Advertisement
E-Paper

মাদ্রিদবাসীর রাগটা বেশি পিকে-র‌্যামোসের উপর

ঠিক এক মাস আগেই মাদ্রিদ শহরে দেখেছিলাম উৎসবের আমেজ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠেছিল মাদ্রিদের দুটো ক্লাব। কিন্তু মোটামুটি তিরিশ দিনের মধ্যে ছবি এত পাল্টাতে পারে, ভাবতে পারিনি। শুক্রবার যে শহর ছিল প্রত্যাশার, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সেটা যেন পরিণত হল শ্মশানে। বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের ২৪ ঘণ্টা পর ঘুরে দেখে একটা কথাই মনে হচ্ছে। যেন সুনামির ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে শহরটা।

কাঞ্চন সরকার

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৪ ০৪:১০
বিস্ময় গোলের পরিণতি

বিস্ময় গোলের পরিণতি

ঠিক এক মাস আগেই মাদ্রিদ শহরে দেখেছিলাম উৎসবের আমেজ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠেছিল মাদ্রিদের দুটো ক্লাব। কিন্তু মোটামুটি তিরিশ দিনের মধ্যে ছবি এত পাল্টাতে পারে, ভাবতে পারিনি।

শুক্রবার যে শহর ছিল প্রত্যাশার, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সেটা যেন পরিণত হল শ্মশানে। বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের ২৪ ঘণ্টা পর ঘুরে দেখে একটা কথাই মনে হচ্ছে। যেন সুনামির ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে শহরটা।

শনিবার স্পেনে ছুটির দিন। তাই এমনিতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ফাঁকা থাকে। তার উপরে আবার হারের ‘হ্যাংওভার’। এ দিন বেরিয়ে দেখলাম রাস্তায় লোক প্রায় নেই। উইক এন্ডের মজা নিতে কেউ বেরোয়নি। দোকানে দোকানে স্পেনের স্কার্ফ ঝোলানো আছে, কোনও ক্রেতা নেই। পুরো শহর আহত হয়ে আছে।

চব্বিশ ঘণ্টা আগে ছবিটা ছিল অন্য রকম। মাদ্রিদ জুড়ে ছিল উন্মাদনা। বিশ্বকাপের সময় এমনিতেই শহর জুড়ে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানোর রীতি আছে। যাদের ব্রাজিল যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, তারা দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছিল জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখে। মাদ্রিদ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয় স্ক্রিন। যেমন বের্নাবাওয়ের বাইরে, রয়্যাল প্লাজায় ও প্লাসা ভেনাভেন্তেতে। ৩৬-৩৭ ডিগ্রি গরমে এমনিতেই নাজেহাল গোটা শহর। কিন্তু তাপপ্রবাহকে হার মানিয়েও সবাই জায়ান্ট স্ক্রিনে নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দেখতে যায়। কেউ কেউ প্রিয় ফুটবলারের জার্সি পরে। দেখছিলাম, প্রচুর মানুষ মুখে জাতীয় পতাকার রং মেখে দলের জন্য গলা ফাটাতে যাচ্ছে। নব্বই মিনিট শেষে শহর জুড়ে শুধু কান্না আর আর্তনাদ। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না, পাঁচটা গোল হজম করেছে সেই দল, যারা চার বছর আগে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।


কাসিয়াসের দেশে শোকগাথা

এখানে রাত ন’টা নাগাদ ম্যাচটা শুরু হয়েছিল। ফিরতে ফিরতে দেখছিলাম, লাভাপিয়েজের সামনে দাঁড়ানো মানুষগুলো চোখের জল সামলাতে পারছেন না। এই জঘন্য হার যেমন প্রত্যাশিত ছিল না, তেমন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি দলের সেরা তারকারা ছোট বাচ্চাদের মতো ভুল করবে। কাসিয়াসের চেয়েও আমাদের এখানকার মানুষ বেশি দায়ী করছেন জেরার পিকে ও সের্জিও র‌্যামোস জুটিকে। বিশ্বের যে কোনও সেরা ফরোয়ার্ডকে শান্ত রাখার ক্ষমতা আছে এই জুটির। কিন্তু ওদের নিয়ে ছেলেখেলা করে গেল রবেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, পিকে-র‌্যামোসের উপর রাগটা ওদের কিছুতেই যাচ্ছে না। কাসিয়াসের মতো গোলকিপার কী করে এত বাজে গোল হজম করতে পারেন, সেটাও কেউ বুঝতে পারছেন না। তবে কাসিয়াসকে নিয়ে যতটা না বেশি রাগ, তার চেয়েও বেশি করে দুঃখিত মাদ্রিদবাসীরা।

স্পেনে এখন অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। তার উপর বিশ্বকাপে স্প্যানিশ ফুটবলারদের বাড়তি বোনাস দেওয়া নিয়ে কিছু দিন ধরেই জোর ঝামেলা চলছে। সাধারণ মানুষ কিন্তু মেনে নিতে পারছে না যে তাদের দেওয়া আয়কর থেকে প্লেয়ারদের বোনাস দেওয়া হচ্ছে। এই রাগটা ছিলই। ম্যাচের পর সেটা আরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, অতিরিক্ত আত্মতুষ্টির মাশুল দিল দেল বস্কির দল। তবে এখানে বিক্ষোভ কিছু হয়নি। লোকজন ভাঙচুরও চালায়নি।

বিশ্বকাপের জন্য শহর জুড়ে ফুটবলারদের কাটআউট লাগানো হয়েছে। প্রতিটা বাড়ির বাইরে জার্সি টাঙানো রয়েছে। আগেও বলেছি, মাদ্রিদ শহরে বিয়ার ও ফুটবলের একটা সম্পর্ক আছে। মানে সবাই একসঙ্গে বসে, বিয়ার গ্লাস হাতে নিয়ে খেলা দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু আজ সেই বারগুলোও খালি। বাড়ির থেকে যাঁরা বেরোচ্ছেন, তাঁদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনও বিপর্যয়ের পরে মনকে শক্ত করার চেষ্টা করছেন। স্পেনে কোনও ম্যাচ হারের পরে কেউ পাথর ছোড়ে না। কেউ গালিগালাজ করে না। সবাই একজোট হয়ে অপেক্ষা করে পরের ম্যাচের জন্য। এ বারও সেই ছবিটা বদলাচ্ছে না। নেদারল্যান্ডস হারের ভূত তাড়ানোর জন্য তাই অপেক্ষা চলছে চিলি ম্যাচের। কিন্তু এটাও ঠিক, যাঁরা ভেবেছিলেন স্পেন আবার বিধ্বংসী ফর্মে থাকবে তাঁদের পা কিছুটা হলেও মাটিতে নেমেছে।

ওরা অসাধারণ খেলল। আমরা পারলাম না। আমি একেবারেই ভাল খেলিনি। তবে যা হয়ে গিয়েছে সেটা অতীত। আমাদের এ বার চিলি ম্যাচটা এমন ভাবে খেলতে হবে যেন ওটাই ফাইনাল।
—ইকের কাসিয়াস

আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন হার। তবে কখনও কখনও এমন ধাক্কা শাপে বর হয়। এটাকে খুব বেশি নাটকীয় করে তোলার দরকার নেই। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা হারলে সমালোচনা হবেই। সেটা হজম করার ক্ষমতা আমাদের আছে।
—জাভি হার্নান্দেজ

ম্যাচটা থেকে যা প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হল না। আমরা খারাপ খেলেছি। তবে পরিস্থিতি বদলে যাবেএকটা হার দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় না।
—ইয়র্দি আলবা

এমন নয় যে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ আমরা দল হিসাবে ভাল খেলিনি। তবে কঠিন সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোই আমাদের বিশেষত্ব। আগের মতোই মাটিতে পা রেখে চলতে হবে।
​—সের্জিও র‌্যামোস

অসুস্থ লাগছে! কিন্তু এটা দোষারোপের সময় নয়। এক জন প্লেয়ারের জন্য গোটা দল হারে না। টিম হিসাবে আমাদের দুর্বলতাই আসল কারণ। কেউ একা দোষী নয়। বিশেষ করে ইকেরকে তো একেবারেই নয়।
—ভিসেন্তে দেল বস্কি

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

fifaworldcup fifa world cup 2014 kanchan sarkar madrid angy on ramos and pikey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy