Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
কলকাতা-মুম্বই উড়ানে জন্ম বিদায়ী ভাষণের

ছেলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে অবসর কাটছে সচিনের

কলকাতা থেকে মুম্বই ফেরার উড়ানে আচমকাই মনটা মেঘলা হয়ে উঠেছিল তাঁর। পেশাদার জীবনের শেষ ম্যাচে নামার চিন্তাটা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল খানিকক্ষণ। কিন্তু তার পরেই মনে হয়, এই খেলাটাও তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে! আর বিদায় মুহূর্তে গোটা দুনিয়া অধীর অপেক্ষায় থাকবে সদ্য প্রাক্তনের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য!

চব্বিশ বছরের কেরিয়ারের উপর দাঁড়িয়ে সচিন তেন্ডুলকর। নীচে তাঁর ব্যাটিং ওয়াগন-হুইল, পিছনের ফলকে খোদাই তাঁর বিদায়ী ভাষণ। মুম্বইয়ে রবিবার। ছবি: পিটিআই।

চব্বিশ বছরের কেরিয়ারের উপর দাঁড়িয়ে সচিন তেন্ডুলকর। নীচে তাঁর ব্যাটিং ওয়াগন-হুইল, পিছনের ফলকে খোদাই তাঁর বিদায়ী ভাষণ। মুম্বইয়ে রবিবার। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৯:২৩
Share: Save:

কলকাতা থেকে মুম্বই ফেরার উড়ানে আচমকাই মনটা মেঘলা হয়ে উঠেছিল তাঁর। পেশাদার জীবনের শেষ ম্যাচে নামার চিন্তাটা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল খানিকক্ষণ। কিন্তু তার পরেই মনে হয়, এই খেলাটাও তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে! আর বিদায় মুহূর্তে গোটা দুনিয়া অধীর অপেক্ষায় থাকবে সদ্য প্রাক্তনের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য!

এই বোধোদয়টাই নাকি তাঁকে প্রথম নিজের বিদায়ী ভাষণ নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে। এবং মাটি থেকে কয়েক হাজার মাইলের উচ্চতায়, মধ্যগগনেই সে দিন অঙ্কুরোদ্গম ক্রিকেট ঈশ্বরের সেই অবিস্মরণীয় ভাষণের। প্রত্যেক তরুণ ক্রিকেটারের জন্য যেটা শোনা বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে বিধান দিয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।

সচিন তেন্ডুলকর অবশ্য জানাচ্ছেন, কী বলবেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। খালি ঠিক করে নিয়েছিলেন কাদের কথা বলবেন। এ দিনের রবিবাসরীয় মুম্বইয়ে আরও এক বার সে দিনের কলকাতা-মুম্বই উড়ানে ফিরে গিয়ে সচিন বললেন, “বিমানে একা বসেছিলাম। হঠাৎ মনে হল, আরে! এটাই তো আমার শেষ ম্যাচ। তার পরেই সতীর্থদের সামনে আমাকে দাঁড়াতে হবে প্রাক্তন হয়ে। গোটা দুনিয়া চাইবে আমি কিছু বলি। কী বলব, সেটা নিয়ে অবশ্য ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল, বিদায়ী ভাষণে আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের কারও নাম উল্লেখ করতে যেন ভুলে না যাই।”

এক হাতে সেই নামগুলো লেখা একটা কাগজ আর অন্য হাতে এক বোতল জল নিয়ে ২০১৩-র ১৬ নভেম্বর ওয়াংখেড়েতে সচিন যখন বলা শুরু করেন, মিনিট কুড়ি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছিল বিশ্ববাসী। সচিন এ দিন বলেন, “নামগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গেই বাকিটা আমার হৃদয় থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ভীষণ বিশেষ ছিল মুহূর্তটা— অবিস্মরণীয়! জানতাম আবেগতাড়িত হয়ে পড়ব। তাই জলের বোতলটা রেখেছিলাম। যাতে গলা বুজে আসছে বুঝলেই একটু করে জল খেয়ে সামলে নিতে পারি। তবে কী জানেন, এ সব চিত্রনাট্য আগে থেকে তৈরি করে রাখা যায় না। সবটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা। তবে যা ভেবেছিলাম, সে দিন সব কিছু তার থেকে অনেক বেশি ভাল ভাবেই শেষ হয়।”

তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই ওই কুড়ি মিনিটের হৃদয় উজাড় করা কথাগুলোও ইতিমধ্যে ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের সেরার পর্যায়ভুক্ত। প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমীর মনে পাকাপাকি স্থান করে নেওয়ার পর যা এ বার ফলকে খোদাই হয়ে থাকল। ক্রিকেট কিংবদন্তিকে অভিনব সম্মান জানাতে বান্দ্রার কার্টার রোড-এ সচিনের বাড়ির অদূরে সমুদ্রের ধারে এ দিন উন্মোচন হল ‘ব্যাট অব অনার’ নামে স্থাপত্য। তিনটি উইকেটের উপর সচিনের স্বাক্ষরিত পঁচিশ ফুট উঁচু স্টিলের ক্রিকেট ব্যাট। তলায় ফলকে সচিনের বিদায়ী ভাষণ আর ব্যাটিংয়ের ওয়াগন হুইল। উন্মোচন অনুষ্ঠানে সচিন বলছিলেন, “দু’টনের ব্যাটটায় আমার সাক্ষর নীল রঙে কারণ এটাই ভারতের রঙ— ব্লিড ব্লু। এই ওয়াগন হুইল আর বাদবাকিটাও অবিশ্বাস্য! আর কী বিশাল! সব মিলিয়ে সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।”

অবসর ঘোষণার পর থেকে মানুষের কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছেন, সেটা এখনও সচিনের কাছে ‘অভাবনীয় স্বপ্নের মতো’। বলেছেন, “অবসর ঘোষণার পর থেকে যত ভালবাসা পেয়েছি সেই অনুভূতিটা বলে বোঝানো যায় না।” ক্রিকেটের পর অবসর জীবন দারুণ কাটছে কিংবদন্তির। ক্রিকেটের থেকে দূরেই আছেন এখনও। “বাড়ির বাগানে আমার ছেলে অর্জুন আর ওর স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে খেলার বাইরে আর তেমন ক্রিকেট খেলিনি। তবে আজ এই পেল্লাই ব্যাট আর ওয়াগন হুইলটা দেখে আবার মাঠে নামতে ইচ্ছে করছে।” অবশ্য নতুন কোনও ভূমিকায় ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে এখনও কিছু ভাবেননি। “এই তো সবে অবসর নিলাম। এখুনি ফেরার কথা ভাবতে পারছি না,” হেসে জানিয়েছেন সচিন।

তবে তরুণদের জন্য তাঁর একমাত্র টোটকা— সবার আগে খেলাটার প্রেমে পড়তে হবে। সচিনের কথায়, “সবার আগে ক্রিকেটকে মনে বাসা বাঁধতে দাও। তার পরে সেটা ঢুকিয়ে ফেল মস্তিষ্কে। তা হলে দেখবে ক্রিকেট খেলতে নেমে কী করে রান করবে বা উইকেট নেবে, সেটা নিজেই বুঝতে পারছ।” এর সঙ্গে এ দিন যোগ করলেন, “কঠিন পরিশ্রমটা লোকে নজর করবে। কিন্তু তৃপ্তি ব্যাপারটা একান্ত ক্রিকেটারের নিজের। নিজের চেষ্টায় তুমি নিজে তৃপ্ত কি না, সেটা একমাত্র তুমি নিজেই বলতে পার। স্বপ্ন দেখা জরুরি। কিন্তু তার থেকেও জরুরি স্বপ্নটাকে ধাওয়া করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sachin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE