Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বাংলার জীবন-মৃত্যুর মাঝে ‘পাঁচিল’ এখন শুধু রাওয়াত

আশপাশের সব স্ট্রিটলাইট, এমনকী হাইকোর্টের দিকের স্কোরবোর্ডের নীচে হ্যালোজেনের আলোটা জ্বলে উঠলেও ইডেনে তখনও খেলা চলছিল। না, কোনও পাড়ার টুর্নামেন্ট নয়। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ। আম্পায়ারদের হাতে লাইটমিটার থাকলেও এই আলো-আঁধারির ক্রিকেট চালু থাকল বেশ খানিকক্ষণ। শেষ বিকেলে ইডেনের এই চেহারা যেন কিছুক্ষণের জন্য বঙ্গ ক্রিকেটেরই মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠল।

বিধ্বস্ত। ছবি শঙ্কর নাগ দাস

বিধ্বস্ত। ছবি শঙ্কর নাগ দাস

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

আশপাশের সব স্ট্রিটলাইট, এমনকী হাইকোর্টের দিকের স্কোরবোর্ডের নীচে হ্যালোজেনের আলোটা জ্বলে উঠলেও ইডেনে তখনও খেলা চলছিল।

না, কোনও পাড়ার টুর্নামেন্ট নয়। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ। আম্পায়ারদের হাতে লাইটমিটার থাকলেও এই আলো-আঁধারির ক্রিকেট চালু থাকল বেশ খানিকক্ষণ। শেষ বিকেলে ইডেনের এই চেহারা যেন কিছুক্ষণের জন্য বঙ্গ ক্রিকেটেরই মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠল।

রাত পোহালে বঙ্গ ক্রিকেটেও নেমে আসবে না তো এমনই আঁধার? শুক্রবার সারা দিন ধরে বাংলার বোলারদের ছ’টার বেশি উইকেট ফেলতে না পারা দেখে এ ছাড়া আর কী-ই বা মনে হতে পারে?

আগের দিন ২৬৮-র কষ্টার্জিত পুঁজি নিয়ে নেমে বাংলার বোলাররা সারা দিনে ৭০ ওভার পেয়েও বিপক্ষকে অল আউট করতে পারলেন না! বরং প্রথম ইনিংসে এগিয়ে তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত করার দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে রেলওয়েজ। ৫০ রান দূরে তারা। বাংলার চাই চারটে উইকেট। শুক্রবার সকালে আকাশের মুখ ভার থাকায় যেমন পৌনে দু’ঘন্টা নষ্ট হল। শনিবার সকালে তা না হলে প্রথম সেশনেই হয়তো বোঝা যাবে, চালকের আসনে কারা বসতে চলেছে।

মাঠে যাঁরা খেলছেন, তাঁদের বক্তব্য, উইকেট ‘লো অ্যান্ড স্লো’। কিন্তু এগুলো অনেকটা অজুহাতের মতো শোনাচ্ছে। যে উইকেটে সৌরাশিস লাহিড়ী চার উইকেট পেলেন, সেই উইকেটে অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, ইরেশ সাক্সেনাদের ভাঁড়ার শূন্য! ঘুরেফিরে সেই ইডেনের কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের কথাতেই আসতে হচ্ছে, “উইকেট বল ঘোরায় না, উইকেটে বল ঘোরাতে জানতে হয়!” কয়েক দিন আগে বাংলার কোচ অশোক মলহোত্রর বলা কথাগুলোও এখন ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে যেন, “টার্নিং উইকেটে যে খেলব, আমার দলে ভাল স্পিনার কোথায়?” কোচ যে তেমন ভুল বলেননি, তাও বোঝা গেল এ দিন।

হাফ সেঞ্চুরি করা অলরাউন্ডার অর্ণব নন্দীর স্টাম্প ছিটকে দিয়ে যে উগ্র উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেল সৌরাশিস লাহিড়ীকে, তার মধ্যে বহুক্ষণ শিকারহীন থাকার যন্ত্রণাটাও ছিল প্রকট। সৌরাশিস অবশ্য বললেন, “প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওটা আমার ২৫০তম উইকেট বলেই অতটা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলাম।” পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, “ভাল টার্ন পেতে গেলে উইকেটে যে বাউন্স দরকার, এখানে তা কই? উইকেট পেতে অনেক খাটতে হচ্ছে এখানে।” অথচ ম্যাচের আগে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে কিউরেটরের কাছে ‘র্যাঙ্ক টার্নার’ চাওয়া হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট দাঁড়িয়ে থেকে পিচে কোদাল চালিয়ে তা তৈরির ব্যবস্থাও করেছিলেন। এখন তো দেখা যাচ্ছে, ‘কোদাল হল ভোঁতা...’।

এমন গতি, বাউন্সহীন উইকেটে পড়ে থেকে ধীরে রান তোলা ছাড়া যে আর উপায় নেই, তা বুঝিয়ে দিলেন রেলে যোগ দেওয়া দুই ব্রাত্য বাঙালি অর্ণব (৫৩) ও অরিন্দম ঘোষ (৪৯) এবং ক্যাপ্টেন মহেশ রাওয়াত (অপরাজিত ৫৬)। আগের দিন যেমন বুঝিয়েছিলেন মনোজ ও শ্রীবৎস। তফাতটা হল, তাঁরা দু’জনেই ইনিংসের শুরুতে প্রাণ ফিরে পেয়ে বড় পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। এঁরা কিন্তু সারা দিনে কোনও সুযোগ দেননি। বরং অর্ণব, অরিন্দমদের স্টেপ আউট করে ওভার বাউন্ডারিও মারতে দেখা গেল এ দিন। রেলওয়েজ অধিনায়ক রাওয়াতই এখন বাংলা ও ইনিংস লিডের মধ্যে একমাত্র বাধা। শনিবার সকালে তাঁকে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে বাকি তিনটি উইকেট নেওয়াই এখন বাংলা শিবিরের প্রথম লক্ষ্য।

তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত করে নিয়ে পরের ধাপটা হওয়া উচিত দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত রান তুলে বিপক্ষকে দান ছেড়ে দেওয়া। কত হওয়া উচিত রেলের দ্বিতীয় ইনিংসের টার্গেট? বাংলার এক সিনিয়র ক্রিকেটারের বক্তব্য, “আড়াইশোর টার্গেটই যথেষ্ট। এই উইকেটে শেষ ইনিংসে এই রান তুলে জেতা কঠিন হবে।” কিন্তু সরাসরি জিততে হলে তো দ্বিতীয় ইনিংসে দশটা উইকেটও তুলতে হবে বাংলাকে। বোলারদের যা দশা, তাতে তা সম্ভব না হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ক্রিকেটে আঁধার নেমে আসার পরের দিনই বাংলার পালা নয় তো? উত্তর পাওয়া যেতে পারে শনিবারের বারবেলায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলা ২৬৮
রেলওয়েজ ২১৯-৬
(অর্ণব ৫৩, মহেশ ৫৬ নআ, অরিন্দম ৪৯, সৌরাশিস ৪-৭২)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajib ghosh sourasish lahiri ranji
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE