চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে বিক্রি হচ্ছে দুই ক্লাবের বিশেষ টি শার্ট। মাদ্রিদে। ছবি: কাঞ্চন সরকার
মাদ্রিদে আমি যেখানে থাকি, সেটা প্রায় শহরের কেন্দ্রস্থল। গত কয়েক দিনে শহরটা ঘুরে দেখে একটা কথা বলতেই পারি।
মাঠে কী হবে জানি না, কিন্তু এখনও পযর্ন্ত ‘ম্যাচের স্কোর’ আটলেটিকো ১ মাদ্রিদ ০।
দেখুন, মাদ্রিদ ডার্বি আমরা প্রতি বছরই দেখে থাকি। লা লিগার সৌজন্যে। কিন্তু এ বারের ম্যাচটার গুরুত্বই যে সম্পূর্ণ আলাদা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলে কথা। যে জিতবে সে-ই তো হবে ইউরোপের সম্রাট। আর তার নামের পরে থাকবে মাদ্রিদ শব্দটা। তাই তো রেজাল্ট যাই হোক না কেন, দু’দিন আগের থেকেই শহরে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে।
রিয়াল-আটলেটিকো দুই ক্লাবের জার্সি থেকে টুপি, পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটা জিনিস। আর জার্সি-টুপি বিক্রি হওয়ার এই ‘ম্যাচে’ যা দেখছি আটলেটিকোই এগিয়ে। ওরা লা লিগা জেতায় উন্মাদনা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। এ ছাড়া দোকানে দোকানে টাঙানো রয়েছে বিশেষ রকমের এক মাফলার। দু’মাথার এই মাফলারে এক দিকে রিয়াল তো অন্য দিকে আটলেটিকো। উপরে আবার লেখা ২৪ মে ২০১৪।
মাদ্রিদে তিনটে জিনিস খুব জনপ্রিয়- বিয়ার, ফুটবল ও বুল ফাইটিং। ফাইনালের উন্মাদনায় ফুটবলের পারদ আরও বেড়েছে। মাদ্রিদে ‘ফুটবল ও পাব’ রীতিতে বিশ্বাস করে সবাই। শনিবার আবার ফাইনালের কথা মাথায় রেখে যে গুটিকয়েক বার-এ টিভি নেই তারাও ব্যবস্থা করছে ফাইনাল দেখানোর। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো ব্যবসাও বাড়বে আবার ফাইনাল দেখার সুবিধাও থাকছে।
সরাসরি লিসবন থেকে ফাইনাল দেখানোর জন্য মাদ্রিদ সরকার ঠিক করেছিল যে আয়ুন্তামিয়েন্তো ‘দ্য মাদ্রিদ,’ যা শহরের কেন্দ্রস্থল হিসাবে পরিচিত, সেখানে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হবে। এক সঙ্গেই দুই ক্লাবের সমর্থক ম্যাচ দেখতে পারবে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণেই প্ল্যানটি বাতিল হয়। মাদ্রিদ পুলিশের আশঙ্কা, ফাইনালে হাতাহাতি হতে পারে। এই কারণে ব্যাক আপ প্ল্যান হিসাবে ম্যাচ দেখানোর জন্য দুটো ক্লাবের ঘরের মাঠকেই বেছে নিয়েছে দেশের সরকার। সান্তিয়াগো বের্নাবাও ও ভিসেন্তে কল্দেরন, দুটো ক্লাবের মাঠেই খেলা দেখার সুযোগ থাকবে সমর্থকদের। তাও আবার মাঠের মাঝখানে জায়ান্ট স্ক্রিনে। সোমবার থেকেই খেলা দেখার পাস বিক্রি করতে শুরু করে দুই ক্লাব। দেড় দিনের মধ্যেই সমস্ত পাস বিক্রি হয়ে যায়।
আমি যেখানে থাকি সেই লাভাপিয়েসে অনেক বাঙালি আছে। আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই ইস্টবেঙ্গল- মোহনবাগান সমর্থক। দু’দলে প্রায়ই তর্কাতর্কি হয়। কিন্তু মাদ্রিদ ডার্বির প্রসঙ্গ উঠলে সবাই এক দলেসবাই রিয়ালের সমর্থক।
আমরা জানি যে কলকাতার সঙ্গে আটলেটিকো মাদ্রিদের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে আটলেটিকোর সমর্থক তৈরি হয়নি। আসলে অনেক বাঙালি আছে যারা রিয়াল কিংবদন্তি জিদান, ফিগোর মতো ফুটবলারের খেলা দেখেছে। তাই সবারই রিয়ালের প্রতি একটা ‘সফট কর্নার’ থাকছে।
শুধু মাদ্রিদ নয়। লিসবনেও চলছে ‘মাদ্রিদিস্তাদের’ দাপট। ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫-২০ হাজার লোক চলে গেছে লিসবনে। কেউ কেউ ছুটি কাটিয়ে একেবারে ফাইনাল দেখে ফিরবে। দুই দলের আবার বিশেষ রীতি আছে। রিয়াল জিতলে যেমন সিবেলেস প্লাজার মূর্তির উপরে ক্লাবের স্কার্ফ পরায় দলের অধিনায়ক। আটলেটিকোর জায়গা কিন্তু ‘ফুয়েন্তা দ্য নেপচুন’। অর্থাৎ নেপচুনের ঝরনা। ঝরনার উপরে থাকা মূর্তিকে মানা হয় জলের দেবতা হিসেবে। যার মাথার মুকুটের পাশে স্কার্ফ ঝোলায় আটলেটিকো।
শনিবার রাতে যারাই স্কার্ফ ঝোলাক না কেন, জিতবে মাদ্রিদই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy