হতাশা। শুক্রবারের ইডেনে বাংলা শিবির যেমন।
সাহস। এই শব্দটা বোধহয় এ বার বাংলার ক্রিকেটের অভিধান থেকে বাদ পড়তে চলেছে।
শুক্রবার ইডেনের চরিত্রহীন উইকেটে ছ’পয়েন্টের দিকে না গিয়ে তিন পয়েন্টের জন্যই নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ করবে বাংলা, এমন ইঙ্গিত আগের দিনই ছিল। কিন্তু সেই তত্ত্বকে যে ভাবে বুক দিয়ে আগলাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তা দেখে মনে হতেই পারে, ভারতীয় ক্রিকেট নাইডু, অমরনাথ, পটৌডি, ওয়াডেকর, গাওস্করদের যুগ পেরিয়ে বিরাট কোহলির যুগে চলে এলেও বঙ্গ-ক্রিকেট পঞ্চাশের দশকেই পড়ে।
ব্যবধান ৩৩৬-এ রেখে দান ছেড়ে দেওয়ার আগেই যে তাঁরা তিন পয়েন্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, তার ইঙ্গিত মনোজ তিওয়ারি-ঋদ্ধিমান সাহার পর লক্ষ্মীর ব্যাট করতে না নামার সিদ্ধান্তেই লুকিয়ে ছিল। ৭৬ ওভারে ৩৩৭-এর টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নামা জম্মু-কাশ্মীরের দশটা কেন, পাঁচটা উইকেটও ফেলতে পারলেন না বোলাররা। কাশ্মীরি ওপেনার ইমরান হারুনের সেঞ্চুরি পূর্ণ হতেই তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দল নিয়ে মাঠ ছাড়ার উদ্যোগ নিলেন লক্ষ্মী। যেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন।
হাল যে আগেই ছেড়ে দিয়েছেন, তার বহু নিদর্শনও দিয়েছেন বঙ্গ-ক্রিকেটাররা। সকালে ব্যাট করে ১৪ ওভারে মাত্র ৪৭ তোলা। শ্রীবৎসের হাত থেকে ইমরানের (তখন কুড়িতে) দেওয়া ক্যাচ পড়া। তার আগে ফিল্ডিং করতে গিয়ে শ্রীবৎস ও অরিন্দমের একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া। ওভার থ্রোয়ে বাউন্ডারি। একাধিক মিসফিল্ড। লাঞ্চের পর দল পরিচালনার ভার মনোজের হাতে দিয়ে লক্ষ্মীর মিড অন, লং অনে ফিল্ডিং করা। যখন বিপক্ষকে চাপে রাখার কথা, তখন ফিল্ডিং ছড়িয়ে দেওয়া। এমন বেশ কয়েকটি নিদর্শন থেকে গেল ইডেনের বুকে।
প্রার্থনা। শুক্রবারের ইডেনে জম্মু-কাশ্মীর দল।
তবু দিনের শেষে মাঠের মতো বাইরেও রক্ষ্মণাত্মক লক্ষ্মীর সাফাই, “এ যা উইকেট, তাতে আমার বোলাররা খুব ভাল বোলিং করেছে। এর চেয়ে ভাল বোলিং আর কী হবে?” সারা দিন নিজের কাজে ব্যস্ত থাকা সৌরভ সন্ধ্যায় ইডেনে এসে বললেন, “সমস্যাটা হল ইডেনে বরাবরই ভাল উইকেটের ইতিহাস রয়েছে। তাই এখানে চার দিনের ম্যাচে রেজাল্ট হওয়াটা কঠিন। আর কোনও মাঠে শেষ দিনে এত রান ওঠে?” কিন্তু চাওয়া হয়েছিল যে ঘূর্ণি উইকেট? লক্ষ্মী দলের ব্যর্থতার জন্য উইকেটের দোহাই দিলেও কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় তা শুনে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সৌরভ কিন্তু বললেন, “টার্নিং উইকেট হয়নি। পরের ম্যাচে চেষ্টা হবে, যাতে করা যায়। যা পরিস্থিতি, তাতে টার্নিং উইকেট দরকার ছিল। কিন্তু ইডেনের উইকেট এমনই।” কাশ্মীরি ক্যাপ্টেন পরভেজ রসুল আবার বলে গেলেন, “এটা মোটেই ভাল উইকেট না। এখানে ভেবেছিলাম ভাল উইকেট পাব। এই উইকেট কিন্তু ক্রিকেটের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়।”
লক্ষ্মী, সৌরভরা যাকে ভাল ব্যাটিং উইকেট বলছেন, তাতে সকালে ১৪ ওভারে ৪৭! ক্যাপ্টেনের ব্যাখ্যা, “অত নেগেটিভ বোলিং হলে কী করব?” আর তখন নিজে ব্যাট করতে না নামার ব্যাখ্যা, “তখনই বুঝে যাই এই ম্যাচ সরাসরি জেতা খুব কঠিন। সে জন্যই আর নামিনি।” কিন্তু শেষ দিন সকালেই ডিক্লেয়ার না করে এত রক্ষ্মণাত্মক কেন? সৌরভের জবাব, “ওরা আগের ইনিংসেই তিনশোর উপর রান করেছে। ডিক্লেয়ার করলে আমরা হেরেও যেতে পারতাম। আমাদের কোয়ালিফাই করতে হবে। তার জন্য এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট ঠিকই আছে।”
এ দিন প্রথম বোলিং চেঞ্জে মনোজকে এনে লক্ষ্মী সাফ বুঝিয়ে দেন, দলের স্পিনারদের উপর তাঁর আস্থা নেই। অথচ গাজিয়াবাদে উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচের দলে কোনও পরিবর্তন নেই, সিদ্ধান্ত নির্বাচকদের। ওখানে সম্ভবত সিমিং উইকেট। তাই প্রথম এগারো থেকে নাকি ইরেশ, শ্রীবৎসকে বাদ দিয়ে বীরপ্রতাপ, সন্দীপনকে মাঠে নামানো হবে বলে ঠিক হয়েছে।
সিএবি যুগ্ম-সচিব তাকিয়ে বাংলার শেষ তিন ম্যাচে। তাঁর কথায়, “এর পরের ম্যাচ উত্তরপ্রদেশ আর মধ্যপ্রদেশে। ওদের উইকেটে রেজাল্ট হয়। তাই যে কোনও ম্যাচে আমরা সরাসরি জিতলে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যাব।” বাংলা অবশ্য এখন লিগ টেবলে ছয়ে এবং প্রথম তিন দল কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে। দু’টি বাইরের ম্যাচ ছাড়াও বাকি ঘরের মাঠে রেল ম্যাচ। যার অপেক্ষায় তিন ব্রাত্য বাঙালি অরিন্দম, অনুষ্টুপ, অর্ণব।
তাঁদের সামনেও না লজ্জায় মাথা হেঁট হয় এই বাংলার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৩৮৭ ও ২৬৪-৫ ডি.(ঈশ্বরন ৬৩, অরিন্দম ৬০, মনোজ ৬১, মুদাশির ২-৫৯)
জম্মু-কাশ্মীর ৩১৫ ও ২১৯-২ (ইমরান ১০২ ন.আ., আদিল ৫৮)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy