Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘মার্কি’ নিয়মে ডিগবাজি, মাথায় হাত দুই প্রধানের

সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের নিয়মের ডিগবাজি। আর তাতেই মাথায় হাত কলকাতার দুই প্রধানের! মার্কি প্লেয়ার নিয়ে নিয়ম। যা এত দিন ছিল এক রকম। ৬ অগস্ট থেকে হয়ে যেতে পারে আর এক রকম। যে নিয়ম এত দিন বলত, মার্কি প্লেয়ার বাধ্যতামূলক।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের নিয়মের ডিগবাজি। আর তাতেই মাথায় হাত কলকাতার দুই প্রধানের!

মার্কি প্লেয়ার নিয়ে নিয়ম। যা এত দিন ছিল এক রকম। ৬ অগস্ট থেকে হয়ে যেতে পারে আর এক রকম। যে নিয়ম এত দিন বলত, মার্কি প্লেয়ার বাধ্যতামূলক। নইলে অন্য বিদেশি সই করানো যাবে না। যা ৬ অগস্টের পর সম্ভবত বলবে, আই লিগ পেছনোয় মার্কি প্লেয়ার নেওয়া যেতে পারে জানুয়ারির সেকেন্ড উইন্ডো থেকে। ফেডারেশন কাপে না নিলেও চলবে।

ময়দান হতভম্ব। সেখানে ক্ষোভের চোরাস্রোত। কারণ কলকাতার দুই প্রধানই যে প্রচুর অর্থ খরচ করে মার্কি প্লেয়ার নিয়ে বসে আছে। এত দিন ফেডারেশনের নিয়ম যা বলছিল, সেটা মেনে।

মোহনবাগান বুঝে উঠতে পারছে না, একটা নিয়ম আচমকা কী ভাবে পাল্টে যেতে পারে। সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু বললেন, “ফেডারেশন যা সিদ্ধান্ত নেবে তা নিশ্চয়ই ফুটবলের স্বার্থে। তবে এক বার নিয়ম চালু হওয়ার পর ফের তা বদল হলে সেই সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে দুঃখজনক।”

ইস্টবেঙ্গলের আক্ষেপ, টানাটানির বাজারে এমন সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানাতে পারত ফেডারেশন। ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলছেন, “গোটা দেশে আর্থিক টানাটানির সময়ে নিয়ম বদল হলে খারাপ তো লাগবেই। শুরুতেই সেকেন্ড উইন্ডোতে মার্কি ফুটবলার নেওয়ার নির্দেশ জানানো হলে আমাদের কিছু টাকা বাঁচত। সময় পেতাম ফুটবলার বাছার ব্যাপারেও।”

ফেডারেশন সূত্রে খবর, আই লিগ খেলা বেশ কিছু ক্লাবের আবেদনের ভিত্তিতে ‘মার্কি’ ফুটবলার নথিভুক্ত করার সময় পিছোতে চলেছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। যার ফলে এ বারের ফেডারেশন কাপে ‘মার্কি’ ফুটবলার ছাড়াই নামতে পারবে আই লিগের কিছু ক্লাব। ফেডারেশন সচিব কুশল দাস এ দিন বললেন, “আই লিগ পিছিয়ে যাওয়ায় পুণে এফসি-সহ লিগের বেশ কিছু ক্লাব আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে দ্বিতীয় উইন্ডোয় ‘মার্কি’ প্লেয়ার সই করানোর জন্য। আবেদনে যুক্তি থাকায় বিষয়টা আমরা এগজিকিউটিভ কমিটিতে পাঠিয়ে দিয়েছি।” ৬ অগস্ট বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ফেডারেশনের এগজিকিউটিভ কমিটির। ওই বৈঠকে ক্লাবগুলোর এই আবেদনে সিলমোহর পড়াটা নাকি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

আর এতেই ঘুম ছুটেছে কলকাতা ময়দানের। এর আগে ফেডারেশন ‘মার্কি’ ফুটবলার নথিবদ্ধকরণ সম্পর্কে জানিয়েছিল, বিশ্বকাপ বা কন্টিনেন্টাল কাপ (এশিয়ান কাপ, কোপা আমেরিকা, আফ্রিকান নেশনস কাপ বা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ) বা প্রথম সারির কোনও ক্লাব বা লিগে খেলা ফুটবলারই এই তালিকাভুক্ত হবেন। ফেডারেশন আরও জানায় যে, ২০১৪-১৫ মরসুমে ‘মার্কি’ ফুটবলার সই না করালে অন্য বিদেশি সই করানো যাবে না। এ বার ক্লাবগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে সেই নির্দেশও বদলাবে বলে ধারণা ফুটবলমহলের।

ফেডারেশন সচিব এ দিন বলেন, “আবেদনকারী ক্লাবগুলোর মধ্যে পুণে এফসি ছাড়াও রয়েছে গোয়ার ক্লাব ও গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-ও।” পুণে এফসি কর্তা চিরাগ তান্নাও ফোনে সেই আবেদন পাঠানোর কথা স্বীকার করে বললেন, “আই লিগ যেহেতু পিছোচ্ছে তাই ফেডারেশনের কাছে আবেদন করেছি মার্কি ফুটবলার যাতে জানুয়ারির সেকেন্ড উইন্ডোতে নেওয়া যায় তার জন্য। আই লিগের আগে সেক্ষেত্রে ফেড কাপে তিন বিদেশিকে নিয়ে যেন খেলতে পারি সে আবেদনও করেছি।”

আর এখানেই বিতর্ক।

কলকাতার দলগুলোর মধ্যে মোহনবাগান ইতিমধ্যেই মার্কি প্লেয়ার-সহ চার বিদেশিকে সই করিয়ে ফেলেছে। তাঁদের মার্কি ফুটবলার ক্যামেরুনের পিয়ের বোয়া। অন্য দলগুলো যখন মার্কি ফুটবলার জানুয়ারির দ্বিতীয় উইন্ডোতে নেওয়ার জন্য ফেডারেশনের কাছে আবেদন-নিবেদনে ব্যস্ত, তখন বাগানের মার্কি ফুটবলারের ভিসা হয়ে গিয়েছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে তাঁর শহরে চলে আসার কথা। ইস্টবেঙ্গলও নিয়ে ফেলেছে তাদের মার্কি ফুটবলার নিউজিল্যান্ডের লিও বার্তোস-কে। এই পরিস্থিতিতে মার্কি ফুটবলার নিয়ে পুণে, বেঙ্গালুরুর ক্লাবগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে ফেডারেশন সেই নিয়ম বদলাতে চলায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ কলকাতার দুই প্রধান। প্রশ্নও উঠছে। বলা হচ্ছে, হঠাৎ আইএসএল-এর দিন পিছিয়ে দেওয়া হল কেন? এর ফলেই আই লিগ পিছিয়ে গিয়েছে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে। তাদের প্রশ্ন, যখন ভারতীয় ফুটবলে এআইএফএফ কর্তারা পেশাদারিত্ব আনার কথা বলছেন তখন ক্রীড়াসূচি নিয়ে টালবাহানা এ কোন পেশাদারিত্বের নমুনা? কেউ কেউ আরও বললেন, কর্পোরেটাইজেশন আনার কথা বলা হচ্ছে ফুটবলে। ঠিক তখনই পুণে, বেঙ্গালুরুর মতো কর্পোরেট সংস্থার ক্লাবগুলো আর্থিক সমস্যার বাহানা তুলে মার্কি ফুটবলার আনার সময় পিছোতে চাইছে। যা মানতে ফেডারেশন মেনে নেওয়ার দিকে। তা হলে ফুটবলে কর্পোরেটাইজেশনের কী হল? শোনা যাচ্ছে, বিগত বছরের আই লিগ এবং ফেড চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার-মূল্যও দেওয়া বাকি। বাকি ম্যাচ আয়োজন করার টাকাও। প্রশ্ন উঠছে ফেডারেশনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। সচিব কুশল দাস যদিও বলছেন, “এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠক আগে হোক। তার পর এ ব্যাপারে বিশদে মন্তব্য করা যাবে,” কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

marky rule debanjan bandyopadhyay ifa football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE