পরের পর বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর এ বার টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে ধরা হচ্ছিল তাদের। কিন্তু প্রথম চারটে ম্যাচে ইংল্যান্ডের যা পারফরম্যান্স, তাতে তাদের উপর বাজি ধরতে ভয় পাচ্ছেন কট্টর ইংরেজ সমর্থকও। এখন ইয়ন মর্গ্যানের ইংল্যান্ডের যা অবস্থা, তাতে গ্রুপের শেষ দুটো ম্যাচই তাঁদের কাছে মরণবাঁচন।
গ্রুপে ইংল্যান্ডের শেষ দুই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, ওই দুটো ম্যাচ যদি ইংল্যান্ড জেতেও, তা হলেও শেষ চার নিশ্চিত নয়। কারণ বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়, তা হলে পুল ‘এ’ থেকে চতুর্থ টিম হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে ভারতের পড়শিরা। যে পড়শিদের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ইংল্যান্ডের রেকর্ড ভাল নয়। দু’দেশের শেষ তিন সাক্ষাতের দুটোই জিতেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে রয়েছে ২০১১ বিশ্বকাপের ম্যাচও।
ইংল্যান্ড তাই খাদের খুব কাছে দাঁড়িয়ে। এখান থেকে এক পা এ দিক ও দিক হলেই নিশ্চিত মৃত্যু। এ সবের মধ্যে আশার আলো যে একেবারে নেই, তা অবশ্য নয়। পরপর দুটো ম্যাচে ৩০০ তুলেছে ইংল্যান্ড। জো রুট দারুণ ব্যাটিং ফর্মে, জস বাটলার ভাল ছন্দে, মইন আলিও বল হাতে সফল। নেটে অনেক স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে অধিনায়ক মর্গ্যানকে। কিন্তু বিশ্বকাপে তিনটে হারের ধরন এমনই যে, এ সব এখন তুচ্ছ সান্ত্বনার মতো দেখাচ্ছে।
প্রাক্তন ইংরেজ ক্রিকেটার বব উইলিস মনে করছেন, একেবারে শেষ মুহূর্তে ব্যাটিং অর্ডারে অদলবদল করা টিমের পক্ষে কাল হয়েছে। “শ্রীলঙ্কায় জেমস টেলর অত ভাল খেলল, তবু তিন নম্বরে গ্যারি ব্যালান্সকে খেলানো হচ্ছে কেন? মর্গ্যান আর বাটলার বড্ড নীচে ব্যাট করছে। নতুন নিয়মের সঙ্গে ওরা মানিয়ে নিতে পারছে না। কারণ একমাত্র মর্গ্যান গোটা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি খেলে, আর অনেক নিয়মই ওই ফর্ম্যাট থেকে এসেছে,” বলে তিনি আরও যোগ করেছেন, “এবি ডে’ভিলিয়ার্স বা ব্রেন্ডন ম্যাকালাম খেলাটাকে অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের ও রকম কেউ নেই।”
সবচেয়ে চিন্তার হচ্ছে দুই সিনিয়র বোলারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। স্টুয়ার্ট ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসনের পিচ ম্যাপ নাকি ইংরেজ সমর্থকদের কাছে এখন দুঃস্বপ্নের মতো। তাঁরা যে টানা শর্ট বল করে যাচ্ছেন, মর্গ্যান নিজে স্বীকার করেছেন সেটা স্ট্র্যাটেজি নয়, বোলারদের ভুল। তাঁদের দু’জনকেই নাকি বলা হবে, সোমবার ফুল লেংথে বল করতে। “শর্ট বলটা আমাদের নীতি বা ট্যাকটিক্স নয়। ওই জায়গাটায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। বোলিং একটা চিন্তার বিষয়,” বলছেন মর্গ্যান।
এত কিছুর পরেও অবশ্য পরের দুটো ম্যাচের জন্য দলে কোনও বদল করতে চায় না ইংল্যান্ড। কয়েক মাস ক্রিকেটের বাইরে থাকা গ্যারি ব্যালান্স হঠাৎ করে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঢুকেও তেমন কিছু করতে পারেননি। চার ম্যাচে তাঁর রান মাত্র ৩৬। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে, নেটে নাকি ফর্ম ফিরে পেয়েছেন ব্যালান্স। সুতরাং অ্যালেক্স হেলস হয়তো এই বিশ্বকাপ রিজার্ভ বেঞ্চে বসেই কাটাবেন। মর্গ্যান বলছেন, “অ্যালেক্স খুব খাটছে। কিন্তু টিমে বদল আনাটা খুব বড় সিদ্ধান্ত। তাই হঠাৎ করে সে রকম কোনও সিদ্ধান্ত আমরা নিতে চাই না।”
ইংরেজ ক্রিকেটমহলের একাংশের আবার মত, এই টিমটা বড্ড বেশি ‘নরম’। এদের মধ্যে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার নৃশংস ব্যাপারটাই নেই। যা নিয়ে একেবারেই ভাবতে চান না ইয়ন মর্গ্যান। বরং তিনি বলছেন, “আমরা মানুষ হিসেবে ভাল না খারাপ, সেটা অপ্রাসঙ্গিক। খারাপ পারফর্ম করলে এ রকম হাজার-হাজার থিওরি তৈরি হয়। আমরা মোটেও ‘ফ্রিজ’ করে যাইনি। তবে হ্যাঁ, নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। টুর্নামেন্টের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের মোকাবিলা করার মতো ভাল ক্রিকেট খেলিনি। সহজ জিনিসগুলো ঠিকঠাক করতে পারিনি বলে স্ট্রাগল করেছি।”
ক্যাপ্টেনের কাছে অবশ্য এখন বিপর্যয়ের ময়নাতদন্ত চায় না ইংরেজ ক্রিকেটমহল। সেই বিলাসিতার সময় আপাতত অতীত। এখন টিমের কাছে পারফরম্যান্স চায় তাদের দেশ। এ বারও না পারলে যে আজন্মকালের অপেক্ষায় জুড়তে হবে আরও চারটে বছর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy