধে তারা কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে না। বোর্ডের আইনজীবী উত্তেজিত ভাবে বলেছেন, “ধোনিকে ভিত্তিহীন ভাবে এর মধ্যে জড়ানো হয়েছে।” দাবি করা হয়েছে, মোটেও মুদগল কমিশনের সামনে ধোনি মিথ্যে সাক্ষ্য দেননি। কিন্তু শ্রীনি-বিরোধীদের লক্ষ্য তো আর ধোনি নন। তিনি ঘটনাচক্রে লক্ষ্য। তাঁরা দাবি করছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ শুক্রবারে শ্রীনি-র নিয়মিত কলঙ্কিত হতে থাকাটা সরকারি সিলমোহর পেয়ে গেল। তাঁদের ধারণা, বোর্ড ইতিমধ্যে শ্রীনির থেকে ঘুরতে শুরু করেছে। শিবলাল মোটেও আর শ্রীনির দিকে নেই। তিনি ঘুরেছেন সে দিকে, যেখানে অনেক বড় বড় নাম। পওয়ার-মনোহর-বিন্দ্রা-মোদী। শ্রীনি-ঘনিষ্ঠ আরও কেউ কেউ-ও নাকি আর তাঁর দিকে নেই। সে জন্যই বৃহস্পতিবার রাতে তামিলনাড়ুর সর্বময় কর্তা উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, “এরা কী ধরনের মানুষ? সব রকম বিপদে-আপদে আমি এদের পাশে রইলাম। এদের এক এক জনের সংস্থার ভর্তুকি বাড়ালাম। অথচ আমার বিপন্নতার সময়ে কেউ একটা স্টেটমেন্ট অবধি দিল না!”

শ্রীনি পক্ষ তাদের কোনও সঙ্কট তৈরি হয়েছে, মনেই করছে না। উল্টে মনে করে গাওস্কর নিয়ে আদালত যতই উচ্ছ্বসিত হোক আর মিডিয়া যতই লেখালেখি করুক, প্রশাসন চালানোর জন্য গাওস্করকে প্রতি পদক্ষেপে তাদের কথাই শুনতে হবে। করাচি থেকে এ দিন আনন্দবাজারকে ফোনে জাভেদ মিয়াঁদাদ বললেন, “গাওস্করকে আমার অভিনন্দন জানিয়ে দেবেন। ভারতের মতো জমকালো ক্রিকেট বোর্ডের মাথায় ওকেই মানায়।” শ্রীনিরা এই মনোনয়নে অভিভূত হওয়ার কিছু দেখছেন না। তাঁদের মতে, গাওস্কর সিস্টেম তৈরি করতে পারবেন না। শ্রীনি-র তৈরি সিস্টেম সঙ্গে নিয়ে তাঁকে প্রতি পদক্ষেপে চলতে হবে।

শ্রীনি-বিরোধীদের আবার বক্তব্য, শুক্রবার লড়াইয়ের চূড়ান্ত ভাগ্য-নির্ধারণ হয়নি। এ দিন শুধু সরকারি ভাবে শ্রীনিকে ‘বিবস্ত্র’ করা হয়েছে। তাঁর আরও লাঞ্ছনা বাকি থাকল। পরের শুনানির দিন। অর্থাৎ, ১৬ এপ্রিল। এঁদের দাবি, শশাঙ্ক মনোহরকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সদস্য আশ্বাস দিয়েছেন যে আপনি সেপ্টেম্বরে পূর্বাঞ্চল থেকে দাঁড়ালে আমরা সঙ্গে আছি। এর একটা বড় অংশ এ যাবৎ শ্রীনির কনফার্মড ভোটার ছিলেন। বিচারপতিরা এ দিন বলেছেন যে, ইন্ডিয়া সিমেন্টসের চাকরিতে থাকলে একমাত্র ভাষ্যকার আর ক্রিকেটারই ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন। কোনও কোনও সদস্য সেই রায়ের কপি দেখিয়ে বলছিলেন, “এর মানে হল, সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে শ্রীনিকে ওর নিজের কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করতে হবে।” এর চেয়ে বেশি হেনস্থা প্রকাশ্যে আদালত কক্ষে আর কোন প্রশাসকের কখন হয়েছে?

দু’তরফেই পক্ষে এবং বিপক্ষে তুমুল দাবি। যা সুনির্দিষ্ট মীমাংসায় আসতে দেয় না যে শুক্রবারের আদালতের মূল সুরটা আসলে কার পক্ষে গেল?

আপাতত মনে হচ্ছে শ্রীনিবাসন একই সঙ্গে জিতলেন এবং হারলেন!

srinivasan spot fixing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy