Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
মাঝমাঠ বদলে বিপক্ষকে ধাঁধায় ফেলতে চান সঞ্জয়

বাগানে বাজছে রেকর্ড, চলো ফাইনাল খেলি

সমুদ্র এখানে এসে জুয়ারি নদীতে মিশেছে। মোহনা বলা যায়। বালির পাড়ে নারকেল গাছের সারি। মাঠ থেকে শোনা যায় ঢেউয়ের শব্দ। শান্ত অথচ বর্ণময় গোয়ার অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে এক মনে তাকিয়ে ছিলেন সনি নর্ডি। হাতে রাখা মোবাইলে আঙুল রয়েছে, চোখ কিন্তু দূরে। অবাক করা দৃষ্টি। মুগ্ধতারও। হাইতি স্ট্রাইকারের চোখ গোয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য যেমন টেনেছে, তেমনই ফেড কাপে ডেম্পোর পর সবথেকে চোখ টেনে নেওয়া ফুটবল খেলছে মোহনবাগানই।

মরিয়া বাগান। ভাস্কোয় সনিদের প্র্যাকটিস। শনিবার। ছবি: উত্‌পল সরকার

মরিয়া বাগান। ভাস্কোয় সনিদের প্র্যাকটিস। শনিবার। ছবি: উত্‌পল সরকার

রতন চক্রবর্তী
ভাস্কো শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

সমুদ্র এখানে এসে জুয়ারি নদীতে মিশেছে। মোহনা বলা যায়। বালির পাড়ে নারকেল গাছের সারি। মাঠ থেকে শোনা যায় ঢেউয়ের শব্দ। শান্ত অথচ বর্ণময় গোয়ার অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে এক মনে তাকিয়ে ছিলেন সনি নর্ডি। হাতে রাখা মোবাইলে আঙুল রয়েছে, চোখ কিন্তু দূরে। অবাক করা দৃষ্টি। মুগ্ধতারও।

হাইতি স্ট্রাইকারের চোখ গোয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য যেমন টেনেছে, তেমনই ফেড কাপে ডেম্পোর পর সবথেকে চোখ টেনে নেওয়া ফুটবল খেলছে মোহনবাগানই। কিন্তু ভাল খেলেও এখনও জয়ের মুখ দেখেনি সঞ্জয় সেনের টিম। এবং তাতে এতটাই বিরক্ত এবং হতাশ বাগান কোচ যে শনিবার চিকালিন মাঠে অনুশীলনের পর বলে দিলেন, “ভাল খেলার আর দরকার নেই। খারাপ খেলেও এক গোলে জিততে পারলেই সন্তুষ্ট আমি। ভাল খেলে কোনও লাভ হয়নি। এখন খারাপ খেলেও যদি দল জেতে সমস্যা কোথায়? কালই তো আমাদের ফাইনাল।”

বাগান টিম হোটেলের প্রতিটি ঘরে সেই বিখ্যাত সরকারি বিজ্ঞাপনটার আদলে যেন একটা স্লোগান অবিরাম বেজে চলেছে, “চলো এ বার তা হলে ফাইনালই খেলি।” সনির কাছে প্রশ্ন করুন, দেখবেন বলছেন, “গোল করে জিততে হবে, কাল ফাইনাল ম্যাচ না ধরে নামলে ছিটকে যাব।” একই কথা বলছেন বেলো রাজ্জাকও। ‘‘এটা না জিতলে আর তো আমরা টুর্নামেন্টেই নেই। ফাইনাল ছাড়া কী ভাবব?’’ বিদেশিদের মনোভাব বুঝে নিয়ে টিম বাসে উঠতে যাওয়া লালকমল ভৌমিক বা শিল্টন পালকে ধরা হল। দু’জনেই দেখলাম বলছেন, “কাল ফাইনাল ম্যাচ। জেতা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। গোল করতে হবে, জিততে হবে।”

সালগাওকরের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের তিন নম্বর ম্যাচটা বাগানের কাছে কার্যত ফাইনালের মতোই। গ্রুপ লিগের পরিস্থিতি যা তাতে ডেরেক পেরিরার সঙ্গে বাগান কোচের এই ম্যাচ টাগ অব ওয়ার সেমিফাইনালে যাওয়ার প্রশ্নে। বাগান জিতলে পাঁচ পয়েন্টে পৌঁছে যাবে, গোয়ার টিম ছ’য়ে। বাগান জিতলে শেষ ম্যাচ খেলবে শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে। যাঁরা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে ইতিমধ্যেই। আর সালগাওকরের শেষ ম্যাচ করিম বেঞ্চারিফার পুণের সঙ্গে। যে পুণে শেষ চারে যাওয়ার ব্যাপারে সামান্য এগিয়ে। বাগান ধরে নিয়েছে, আজ ডুহু-ডারেল ডাফিদের বিরুদ্ধে জিতলেই আর তাদের কেউ আটকাতে পারবে না।

টিম চাপে পড়লে প্রতিটি ম্যাচকে ‘ফাইনাল’ ধরে মোটিভেশন তৈরি করার প্রথা সেই পিকে-অমলদের আমল থেকেই চলে আসছে। সুভাষ-সুব্রতরাও এই টোটকা চালাতেন পরম্পরা মেনে। এখন চালাচ্ছেন আর্মান্দো-সঞ্জয়রাও। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হয়? দেশের সব ট্রফি জেতা কোচ মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য ফোনে বললেন, “অবশ্যই এটা বলে মোটিভেশন তৈরি করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কোচ ব্যাপারটা ফুটবলারদের মনের মধ্যে কী ভাবে ঢোকাচ্ছেন সেটা দেখতে হবে। বলার সময় আবেগ থাকা চাই। গোয়াতেই ’৯৯-২০০০-এ আই লিগের শেষ ম্যাচে ‘ফাইনাল খেলতে নামছ’ বলে তাতিয়েছিলাম ফুটবলারদের। চার্চিলের বিরুদ্ধে সেই বার ম্যাচটা না জিতলে মোহনবাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় না।”

সনি-বোয়া-কাতসুমিদের কী ভাবে মানসিক ভাবে তৈরি করছেন সঞ্জয় এবং সেটা কতটা কাজে লাগল, তা রবিবাসরীয় সন্ধ্যার আগে বোঝা যাবে না। কিন্তু টিমের অন্দরের খবর, সনির সঙ্গে এ দিন আলাদা করে কথা বলেছেন বাগান কোচ। সনি কোচকে শুধু অনুরোধ করেছেন, “আমাকে যেখানেই খেলান আমি যেন একটু ফাঁকা জায়গা পাই। মাঠটা ছোট, আমাকে সহজেই মার্কিং করে ফেলছে বিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। সেটা একটু দেখুন। আমি গোল করে জিততে চাই।” আলোচনার পর ঠিক হয়েছে দলের হায়েস্ট পেইড ফুটবলারকে ফ্রি খেলতে দেওয়া হবে। উইং থেকে সেক্ষেত্রে তিনি ভিতরেও চলে আসতে পারবেন মনে করলে। কাতসুমিকে উইং থেকে সরিয়ে ভিতরে আনা হচ্ছে। ছটফটে পঙ্কজ মৌলা চলে যাবেন কাতসুমির জায়গায়। এমনিতে কার্ড সমস্যায় আটকে যাওয়া শৌভিক ঘোষের জায়গায় খেলবেন কিংশুক দেবনাথ। কিন্তু বাগানের চিন্তা বাড়িয়েছে ডেনসন দেবদাসের চোট। রাত পর্যন্ত তিনি অনিশ্চিত। শনিবারের অনুশীলনে ডেনসনের পরিবর্ত হিসাবে শেহনাজকে বেছে অনুশীলন করিয়েছেন কোচ। সালগাওকরকে ধাঁধায় ফেলতে মাঝমাঠে নতুন ফর্মেশনই অস্ত্র বাগান কোচের।

কিন্তু ডেরেক পেরিরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান কোচ। দেশের অন্যতম সফলও। তাঁকে এত সহজে কি বোকা বানানো যাবে? বাগান কোচ হাসলেন। বলেন, “ডেরেককে আমি সম্মান করি। ওর সাফল্য আছে। কিন্তু আমার হাতে এমন কিছু ভাল ছেলে আছে যাঁরা ঠিকমতো খেললে অনেকেই বোকা বনে যাবে। লাকটা একটু দরকার।” সালগাওকর টিমটাও যথেষ্ট ব্যালান্সড। গোলে নতুন যোগ দেওয়া কিপার সুব্রত পাল থেকে আইভরি কোস্টের ডুহু পিয়ের,স্কটিশ ডারেল ডাফি থেকে লোকাস ল্যামেরে যথেষ্ট ভাল টিম। “ওদের সনি-বোয়াদের আমি দেখেছি। ওদের কী ভাবে আটকাব, সেটা তৈরি করে ফেলেছি আমরা, আমাদের রক্ষণ মজবুত থাকবে,” বলছিলেন শান্ত স্বভাবের ডেরেক। রক্ষণ শক্তিশালী বলে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলবে গোয়ার সবথেকে সমর্থকসমৃদ্ধ টিম। সেটা সরাসরি বলে দেন সালগাওকর কোচ।

ডেরেক এবং সঞ্জয় প্রায় সমসাময়িক কোচ। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বও রয়েছে। কিন্তু সেই সব পিছনে ফেলে সালগাওকর ও বাগান কোচের কাছে একে অন্যকে শেষ করে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চলছে। ফলে ম্যাচটা ট্যাকটিক্সের অঙ্কে উপভোগ্য হবে ধরে নেওয়া যায়। দু’জনের কাছেই যে ম্যাচটা বাঁচার, বেঁচে থাকার। করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে।

রবিবারে ফেড কাপ
মোহনবাগান : সালগাওকর
(তিলক ময়দান, ৪-০০)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE