Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
অনিচ্ছাকৃত হত্যার দায়ে শাস্তি হতে পারে এখনও

বান্ধবীকে খুনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পিস্টোরিয়াসকে

বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্পকে হত্যার অভিযোগ থেকে অস্কার পিস্টোরিয়াসকে আজ মুক্তি দিল দক্ষিণ আফ্রিকার আদালত। শুক্রবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যাওয়া মামলার রায়দান অবশ্য এখনও অসম্পূর্ণ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্প্রিন্টার হয়ে ওঠা ‘ব্লেড রানার’ অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগে এখনও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

এ দিন আদালতে: বৃহস্পতিবার আদালতে পিস্টোরিয়াসের কান্না।

এ দিন আদালতে: বৃহস্পতিবার আদালতে পিস্টোরিয়াসের কান্না।

প্রিটোরিয়া
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:২৬
Share: Save:

বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্পকে হত্যার অভিযোগ থেকে অস্কার পিস্টোরিয়াসকে আজ মুক্তি দিল দক্ষিণ আফ্রিকার আদালত।

শুক্রবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যাওয়া মামলার রায়দান অবশ্য এখনও অসম্পূর্ণ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্প্রিন্টার হয়ে ওঠা ‘ব্লেড রানার’ অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগে এখনও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

ছ’মাস ধরে চলা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখার পর বিচারপতি থোকোজিলে মাসিপা এ দিন নিজের রায়ে পিস্টোরিয়াসকে খুনি মানতে রাজি হননি। তবে মেনে নেন, স্টিনক্যাম্পের মৃত্যুর পিছনে অ্যাথলিটের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের বড় ভূমিকা ছিল। বিচারপতি রায়ে বলেন, “পূর্বপরিকল্পিত হত্যা দূরের কথা, অভিযুক্তের কাউকে মারার কোনও ইচ্ছে ছিল বলেই সন্দেহাতীত প্রমাণ নেই। পিস্টোরিয়াসের প্রতিক্রিয়া একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন। তবে গুলি চালানোর সময় উনি স্পষ্টই ভাবতে পারেননি যে তাতে দরজার পিছনে থাকা ব্যক্তির মৃত্যু ঘটবে।” কাঠগড়ায় মাথা হেঁট করে বসে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে রায় শোনেন পিস্টোরিয়াস।

চাঞ্চল্যকর পিস্টোরিয়াস মামলার রায় নিয়ে উত্‌সাহের শেষ ছিল না। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার, ইন্টারনেটে টাটকা আপডেট। খুনের অভিযোগে দোষী প্রমাণ হয়ে দেশের আইনে আজীবন কারাবাস না নির্দোষ হিসাবে মুক্তিপিস্টোরিয়াসের ভাগ্য জানার তাগিদে আলোড়ন পড়ে যায়। এমনই নাটকীয় পরিবেশে রায় দান শুরু হয়।

সুখের সে দিন: অ্যালবাম-বন্দি রিভা স্টিনক্যাম্পের স্মৃতি। ছবি: এপি।

বিচারপতি বলেন, ঘটনার দিন সটান গুলি না চালিয়ে পিস্টোরিয়াস নিরাপত্তারক্ষীদের খবর দিতে পারতেন, বারান্দায় বেরিয়ে সাহায্যের জন্য চিত্‌কার করতে পারতেন। গুলি চালানোটা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ হয়েছিল। বিচারপতির এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অনিচ্ছাকৃত হত্যা ঘটনার দায়ে পিস্টোরিয়াসের শাস্তি হতে পারে বলে মনে করছে একটি মহল। মাপিসা শুক্রবার রায় দান সম্পূর্ণ করবেন। পিস্টোরিয়াসের ভাগ্যে কী রয়েছে, সেটা জানার জন্য ততক্ষণ অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। তবে খুনের অভিযোগে মুক্তি পাওয়ায় কারাগারের অন্ধকূপে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে না ‘ব্লেড রানার’-কে।

২০১৩-র ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে পিস্টোরিয়াসের চালানো গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল বান্ধবী, মডেল রিভা স্টিনক্যাম্পের। স্প্রিন্টার বরাবরই দাবি করেছেন যে, সে দিন রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে বাথরুমে আওয়াজ শুনে তিনি ভেবেছিলেন বাড়িতে দুষ্কৃতী ঢুকেছে। আতঙ্কে সটান চারটি গুলি চালিয়ে দেন দরজা লক্ষ্য করে। জানতেন না বন্ধ দরজার উল্টোদিকে রিভা আছেন।

এ দিকে, গুলি চলার আগে দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত কথাকাটাকাটির আওয়াজ শুনেছিলেন বলে প্রতিবেশীরা আদালতে যে সাক্ষ্য দেন, বিচারপতি তা খারিজ করে বলেছেন, “কেউ আসল ঘটনা জানেন না। নিজেরা যা জানেন, লোকের মুখে যা শুনেছেন এবং মিডিয়ায় যা পড়েছেন সব গুলিয়ে ফেলেছেন।” পিস্টোরিয়াসও নিজের বয়ানে অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারপতি।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইনে অনিচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি অনেক লঘু। শুক্রবার যদি অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ প্রমাণও হয়, পিস্টোরিয়াস জেলে যান না মুক্তি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে বাড়ি ফেরেন, সেটাই দেখার।

তবে যা-ই হোক না কেন, অনেকেই মনে করছেন ‘ব্লেড রানার’ ইতিমধ্যেই শাস্তি পেয়ে গিয়েছেন। মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে পিস্টোরিয়াসের সঙ্গে আগাগোড়া থাকা এক সাংবাদিক যেমন বলেছেন, “অস্কার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। রিভাকে ও আজও ভালবাসে। কোর্ট শাস্তি দিক বা না দিক, নিজেকে ও সারাজীবন ক্ষমা করতে পারবে না।”

জন্মের সময় ফিবুলা অস্থি তৈরি না হওয়ায় ১১ মাস বয়সে হাঁটুর তলা থেকে বাদ দিতে হয়েছিল দুই পা। কিন্তু অদম্য ছিলেন ‘ব্লেড রানার’। প্যারা অ্যাথলিট হিসাবে বিশ্বের সেরা হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ আন্দোলনের পর অর্জন করেন লন্ডন অলিম্পিকের মূলপর্বে স্বাভাবিক স্প্রিন্টারদের সঙ্গে লড়ার অধিকার। এবং চারশো মিটারে সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি মুছে দিয়েছিলেন সম্ভব-অসম্ভবের সীমারেখা!

অথচ লন্ডন গেমসের ছ’মাসের মধ্যেই প্রেম-দিবসে তাঁরই হাতে প্রেমিকা রিভার মৃত্যু পুরোপুরি বদলে দিয়ে গেল তাঁর দুনিয়া। এতটাই যে, ইতিহাস গড়া অ্যাথলিট সম্ভবত আর কখনও সেই ধাক্কা সামলে ট্র্যাকে ফিরতে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

oscar pistorius not guilty of murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE