Advertisement
E-Paper

নেইমার এখন ব্রাজিলের মেসি

ব্রাজিল খেললে স্টেডিয়ামে একটা অপরূপ আলোকবর্তিকা তৈরি হয়। এমনিতেই ব্রাজিলের খেলা থাকা মানে সে দিন নাগরিক জীবনেও সবাই হলুদ জার্সি পরবে। তা মাঠে আসুক বা না আসুক! হোটেলের রিসেপশনিস্টরাও হলুদ। আবার এগজিকিউটিভও হলুদ পরে অফিস যাচ্ছে। না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না একটা হলুদ রঙের জার্সি কী ভাবে গোটা দেশকে এক মন্ত্রে দীক্ষিত করে রাখতে পারে।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০৩:৩৮

ব্রাজিল খেললে স্টেডিয়ামে একটা অপরূপ আলোকবর্তিকা তৈরি হয়। এমনিতেই ব্রাজিলের খেলা থাকা মানে সে দিন নাগরিক জীবনেও সবাই হলুদ জার্সি পরবে। তা মাঠে আসুক বা না আসুক! হোটেলের রিসেপশনিস্টরাও হলুদ। আবার এগজিকিউটিভও হলুদ পরে অফিস যাচ্ছে। না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না একটা হলুদ রঙের জার্সি কী ভাবে গোটা দেশকে এক মন্ত্রে দীক্ষিত করে রাখতে পারে।

মানে গ্যারিঞ্চা স্টেডিয়ামে বসে যেন হলুদের দিওয়ালি পালিত হচ্ছিল। লাল সব গ্যালারি আসনগুলো। তার ওপর হলুদ পড়ে মনে হচ্ছে একসঙ্গে পঞ্চাশ হাজার ইস্টবেঙ্গল জার্সি। পর মুহূর্তেই ওই চিল-চিৎকার আর টানা চলতে থাকা গানে বোঝা যাচ্ছে এটা আর যাই হোক, কিছুতেই কলকাতা ময়দান নয়। টিম নামতে না নামতেই গ্যালারি গত ক’দিনের অভিমান ভুলে হলুদ আবেগের ঢল নামিয়ে দিল মাঠে। আর সেই হলুদ-বিস্ফোরণেই যেন উড়ে গেল ক্যামেরুন। সময়-সময় স্কোলারির ব্রাজিল যে সব ঝলক দেখাল, তা একদা তাঁর সোনার টিমের কাছে পাওয়া যেত!

কিন্তু হলুদ যদি ব্রাজিলিয়ান জয়োচ্ছ্বাসের রং হয়, দুর্ভাবনার রং তবে কী? কালচে? সেটাও টুকরোটাকরা এমন বেরিয়ে পড়ল যে, শনিবারের বিপক্ষ চিলি টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে অবধারিত ছকে নিয়েছে।

বিস্তীর্ণ এই হলুদ সাম্রাজ্যের সম্রাট হিসেবে সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করলেন নেইমার দ্য সিলভা। ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড কে পরে রয়েছে তার নিকুচি করেছে, ব্রাজিল টিমের পুতাগ্নি হিসেবে বরাবর পেলের আমল থেকে যা বিবেচিত হয়ে এসেছে, সেই দশ নম্বর জার্সি আগেই তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে এসে পেলেন জনতার গর্জন, যা এতই দুর্লভ যে ভারতীয় ক্রিকেটের এত বছরের ইতিহাসেও মাত্র এক জনের জন্যই বরাদ্দ ছিল। নে-ই-মা-র, নে-ই-মা-র। এই যা চিৎকার ব্রাসিলিয়া তুলে দিল তার রেশ নির্ঘাত বিশ্বকাপজুড়ে ব্রাজিল থাকাকালীন স্টেডিয়ামগুলোয় চলবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে ক্যামেরুন কোচকে জিজ্ঞেস করা হল ব্রাজিল ৪-১ জিতলেও তারা কি বড্ড বেশি নেইমার মুখাপেক্ষী নয়? জার্মান কোচ বললেন, “এই উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া ঠিক হবে না।” সবাই বুঝল তিনি কী বলতে চাইছেন এবং সেটাই অমোঘ।

আর্জেন্তিনা মানে যদি লিওনেল মেসি এবং দশ জন হয়।

ব্রাজিল হল নেইমার, দাভিদ লুইজ এবং বাকি নয় জন।

আর ব্রাজিলকে জেতাতে হলে একা নেইমার! নক আউট পর্বে এসে গিয়ে এখন আর প্রশ্নটা এমন নয় যে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে কি না?

প্রশ্নটা হল নেইমার ব্রাজিলকে কাপ দিতে পারবেন কি না? সত্যিই তাঁকে আটান্নর পেলের ছায়া মনে হচ্ছে। অসম্ভব খাটছেন। এত জায়গা বদলাচ্ছেন যে তাঁকে মার্ক করাই সম্ভব নয়। বডি ফেইন্টিং অসম্ভব ভাল। ড্রিবলের কাজ ভাল। শরীর মোচড়ে ভারসাম্য যখন-তখন যে দিকে নিয়ে যেতে পারেন। আর এত ফিট লাগছে যে বার্সেলোনায় কেন মরসুমটা ভাল যায়নি সময় সময় রহস্য মনে হবে। নাকি তিনি দেশের জার্সিতে প্রথম বিশ্বকাপ বলে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা অনুভব করছেন? ক্যামেরুন তাঁর প্রথম গোল শোধ দেওয়ার পর যে আধিদৈবিক নীরবতা স্টেডিয়ামে তৈরি হয়েছিল, নেইমার দ্রুতই সেই অসাড় ভাবটা সারিয়ে দিলেন দ্বিতীয় গোলটা করে।

১৯৫৮-র সঙ্গে ২০১৪-র একটাই গরমিল! পেলের পাশে ডিডি, ভাভা, গ্যারিঞ্চা, জালমা সান্তোসরা ছিলেন। সান্তোসের সতেরো বছরের একটা ছেলেকে তাঁরা পরিচর্যায় রেখে প্রস্ফুটিত হতে দিয়েছিলেন। আধুনিক সান্তোসের এই ছেলেটিও সংসারের সর্বকনিষ্ঠ, আবার তাঁকেই কি না একা পরিবার টানতে হচ্ছে! পেলের ছিল গ্যারিঞ্চা। নেইমারের আছে ফ্রেড। যাঁকে ফুলবাবু বললেও কম বলা হল।

নেইমারের সর্বস্বতা ভবিষ্যৎ আতঙ্কের কারণ হতে পারে কি না জিজ্ঞেস করায় স্কোলারি যেন রুষ্টই হলেন। বললেন, আর্জেন্তিনাও তো একই ভাবে মেসির ওপর নির্ভরশীল। বড় প্লেয়াররা যে কোনও টিমেই আলাদা তফাত করতে জানে। তা বলে তারা তো আর একা খেলে না। ডিফেন্স খারাপ খেলেছেও কিছুতেই মানবেন না ব্রাজিলীয় কোচ। ঘটনা হল তাঁর রক্ষণের ডান দিকটা প্রায়ই কাজ করছে না। ক্রোয়েশিয়া দানি আলভেজের দিক দিয়েই গোলটা পেয়েছিল। সোমবারও ক্যামেরুন একটা সময় মুহূর্মুহূ আক্রমণ তুলল ওই দানি আলভেজের দিক থেকেই। তা-ও তো স্যামুয়েল এটোকে চোটের জন্য এক মিনিটও খেলাতে পারেনি ক্যামেরুন। চিলি টিমে কিন্তু এমন অপরিহার্য একজন কেউ নেই। অনেকেই দ্রুত আক্রমণ তৈরি করতে পারে।

সেই শহরেই ব্রাজিল-চিলি সাক্ষাৎ হচ্ছে যেখানে মাত্র এক বছর আগে একই প্রতিপক্ষকে হারাতে না পেরে থিয়াগো সিলভারা প্রচুর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হয়েছিলেন। সে দিন অবশ্য বেলোর জনতা সবচেয়ে রুষ্ট ছিল নেইমারের উপর।

এই বাজারে আর সেটা হবে না। গ্যারিঞ্চাও তো নিজের স্টেডিয়ামে বসে দেখে নিলেন, নেইমার ছাড়া এই টিমটার কোনও গতি নেই। হারালেও নেইমার। জেতালেও নেইমার।

নেইমার এখন ব্রাজিলের মেসি!

fifaworldcup gautam bhattacharya brasilia neymar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy