Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মেসি নয়, জার্মান মেসি

দি মারিয়া না থাকায় ডুবল আর্জেন্তিনা

দি মারিয়া না থাকায় মেসি সাবলীল হয়ে উঠতে পারলেন না। তা সত্ত্বেও গোলের সুযোগ পেয়েছিল সাবেয়ার দল। তবু কেন স্বপ্নভঙ্গ হল আর্জেন্তিনার? জানাচ্ছেন অ্যালভিটো ডি’কুনহা।দি মারিয়া না থাকায় মেসি সাবলীল হয়ে উঠতে পারলেন না। তা সত্ত্বেও গোলের সুযোগ পেয়েছিল সাবেয়ার দল। তবু কেন স্বপ্নভঙ্গ হল আর্জেন্তিনার? জানাচ্ছেন অ্যালভিটো ডি’কুনহা।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৪:৫০
Share: Save:

এক) শুরুটা বেশ ভালই করেছিল আর্জেন্তিনা। ওরা কাউন্টার অ্যাটাকের যে স্ট্র্যাটেজি নেয়, সেটা একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। পুরোপুরি আক্রমণে ওঠার স্ট্র্যাটেজি নিলে গোল খেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। দি মারিয়া নেই যখন, কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে গোল করাই ভাল। তবে এ দিন বহু সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল আর্জেন্তিনাকে।

দুই) ইগুয়াইনের ওয়ান ইজ টু ওয়ান সুযোগটা নষ্ট করা দেখে মনে হচ্ছিল, এই ভুলের খেসারত না দিতে হয় আলেজান্দ্রো সাবেয়ার দলকে। শেষ পর্যন্ত তাই হল। বিরতির পর মেসির মতো ফুটবলারও যে ভাবে গোলের সুযোগ নষ্ট করল, এর পর কী করার থাকতে পারে? পুরো ম্যাচে এ রকম আরও সুযোগ নষ্ট করেছে আর্জেন্তিনা। এ দিন দি মারিয়াকে খুব মিস করছিলাম।

তিন) অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়ানোর সময়ই মনে হয়েছিল, এ বার আর পারবে না আর্জেন্তিনা। কারণ, সেমিফাইনালেই ১২০ মিনিট খেলেছিল মেসিরা। একটা ক্লান্তি তো ছিলই। তার মধ্যে আবার যে ভাবে পাল্লা দিয়ে জার্মানির সঙ্গে দৌড়েছে সাবেয়ার ছেলেরা, তাতে ১২০ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণাত্মক মুলারদের আটকে রাখা কঠিন ছিল। আর জার্মানিও অতিরিক্ত সময়ে তেড়েফুঁড়ে উঠেছিল গোলের জন্য। ডাচদের বিরুদ্ধে রোমেরো-র পারফরম্যান্স দেখার পর মুলাররা টাইব্রেকার পর্যন্ত যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাননি।

চার) মেসি নিঃসন্দেহে বড় ফুটবলার। সবচেয়ে বড় কথা, ওর দৃষ্টি সাংঘাতিক। দেখলে মনে হবে, ও মাথা নিচু করে বল নিয়ে দৌড়চ্ছে। আসলে কিন্তু ও সামনের ফুটবলারদের তীক্ষ্ন নজরে রাখে। এই গুণটা যেন ওর রক্তে মিশে আছে। যে ক’টা পাস এ দিন ও বাড়িয়েছে সব ক’টাই দুরন্ত। বিশেষ করে ইগুয়াইনের যে গোলটা অফ সাইডের জন্য বাতিল হয়ে গেল। মেসিকে এ দিন জোনাল মার্কিং করেছিল জার্মানি। এতে কিছুটা সুবিধা পেয়ে গিয়েছিল আর্জেন্তিনা। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেনি লাভেজ্জি, ইগুয়াইন বা পরিবর্তে নামা পালাসিও, আগেরোরা। মেসিকে তো দ্বিতীয়ার্ধে এমন ভাবে ঘিরে রাখা হয়েছিল যে, ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয়নি। তবে এর ফলে জার্মানির ডিফেন্সে একটা ফাঁক তৈরি হয়েছিল। সেটাও কাজে লাগাতে পারল না আর্জেন্তিনা।

পাঁচ) জার্মানি সাধারণত মাঝমাঠ-এর দখল নিজেদের হাতে রাখতে চায়। কারণ, যে দল মাঝমাঠ দখল করে নেয়, তাদের ম্যাচ জেতার সুযোগ বেশি থাকে। তবে আর্জেন্তিনার মাঝমাঠ কিন্তু সে কাজটা ঠিক মতো করতে দেয়নি ওজিল-ক্রুজদের। অবশ্য মেসির দিকে নজর দিতে গিয়ে ওদের মাঝমাঠের স্ট্র্যাটেজি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই ম্যাচটাও অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ছয়) সেমিফাইনালে দেখেছিলাম নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনা রক্ষণের দুরন্ত পারফরম্যান্স। এ দিনও কিন্তু বেশ ভাল খেলেছেন জাবালেতা, দেমিচেলিস, রোজোরা। সবচেয়ে ভাল লেগেছে জার্মান ফুটবলারদের পায়ে বল মানেই সামনে একজন করে ফুটবলার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। স্বভাবতই জোয়াকিম লো-র দলের ছন্দ এতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে সুযোগ সন্ধানী জার্মানদের আটকাতেই যেন বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ল আর্জেন্তিনার ফুটবলাররা। আক্রমণের দিকে তেমন জোর দিতে পারল না ওরা। শেষ দিকে ওরা যেন টাইব্রেকারের কথা ভেবেই খেলছিল। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে নেয় জার্মানরা।

সাত) একটা কথা বার বার বলতেই হচ্ছে, আগের ম্যাচগুলোতে মেসি আর দি মারিয়া যে পাস খেলে বার বার গোলের মুখ খুলেছে, সেটা এ দিন না হওয়ায় ফরোয়ার্ড লাইনকে কিছুটা দুর্বল মনে হচ্ছিল। লাভেজ্জি এবং ইগুয়াইনের সঙ্গে মেসির সেই বোঝাপড়াটা বোধহয় গড়ে ওঠেনি এই ম্যাচে। বিরতির পরই লাভেজ্জিকে তুলে আগেরোকে নামানো বা ইগুয়াইনকে বসিয়ে পালাসিওকে নামানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি। দি মারিয়ার অভাবটা রয়েই গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

angel di maria argentina fifa word cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE