ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা তাঁর দেওয়া নতুন শর্তে রাজি থাকলে আইএসএল-তিনেও আটলেটিকো কলকাতার কোচ হতে আপত্তি নেই আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের। এ দিন মাদ্রিদ ফেরার আগে সেই ইঙ্গিতই দিয়ে গেলেন কলকাতার দু’মরসুমের স্প্যানিশ কোচ।
দমদম বিমানবন্দর যাওয়ার আগে দুপুরে বাইপাসের হোটেলে বসে হাবাস বলে গেলেন, ‘‘ফিরতি সেমিফাইনালে পাওয়া গোলের সুযোগগুলো নষ্ট করায় ফাইনালে উঠতে পারলাম না। কী আর করা যাবে! দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে ক্রিসমাসের ছুটি কাটানোর পর পরের মরসুম নিয়ে ভাবব। এখন শুধু ছুটি। ক্লাব মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে আবার হয়তো আসব কলকাতায়। আমার আটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে তো কলকাতা দলের কথা হবেই।’’
হাবাসকে এ দিন রাতে বিমানবন্দরে ছাড়তে গিয়েছিলেন এ মরসুমে তাঁর দলের প্র্যাকটিস মাঠের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী। তাঁকে হাবাস যেমন বলে গিয়েছেন, ‘‘পরের বার প্র্যাকটিসের মাঠটা আরও ভাল করতে হবে। ফ্লাডলাইট লাগানোর ব্যবস্থা করুন’’, তেমনই কলকাতার কর্তাদের বলে গেলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে আবার আসব। তখন কথা হবে।’’ আর হোটেলের জনাকয়েক কর্মীকে হিউম-দ্যুতিদের কোচ দেশে ফেরার আগে বলেছেন, ‘‘পরের বারও এ রকম ভাবে আপনাদের সাহায্য চাই।’’
যে সবের থেকে মোটামুটি সবাই ধরে নিচ্ছেন, এ বার দলে ভারতীয় ফুটবলার নির্বাচন থেকে অন্যান্য বিযয় নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও হাবাসকে এটিকে প্রস্তাব দিলে তিনি ফের রাজি হয়ে যাবেন।
কলকাতা কর্তারা চেয়েছিলেন স্পেনে ফেরার আগে আগামী শনিবার হাবাসের সঙ্গে বসে পরের মরসুমের জন্য তাঁর পছন্দের পাঁচ জন করে বিদেশি আর ভারতীয় ফুটবলারের নাম জেনে নিতে। যাতে সেই ফুটবলারদের ‘ব্লক’ করে রাখা যায়। কিন্তু বুধবার আইএসএল থেকে বিদায়ের যন্ত্রণায় প্রায় সারারাত হোটেলের বারান্দায় বিনিদ্র রাত কাটানো গত বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা কোচ এতটাই বিমর্ষ ছিলেন যে, আর এক দিনও শহরে থাকতে চাননি। দেখতে চাননি রবিবার জিকো বনাম মাতেরাজ্জির টিমের আইএসএল ফাইনালও। এ দিন সকাল থেকেই কলকাতার কর্তাদের তাঁর দেশে ফেরার টিকিটের জন্য অস্থির করে তোলেন হাবাস। হিউম, পস্টিগা-সহ অন্য ফুটবলারদের সঙ্গে তাই তাঁদের কোচের টিকিটেরও ব্যবস্থা করতে নামে ক্লাব। কিন্তু ক্রিসমাসের মরসুম বলে বিমান টিকিট পাওয়া কঠিন। তা সত্ত্বেও শেষমেশ দ্যুতি ছাড়া আটলেটিকোর সব বিদেশি ফুটবলারই ফিরে যান নিজের নিজের দেশে।
এমনিতে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে হারের পর আইএসএল নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না হাবাস। কেবল গলা থেকে ঝরে পড়েছে আফসোস। ‘‘গোল মিস না করলে...। রেফারিংও আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। এত খারাপ রেফারিং দেখিনি। তবে ছেলেদের খেলায় আমি সন্তুষ্ট।’’ পস্টিগাকে বুধবার মরণবাঁচন ম্যাচেও কেন দলেই রাখলেন না— প্রশ্নে হাবাসের বিরক্তি মাখানো জবাব, ‘‘এ বার প্লেয়ারদের চোটআঘাতে আমার টিমের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ক্যাপ্টেন জোসেমি, জাভি লারারা তো টুর্নামেন্টের মাঝপথেই দেশে ফিরে গেল। চেন্নাইয়ের সঙ্গে যে ম্যাচে বোরহা, নাতোদের সবচেয়ে দরকার ছিল, সেই ম্যাচেই পেলাম না। আর মার্কিকে তো পুরো মরসুমই পেলাম না।’’
চোটের জন্য এ বার কলকাতার কর্তাদেরও খরচ হয়েছে গত বারের তুলনায় অনেক বেশি। দু’জন পরিবর্ত বিদেশি ফুটবলার আনতে হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার কোটির মার্কি ফুটবলার পস্টিগা গোটা আইএসএলে খেলেছেন মাত্র চুয়াত্তর মিনিট। তবে গত বারের তুলনায় এ বার আটলেটিকো কলকাতার বি়জ্ঞাপন বাবদ আয় হয়েছে বেশি। যদিও টিকিট বিক্রি থেকে আয় খুব একটা বাড়েনি। এটিকে সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে বুধবারের সেমিফাইনালে। ০-৩ পিছিয়ে থেকেও হাবাস-ম্যাজিক কলকাতাকে ফাইনালে তুলবে আশায় প্রায় সত্তর হাজার দর্শক মাঠে এসেছিলেন। এ বার যুবভারতীতে আইএসএলের আটটা ম্যাচের মধ্যে দর্শক উপস্থিতির নিরিখে যা রেকর্ড। এটিকে-তে হাবাস এখন কার্যত টিমের ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন। এটিকে সচিব সুব্রত তালুকদার বললেন, ‘‘হাবাসের পারফরম্যান্সে আমরা সন্তুষ্ট। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে ওঁর সঙ্গে কথা বলেই পরের বারের দল তৈরি হবে। আলোচনার সময় জানতে চাইব উনি কী চাইছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy